সজ্ঞা হচ্ছে আকস্মিকভাবে, চিন্তা ও ভাবনা ব্যতিরেকে সমস্যার সমাধান লাভের উপায়

আকস্মিকভাবে, কোনোপ্রকার চিন্তা ও ভাবনা ব্যতিরেকে, কোনো সমস্যার সমাধান লাভের উপায়কে সজ্ঞা বা বোধি (ইংরেজি: Intuition) বলে অভিহিত করা হয়। জ্ঞানলাভের উপায় সম্পর্কে দর্শনে বিভিন্ন প্রকার মত আছে। বস্তুবাদী ও বৈজ্ঞানিক উপায় হিসাবে বুদ্ধির সহযোগে কোনো সমস্যার পর্যবেক্ষণ, বিশ্লেষণ, পরীক্ষা, অনুমান ও প্রয়োগ-সমন্বিত পদ্ধতিকে জ্ঞানলাভের প্রধান উপায় বলে মনে করা হয়। কিন্তু জ্ঞানের মধ্যে সজ্ঞাবাদী মতও অনেক দার্শনিকের মধ্যে পাওয়া যায়।

হেনরী বার্গসঁর দর্শনকে সজ্ঞাবাদী দর্শন বলা হয়। সজ্ঞাবাদী হিসাবে এডমন্ড হাসারেল ও জর্জ সান্তায়ানার নামও উল্লেখযোগ্য। ব্যক্তির মন অনেক সময় অচিন্তনীয়ভাবে কোনো সমস্যার সমাধানে আলোচিত হয়ে ওঠে বলে সজ্ঞাবাদীগণ মনে করেন। এজন্য ব্যক্তির কোনো শিক্ষা, চিন্তা বা অভিজ্ঞতার আবশ্যক হয় না। এঁদের মতে সজ্ঞার ক্ষেত্রে ব্যক্তি থাকবে একটি নিষ্ক্রিয় গ্রাহকযন্ত্রবিশেষ। সত্য এসে সে যন্ত্রে আপনি ধরা দেবে। সজ্ঞাবাদী দর্শনের মতে চরম সত্যকে মানুষ এই উপায়েই লাভ করতে পারে-বুদ্ধি দ্বারা নয়। বুদ্ধি ও চিন্তা কেবল খন্ড সত্য উদ্ধার করতে পারে, চরম সত্য নয়।

সজ্ঞাবাদী দর্শন ভাববাদী দর্শনের প্রকারবিশেষ। ভাববাদী দার্শনিক দেকার্ত এবং স্পিনাজো স্থান, কাল, পাত্র, ঈশ্বর, কার্যকারণ এবং অন্যান্য সার্বিক ভাবকে যেমনি সহজাত তেমনি সজ্ঞাজাত বলে মনে করতেন। সজ্ঞার সমার্থক চরম ভাববাদ এবং ধর্ম ও রহস্যবাদের মধ্যেই প্রধানত পাওয়া যায়।

বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে ‘সজ্ঞা’র ন্যায় অতিপ্রাকৃতিক, বুদ্ধির অতীত রহস্যজনক জ্ঞানোপায়ের কোনো ক্ষমতা বা পদ্ধতি স্বীকার করা চলে না। ব্যক্তির মনে আকস্মিকভাবে কোনো সমস্যার সমাধান যে উদিত হতে পারে না, এমন নয়। কিন্তু এই আকস্মিকবোধেরও মূল ভিত্তি হচ্ছে ব্যক্তির পূর্বসঞ্চিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার সম্ভার। অন্যথায় শিশুর মনেও জটিল সমস্যার সমাধান উদ্ভাসিত হয়ে উঠতে পারত।

তথ্যসূত্র:
১. সরদার ফজলুল করিম; দর্শনকোষ; প্যাপিরাস, ঢাকা; জুলাই, ২০০৬; পৃষ্ঠা ২৩৭-২৩৮।

Leave a Comment

error: Content is protected !!