আগ্রাসন বা অন্যায় আক্রমণ (ইংরেজি: Aggression) হচ্ছে অপর ব্যক্তি, গােষ্ঠী কিংবা দেশকে প্রত্যক্ষ আচরণে, কথায় অথবা মনস্তাত্ত্বিক পদ্ধতিতে আঘাত, উৎখাত কিংবা অবমাননার উদ্দেশ্যে কোনও ব্যক্তি, গােষ্ঠী, অথবা দেশের আক্রমণসূচক ব্যবহার। শব্দটির সমার্থক প্রত্যয় হলো হিংসা, সংঘর্ষ ও যুদ্ধ। বিষয়টি মনস্তাত্ত্বিক, সমাজতাত্ত্বিক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের অনুশীলন ও গবেষণার ক্ষেত্র।[১]
অন্যায় আক্রমণ কথাটির অর্থ সহজ হলেও যুদ্ধমান পক্ষের কেউই আক্রমণকারী বলে চিহ্নিত করতে চায় না। পরস্পর পরস্পরকে আক্রমণকারী বলে অভিযুক্ত করে। একমাত্র নিরপেক্ষ কারুর পক্ষে বলা সম্ভব যে, এমন ক্ষেত্রে আক্রমণকারী কে। কিন্তু বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ শুরু হলে তখন আর কেউ নিরপেক্ষ থাকে না। কেবল বিশ্বযুদ্ধ নয়, আধুনিক আন্তর্জাতিক জটিল রাজনীতিতেও নিরপেক্ষ কোনো রাষ্ট্র আছে, একথা বলা কঠিন। কোনো অবস্থায় কোনো কার্য আক্রমণ বলে বিবেচিত হবে এর কোনো সংজ্ঞা জাতিসংঘের ঘোষণাপত্রেও গৃহীত হয় নি।[২]
সিগমুন্ড ফ্রয়েড ও অন্যান্য মনস্তাত্ত্বিকেরা আগ্রাসন প্রবৃত্তিকে স্বভাবগত হতাশাসঞ্জাত বলে মনে করেন। কিন্তু আগ্রাসনকারীরা সচরাচর আগ্রাসী অভিসন্ধির কথা স্বীকার করে না; তারা প্রকৃত অথবা সম্ভাব্য আক্রমণের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার সাফাই গায় এবং অধিকাংশ সময় আইন, শৃঙ্খলা ও সভ্যতা বজায় রাখার দোহাই দেয়।
সােভিয়েত ইউনিয়ন ও তার প্রতিবেশী আফগানিস্তান, এস্তোনিয়া, লাটভিয়া, ইরান. পোলাণ্ড, রুমানিয়া, তুরস্কের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তিতে (৩ জুলাই, ১৯৩৩) আগ্রাসনের সংজ্ঞা নিরূপিত হয়: যে কোনও ঘটনায় যেখানে ১. কোনও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘােষণা; ২. অন্য রাষ্ট্রের এলাকায় যুদ্ধ ঘােষণা না করে হানা দেওয়া; ৩. যুদ্ধ ঘােষণা না করে কোনও রাষ্ট্রের ভূখণ্ড কিংবা নৌ, বিমান অথবা স্থলবাহিনীর উপর আক্রমণ; ৪. অপর কোনও রাষ্ট্রের বন্দর অথবা উপকূল অবরােধ; ৫, অন্য এক রাষ্ট্রের ভূখণ্ড থেকে অপর কোনও রাষ্ট্রের ভূখণ্ডে সশস্ত্র জঙ্গি গােষ্ঠীকে মদত দেওয়া অথবা অনুপ্রবেশ করা এবং ওই ধরনের গােষ্ঠীকে সাহায্য অথবা আশ্রয়দান থেকে বিরত থাকার দাবি প্রত্যাখ্যান করা।
অনুরূপ সংজ্ঞা ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিত নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলনে গৃহীত হয়। রাষ্ট্রসংঘের সনদে আগ্রাসন সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। প্রত্যক্ষ অথবা পরােক্ষভাবে এবং সামরিক অবরােধ, শাস্তি (sanction) প্রভৃতির মাধ্যমে আগ্রাসন ঘটে। সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্র অনুযায়ী রাষ্ট্রসংঘ ব্যবস্থা গ্রহণ করে। সামরিক বাহিনীর অভিযান ছাড়াও গেরিলা যুদ্ধের মধ্য দিয়েও আগ্রাসী আচরণ ফুটে ওঠে। আগ্রাসনকে প্রমাণ করা, বিশেষ করে পরােক্ষ আগ্রাসন চিহ্নিত করা একটি জটিল ব্যাপার।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে একুশ শতকের দুই দশক পর্যন্ত চার্চিল, কেনেডি, জর্জ বুশ প্রভুত্বকারী হিসেবে গোটা দুনিয়ায় কয়েকশত কোটি মানুষকে হত্যা করে আগ্রাসী হিসেবে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
তথ্যসূত্র:
১. গঙ্গোপাধ্যায়, সৌরেন্দ্রমোহন. রাজনীতির অভিধান, আনন্দ পাবলিশার্স প্রা. লি. কলকাতা, তৃতীয় মুদ্রণ, জুলাই ২০১৩, পৃষ্ঠা ৩১-৩২।
২. সরদার ফজলুল করিম; দর্শনকোষ; প্যাপিরাস, ঢাকা; ৫ম মুদ্রণ জানুয়ারি, ২০১২; পৃষ্ঠা ৩২-৩৩।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।