প্রোটেস্ট্যান্টবাদ হচ্ছে খ্রিস্ট ধর্মের তিনটি ভিন্নমতাবলম্বী গোষ্ঠীর দ্বিতীয় বৃহত্তম রূপ

প্রোটেস্ট্যান্টবাদ (ইংরেজি: Protestantism) হচ্ছে খ্রিস্ট ধর্মের তিনটি ভিন্নমতাবলম্বী গোষ্ঠীর দ্বিতীয় বৃহত্তম রূপ। এই ধর্মে বিশ্বব্যাপী ৮০ থেকে ৯০ কোটির বেশি অনুগামী যারা সম্মিলিতভাবে সমস্ত খ্রিস্টানের প্রায় ৪০%। ইউরোপের মধ্যযুগের শেষ পর্যায়ে সংস্কারবাদী আন্দোলনের যুগে প্রোটেস্টান্টদের উদ্ভব ঘটে। প্রোটেস্টান্টবাদ গোঁড়া খ্রিষ্টান ধর্মের ধর্মীয় পুরুষ, যিশু খ্রিষ্টের মাতার অলৌকিক উপাখ্যান কিংবা নরক ও স্বর্গের মধ্যবর্তী কোনো শোধনাগারের কল্পনাকে স্বীকার করে না।

গোঁড়া খ্রিষ্ট ধর্ম, ক্যাথলিক বা রোমান ক্যাথলিক খ্রিষ্ট ধর্ম এবং প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রিষ্টধর্ম-এই তিনটি হচ্ছে খ্রিষ্টধর্মের ইতিহাসে তিনটি প্রধান শাখা। গোঁড়া খ্রিস্টান ধর্ম বা ক্যাথলিক বা অর্থোডক্স খ্রিস্টান ছাড়া বাকী খ্রিস্টানদের অনেকক্ষেত্রে প্রোটেস্ট্যান্ট বলা হয়।

প্রোটেস্টান্টদের প্রধান বৈশিষ্ট্য এই যে, প্রোটেস্টান্টবাদ ঈশ্বর এবং ব্যক্তির মধ্যে অপর কোনো মাধ্যমের অস্তিত্ব স্বীকার করে না। প্রোটেস্টান্টবাদের মতে ব্যক্তির সঙ্গে ঈশ্বরের সম্পর্ক হচ্ছে প্রত্যক্ষ। ঈশ্বরের আশীর্বাদ লাভ করতে ব্যক্তির পক্ষে যাজক বা গির্জার কোনো প্রয়োজন নেই। ব্যক্তির মুক্তি নির্ভর করে ঈশ্বরের উপর তার বিশ্বাস এবং ঈশ্বরের ইচ্ছার উপর। কোনো ধর্মজাযকের সুপারিশের উপর নয়। ব্যক্তি এবং রাষ্ট্রের উপর খ্রিষ্ট যাজক সম্প্রদায়ের একচ্ছত্র আধিপত্যের ক্ষেত্রে প্রোটেস্টান্টবাদের এই অভিমত বিরাট আঘাতস্বরূপ। এর ফলে রাষ্ট্রের উপর রোমের পোপতন্ত্রের আধিপত্যে ভাঙ্গন শুরু হয়। পোপতন্ত্র রাষ্ট্রীয় শাসন এবং ব্যবস্থার ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় বলে গণ্য হতে শুরু হয়।

প্রোটেস্টান্টবাদ ঈশ্বরের সঙ্গে ব্যক্তির সাক্ষাৎ সম্পর্কের কথা বলে ব্যক্তির নিজস্ব শক্তি এবং দায়িত্ববোধকে সমাজ ও রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করে। সামন্ততন্ত্র এবং ধর্মীয় কুসংস্কার ও প্রতিক্রিয়াশীল বিধিবন্ধন থেকে ব্যক্তির মুক্তি সাধনে এবং বুর্জোয়া বিপ্লবের পথ উন্মুক্ত করণে প্রোটেস্টান্টবাদ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

তথ্যসূত্র:

১. সরদার ফজলুল করিম; দর্শনকোষ; প্যাপিরাস, ঢাকা; ৫ম মুদ্রণ জানুয়ারি, ২০১২; পৃষ্ঠা ৩২৩।

Leave a Comment

error: Content is protected !!