মাতৃতন্ত্র (ইংরেজি: Matriarchy) একটি সামাজিক ব্যবস্থা যা নারীদের; (সর্বাধিক উল্লেখযোগ্যভাবে স্তন্যপায়ীদের); রাজনৈতিক নেতৃত্ব, নৈতিক কর্তৃত্ব, সামাজিক বিশেষাধিকার এবং নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে পুরুষদেরকে সম্পত্তি থেকে বর্জন — অন্তত একটি বড় অংশে; প্রাথমিক ক্ষমতার অবস্থানগুলি ধরে রাখে। আদিম সমাজের বিকাশে একটি বিশেষ পর্যায় ছিল মাতৃতন্ত্র। এই পর্যায়ের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক জীবনে নারীর ভূমিকা ছিল প্রধান।
সমাজের বিকাশের একেবারে গোড়ার দিকে মানুষের জীবন এবং জীবিকার প্রাথমিক পর্যায়ে নারী-পুরুষের সম্পর্ক ব্যক্তির ভিত্তিতে সীমাবদ্ধ ছিল না। যৌথ বিবাহ তখন প্রচলিত ছিল। যৌথ বিবাহের ফলে সন্তান এবং বংশধারার জন্য বর্তমানের ন্যায় পিতাকে নির্দিষ্ট করা সম্ভব হতো না। মাতাই ছিল সন্তানের পরিচয় সূত্র। মাতৃপক্ষ হতেই সন্তানের বংশধারা নির্দিষ্ট হতো। অমুক মায়ের সন্তান-এই ছিল সন্তানের পরিচয়। গোত্র জীবনের অর্থনীতিরও পরিচারিকা ছিল নারী। পুরুষ পশুশিকার করত, কিন্তু পশুশিকার জীবিকা নির্বাহের কোনো নিশ্চিত বা নির্ভরশীল উপায় ছিল না। শস্যক্ষেত্রে বীজবপন, সন্তানপালান, গৃহরক্ষা প্রভৃতি কাজের দায়িত্ব ছিল নারীর।
পশুপালন জীবিকার অন্যতম উপায় হওয়ার পরে সামাজিক জীবনেও পরিবর্তন ঘটতে শুরু করে। এই সময় থেকে জীবিকা নির্বাহে পুরুষ প্রধান ভূমিকা পালন করতে থাকে। উৎপাদনশক্তি হিসেবে পশুর বহর পালন করার এবং দাসদের খাটানোর দায়িত্ব পুরুষ গ্রহণ করতে থাকে। পিতা এখন থেকে পরিবারের প্রধান হয়ে দাঁড়ায়। সেই সময় থেকে মাতৃতন্ত্র বাদ দিয়ে পিতৃতান্ত্রিক সমাজের গোড়াপত্তন এই সময়েই ঘটে।
তথ্যসূত্র:
১. সরদার ফজলুল করিম; দর্শনকোষ; প্যাপিরাস, ঢাকা; জুলাই, ২০০৬; পৃষ্ঠা ২৮১।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।