সংজ্ঞা হচ্ছে কোনো ব্যক্তি বা বিষয়ের মূল বৈশিষ্ট্যগুলিকে চিহ্নিত করা

সংজ্ঞা হচ্ছে একটি শব্দের অর্থের একটি বিবৃতি। সংজ্ঞা শব্দটির ইংরেজী হচ্ছে ‘Definition’ যেটি ল্যাটিন ‘ডিফিনিশিও’ শব্দ থেকে উদ্ভুত। ‘ডেফিনিশিও’ শব্দের অর্থ হচ্ছে, কোনো ব্যক্তি বা বিষয়ের মূল বৈশিষ্ট্যগুলিকে চিহ্নিত করা। যে বৈশিষ্ট্য ব্যতিরেকে একটি বিষয় আর সেই বিষয় বলে পরিচিত হতে পারে না, কেবলমাত্র সেই বৈশিষ্ট্যই সংজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত হবে- অপর কোনো বৈশিষ্ট্য নয়।

আমাদের জীবনে সংজ্ঞার আবশ্যকতা সমধিক। সংজ্ঞা একটি সংকেত বিশেষ। সংজ্ঞা দ্বারা আমরা নির্দিষ্ট বিষয়কে স্মরণ রাখি। বস্তুপুঞ্জকে সংজ্ঞা দ্বারা শ্রেণীবিভক্ত করি। সংজ্ঞাকরণের ক্ষমতা মানুষের জ্ঞানের বিকাশের একটি উন্নত স্তরের পরিচায়ক। মানুষ যখন তার মস্তিষ্ক দ্বারা বিশেষকে পর্যবেক্ষণ করে বিশেষে বিশেষে সাদৃশ্য এবং বৈসাদৃশ্য অনুধাবন করার ক্ষমতা অর্জন করেছে, তখনই তার পক্ষে সংজ্ঞাকরণ সম্ভব হয়েছে।

সংজ্ঞাকরণের প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ প্রথমে এ্যারিস্টটল করেছেন বলে ইউরোপীয় দর্শনের ইতিহাস উল্লেখ করা হয়। এ্যারিস্টটল সংজ্ঞাকরণের বিধান নির্দিষ্ট করে বলেছেন যে, সংজ্ঞাকরণের অর্থ হচ্ছে, সংজ্ঞেয় পদের জাতি এবং সহজাতির সঙ্গে তার পার্থক্যসূচক গুণের নির্দেশ করা। এর দৃষ্টান্ত হিসাবে তিনি মানুষকে ‘যুক্তিবাদী জীব’ বলে উল্লেখ করেছেন। মানুষ জীবের অন্তর্গত। অর্থাৎ জীব বা জন্তু হচ্ছে মানুষের জাতি এবং যুক্তিবাদিতা হচ্ছে তার সহজাতি কুকুর-বিড়াল ইত্যাদি পশুর সঙ্গে তার পার্থক্যসূচক গুণ।

এ্যারিস্টটলীয় সংজ্ঞাকরণের বিধান অনুযায়ী ব্যক্তিবাচক কোনো পদের সংজ্ঞা সম্ভব নয়। রহিম একটি ব্যক্তিবাচক পদ। একটি নাম। রহিম মানুষ হলে তাকে একজন মানুষ বলা যায় বটে –কিন্তু তাতে তার বিশেষ কোনো পরিচয় পাওয়া যায় না। যে বিশেষ গুণে রহিম করিম কিংবা যাদব নয়, যে গুণ রহিমকে একজন মানুষ বললেই স্পষ্ট হয় না। এ জন্য বিশেষ ব্যক্তি বা বস্তুর কোনো যৌক্তিক সংজ্ঞা হতে পারে না। সংজ্ঞা হতে পারে কেবলমাত্র জাতিবাচক পদের। কিন্তু যে জাতি পরিধিতে ব্যাপকতম কিংবা চরম, তারও সংজ্ঞা চলে না। কেননা চরম জাতিকে অপর কোনো বৃহত্তর জাতির অন্তর্ভুক্ত করে পরিচিত করা চলে না। মানুষকে জন্তুর অন্তর্ভুক্ত করা যায়। জন্তুকে প্রাণীর অন্তর্ভুক্ত করে পরিচিত করা চলে না। তাই এ্যারিস্টটলের বিধান অনুযায়ী চরম জাতি এবং ব্যক্তি বা বস্তুবিশেষের কোনো সংজ্ঞা দেওয়া সম্ভব নয়।

আরো পড়ুন:  আরোহ যুক্তি বা আরোহ পদ্ধতি সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য কিছু প্রমাণ সরবরাহ করে

তথ্যসূত্র:
১. সরদার ফজলুল করিম; দর্শনকোষ; প্যাপিরাস, ঢাকা; জুলাই, ২০০৬; পৃষ্ঠা ১২৭-১২৮।

Leave a Comment

error: Content is protected !!