পরার্থবাদ (ইংরেজি: Altruism) বা ‘অলট্রুইজম’ শব্দের উৎপত্তি ফরাসি ভাষা থেকে। ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রখ্যাত ফরাসি দার্শনিক অগাস্ট কোঁত তাঁর মতবাদের ব্যাখ্যায় এই শব্দের ব্যবহার করেন। ইগোইজম বা আত্মবাদের বিরোধীভাব হিসাবে পরার্থবাদ ব্যবহৃত হয়। পরার্থবাদ কথাটির সাধারণ অর্থ সুপরিচিত। এই অর্থে পরার্থবাদ দ্বারা অপরের জন্য দুঃখ-কষ্ট সহ্য করা বা ত্যাগ স্বীকারের মনোভাব বুঝায়।
আত্মবাদের ন্যায় পরর্থবাদকেও মানুষের একটি সহজাত প্রবৃত্তি বলে অগাস্ট কোঁতে মনে করেন। মা যখন সন্তানের জন্য কষ্ট স্বীকার করে তখন মা পরার্থপরতার পরিচয় দেয়। পরার্থপরতা যখন মানুষের একটি সামাজিক অনুভূতি তখন এই অনুভূতির চর্চা এবং উন্নতি সাধন দ্বারা মানুষের সমাজকে স্বার্থের সংঘাত থেকে মুক্ত করা সম্ভব বলে কোঁতে মনে করতেন। সমাজকে উন্নত করার মাধ্যম হিসাবে পরার্থবাদকে উক্ত দার্শনিক একটি নীতিগত তত্ত্ব হিসাবে দাঁড় করান। কোঁতের মতে স্বার্থপরতা কেবল মানুষের নয়। মনুষ্যেতর জীবের মধ্যেও এর সাক্ষাৎ পাওয়া যায়। এটা কেবল মৌলিক জৈবিক অনুভূতি। এই অনুভূতির জন্যই পশু-পাখিও সন্তানকে বিপদ থেকে রক্ষা করার জন্য নিজে বিপদ বরণ করে।
তথ্যসূত্র:
১. সরদার ফজলুল করিম; দর্শনকোষ; প্যাপিরাস, ঢাকা; ৫ম মুদ্রণ জানুয়ারি, ২০১২; পৃষ্ঠা ৪২।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।