বুদ্ধ্যঙ্ক বা আইকিউ (ইংরেজি: Intelligence quotient বা IQ) হচ্ছে মানবিক বুদ্ধিমত্তা মূল্যায়নের জন্য পরিকল্পিত বিভিন্ন মানসম্মত পরীক্ষা থেকে প্রাপ্ত মোট ফল। ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির মানসিক ক্ষমতা বা বুদ্ধির পার্থক্য নির্ধারণ করার জন্য ঊনবিংশ শতক থেকেই ফেকনার, গালটন, হেলমজ প্রমুখ মনোবিজ্ঞানীরা বিভিন্ন পরীক্ষা বা অভিক্রিয়ার চেষ্টা করতে শুরু করেন। গোড়ার দিকে মনোবিজ্ঞানীগণ কোনো উদ্দীপকের জবাবে ব্যক্তির প্রতিক্রিয়ার ব্যবধান-সময় পরিমাপের চেষ্টা করেন। এবং এই ব্যবহার-সময়ের তারতম্য দ্বারা ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির মানসিক ক্ষমতার পার্থক্য নিরূপণ করেন। চোখ, কান, স্পর্শ ইত্যাদি ইন্দ্রিয়ের প্রতিক্রিয়ার ক্ষমতা পরিমাপের জন্য বিভিন্ন যান্ত্রিক ক্রিয়া এরা ব্যবহার করেন। পরবর্তীকালে উচ্চতর বুদ্ধি বা মানসিক ক্ষমতাকেও পরিমাপ করার পদ্ধতি বের করার চেষ্টা করা হয়। এই প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মনোবিজ্ঞানী এবিনহস (জ. ১৮৯৭) এবং বাইনেট ও সাইমন এর নাম (জ ১৯০৫)।
বাইনেট এবং সাইমন বিভিন্ন বয়সের শিশুদের জন্য বিভিন্ন ধরনের সহজ বুদ্ধির পরীক্ষা বা অভিক্রিয়া প্রস্তুত করেন। এর মারফত এঁরা বিভিন্ন বয়সের বুদ্ধির সূচক তৈরি করেন। দৃষ্টান্তস্বরূপ একটি আটবছর বয়সের শিশুর পক্ষে যে সমস্ত প্রশ্নের জবাবদান সম্ভব কিংবা অধিকসংখ্যক আট বছরের শিশু যে সমস্ত প্রশ্নের জবাব দিতে পারে তাকে উক্ত বয়সের বুদ্ধির নির্দেশক বলে বাইনেট ও সাইমন স্থির করেন। এই ভিত্তিতে একটি ছয় বছরের শিশু যদি আট বছরের জন্য নির্দিষ্ট প্রশ্ন বা পরীক্ষায় কৃতকার্য হয় তাহলে উক্ত ছ বছরের শিশুর বৃদ্ধি তার নিজের দৈহিক বয়সের চেয়ে অধিক এবং আট বছর বয়সের সমান।
বাইনেট ও সাইমন মনে করতেন যে প্রত্যেক ব্যক্তিরই বুদ্ধির একটি কুশেন্ট অর্থাৎ সূচক বা বুদ্ধ্যঙ্ক আছে। যে কোনো শিশু বা ব্যক্তির বুদ্ধ্যঙ্ক নির্ণয় করার জন্য তাঁরা নিম্নোক্ত পদ্ধতির উল্লেখ করেন।
মানসিক বয়স x ১০০%
বুদ্ধ্যঙ্ক(আই. কিউ.)= দৈহিক বয়স
যেমন রহিমের বয়স যদি দশ বছর হয় এবং পরীক্ষার ক্ষেত্রে যদি দেখা যায় যে রহিম ৮ বছরের শিশুর উপযুক্ত সমাধানে সক্ষম তা হলে তার বুদ্ধ্যঙ্ক হবে ৮০। এই মনোবিজ্ঞানীদের মতে বুদ্ধির গড় বুদ্ধ্যঙ্ক বা সূচক ১০০ ধরে উপরোক্ত পদ্ধতিতে কোনো শিশু বা ব্যক্তির বৃদ্ধি ১০০ এর কম কিংবা বেশি বলে নির্দিষ্ট হতে পারে।
তথ্যসূত্র:
১. সরদার ফজলুল করিম; দর্শনকোষ; প্যাপিরাস, ঢাকা; জুলাই, ২০০৬; পৃষ্ঠা ২৩১-২৩২।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।