আশ্রিত রাজ্য (ইংরেজি: protectorate) হচ্ছে কোনও রাষ্ট্রের আশ্রয়াধীন একটি রাজ্য যার উপর ওই রাষ্ট্রের আইনগত অধিকার ও ক্ষমতা থাকে, কিন্তু আশ্রিত রাজ্যটির পূর্ণ সার্বভৌমত্ব থাকে না। বিভিন্ন ধরনের চুক্তি, প্রচলিত ধারা ইত্যাদির মাধ্যমে একটি দেশ আশ্রিত রাজ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। অতএব, আশ্রিত রাজ্য একটি উচ্চ সার্বভৌমত্বের অধীনে একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল। স্থানীয় শাসক থাকায় এগুলি উপনিবেশ থেকে পৃথক এবং খুব কমই কর্তৃত্বকারী সার্বভৌম রাষ্ট্র থেকে অভিবাসী কর্তৃক অভিবাসনের অভিজ্ঞতা হয়।
ব্রিটেনের রীতি অনুযায়ী আশ্রিত দেশের অধিবাসীরা ব্রিটেনের নাগরিক হিসেবে গণ্য হয় না এবং সে-সব আশ্রিত রাজ্য বিদেশি রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পায়; কিন্তু ওইসব নাগরিকদের ব্রিটেনের রাজশক্তির প্রতি কোনও আনুগত্য না থাকলেও আশ্রয়ের চুক্তি অনুযায়ী কিছু বাধ্যবাধকতা থাকে এবং আশ্রিত রাজ্যের অধিবাসীরা অন্য কোনও রাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি কোনও সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে না।
আশ্রয়দানকারী রাষ্ট্র আশ্রিত রাজ্যের অনেকটা অভিভাবকের মতো সে রাজ্যের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ইত্যাদি উন্নয়নের কাজে সহায়তা করে। আশ্রিত রাজ্য উপনিবেশ নয়। রোডেসিয়া এক সময়ে ব্রিটেনের আশ্রিত রাজ্য ছিল। তবে জার্মানি কর্তৃক ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে চেকোস্লোভাকিয়াকে আশ্রিত রাজ্য হিসেবে দাবি করলেও কার্যত সেটি ছিল অন্তর্ভুক্তিকরণ।
আধুনিক যুগে, গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সম্পর্কসমূহকে পরিচালনা করতে কতিপয় শর্ত দিয়ে সন্ধির মাধ্যমে অধিকাংশ আশ্রিত রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই চুক্তিটি কূটনৈতিক প্রয়োজনে চুক্তি-তৈরির ক্ষমতা এবং দূত-সংক্রান্ত প্রতিনিধিত্বের অধিকারের বিশেষ উল্লেখের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আশ্রিত রাজ্যের অবস্থান সংজ্ঞায়িত করে। বাহ্যিক বিষয়গুলির সকল বিষয়ে হস্তক্ষেপের মাধ্যমে সুরক্ষাকারী ক্ষমতাশালী রাষ্ট্র দুর্বল রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের পক্ষে সুনির্দিষ্ট ক্ষতির কারণ হয়ে থাকে।[২]
তথ্যসূত্র:
১. গঙ্গোপাধ্যায়, সৌরেন্দ্রমোহন. রাজনীতির অভিধান, আনন্দ পাবলিশার্স প্রা. লি. কলকাতা, তৃতীয় মুদ্রণ, জুলাই ২০১৩, পৃষ্ঠা ৪০-৪১।
২. The Editors of Encyclopaedia Britannica, তারিখহীন, ব্রিটানিকা ডট কম, https://www.britannica.com/topic/protectorate-international-relations
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।