চিত্রলিপিবাদ বা প্রতীকবাদ (ইংরেজি: Theory of Symbols or Hieroglyphs) জ্ঞানের প্রশ্নে একটি বিশেষ তত্ত্ব। ইন্দ্রিয়ের অনুভূতির মাধ্যমে আমরা বস্তু জগতের প্রতিচ্ছবি লাভ করি। এই প্রতিচ্ছবি মিলিয়ে মন বস্তু জগতের জ্ঞান তৈরি করে। এটি হচ্ছে জ্ঞানের সাধারণ গৃহীত তত্ত্ব। কিন্তু প্রতীকবাদ জ্ঞানের এই তত্ত্বকে স্বীকার করে না। প্রতীকবাদের মতে ইন্দ্রিয়ানুভূতি আমাদের মনে বস্তুর হুবহু প্রতিচ্ছবি তৈরি করে না, সে মনের মধ্যে কতকগুলি প্রতীক বা সঙ্কেতের সৃষ্টি করে। এই প্রতীক বা সঙ্কেতগুলির সঙ্গে বস্তুর চরিত্রের কোনো সাদৃশ্য নেই।
বিশ শতকের গোড়ার দিকে রুশ দার্শনিক প্লেখানভ জ্ঞানের প্রশ্নে ‘প্রতীক’ শব্দের ব্যবহার করেন। প্রতীকবাদ জ্ঞানের প্রশ্নে অজ্ঞেয়বাদে পর্যবসিত হতে পারে। কারণ, ইন্দ্রিয়ানুভূতি যদি বস্তুর চরিত্রকে মনের মধ্যে প্রতিফলিত না করে কেবল কতকগুলি বৈশিষ্ট্যহীন প্রতীক মাত্র সৃষ্টি করে তা হলে বস্তুর চরিত্র জানা মনের পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। মনের কাছে বস্তু অজ্ঞেয় থেকে যায়।
দ্বন্দ্বমূলক বা বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদ প্রতীকবাদকে সঠিক মনে করে না। ইন্দ্রিয়ানুভূতি মনে বস্তুজগতের হুবহু প্রতিচ্ছবি তৈরি না করলেও ইন্দ্রিয় হচ্ছে বস্তুজগৎ ও মনের মধ্যকার সাক্ষাৎ যোগসূত্র। ইন্দ্রিয়দত্ত অনুভূতিগুলি হচ্ছে মনের নিকট বস্তুজগতের জ্ঞান তৈরির স্থূল কাঁচামাল বিশেষ। ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে বস্তুজগতের সঙ্গে মনের পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার সম্পর্কে মনের বিশ্লেষণ, সংশ্লেষণ, অনুমান ইত্যাকার বিভিন্ন ক্ষমতা বিকাশ লাভ করেছে।
মন ইন্দ্রিয়ের দেওয়া অনুভূতির পর্যবেক্ষণ, বিশ্লেষণ, সংশ্লেষণ প্রভৃতি মারফত বস্তুজগতের ধারণা তৈরি করে। এ ধারণা বা জ্ঞান কোনো সময়ে চরম এবং অপরিবর্তনীয় নয়। ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে মন ও বস্তুর ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া যেমন নিরন্তর চলছে তেমনি বস্তুজগৎ সম্পর্কে মনের জ্ঞানও বিকশিত হচ্ছে।
তথ্যসূত্র:
১. সরদার ফজলুল করিম; দর্শনকোষ; প্যাপিরাস, ঢাকা; জুলাই, ২০০৬; পৃষ্ঠা ১৯৪।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।