কাজের অধিকার কি

কাজের অধিকার (ইংরেজি: Right to Work) প্রত্যয়টি দুটি অর্থে ব্যবহৃত হয়। প্রথমটি হলো বাধাহীনভাবে জীবিকাকর্মে যােগ দেবার অধিকার; বাধা আসে ট্রেড ইউনিয়ন পরিচালিত পিকেটিং, অবস্থান, বিক্ষোভ ইত্যাদির মাধ্যমে। তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোনও কোনও অঙ্গরাজ্যে ট্রেড ইউনিয়নের ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে লােকের কাজ অধিকারকে নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। সভা, মিছিল, ধর্মঘট, হরতাল, বন্ধ ইত্যাদির ফলেও দোকানি, দিনমজুর, ফেরিওয়ালা প্রভৃতি স্বনিয়ােজিত মানুষের জীবিকার্জনের অধিকার ব্যাহত হয়।

প্রত্যয়টির দ্বিতীয় অর্থই হলো প্রধান। তাতে সবাইকার জীবিকার্জনের জন্য কর্মপ্রাপ্তির অধিকারের কথা বলা হয়। প্রথম প্রত্যয়টির যেমন মর্ম হলো স্বাধীনতা, দ্বিতীয়টির হলো দাবি। ভারতীয় সংবিধানের ৩৯ (এ) এবং ৪১ ধারায় অধিকারটি সম্পর্কে নির্দেশদান (Directive Principles) করা হয়েছে।

সােভিয়েত ইউনিয়নের সংবিধানেও কাজের অধিকারের নিশ্চয়তা বিধান করা হয়েছিল, এবং ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে হেলসিঙ্কি চুক্তি অনুসারে পূর্ব ইউরােপীয় দেশগুলিও অনুরূপ নীতি গ্রহণ করে। এ ধরনের অধিকারের অযৌক্তিকতার প্রসঙ্গে বলা হয় যে কর্মপ্রাপ্তির অধিকারকে একটি সর্বজনীন মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া কঠিন। কারণ অধিকারের সূত্রেই দায়দায়িত্বের প্রশ্ন ওঠে, যেটা এক্ষেত্রে প্রয়ােগ করা সহজসাধ্য নয়। নিজের জীবন রক্ষার যদি অধিকার থাকে, তা হলে অপরের জীবন রক্ষার প্রশ্নকে মান্য করা আবশ্যক। কার্যত বেকার মানুষের কর্মসংস্থানের অধিকারকে সর্বজনীনভাবে একটি দায়িত্ব হিসেবে মান্য করা সম্ভব নয়।

অতএব কাজের অধিকারের রূপায়িত করার দায়দায়িত্ব হলো রাষ্ট্রের। মার্কসীয় দৃষ্টিতে শ্রমের মাধ্যমেই মানুষের যথার্থ আত্মােপলব্ধি ও মনুষ্যত্বের পরিপূর্তি ঘটে। কাজের অধিকার এবং শ্রমের অধিকার একই পর্যায়ভুক্ত হয়ে সর্বজনীন দায়দায়িত্বের অধিকারই অর্জন করে।

তথ্যসূত্র:

১. গঙ্গোপাধ্যায়, সৌরেন্দ্রমোহন. রাজনীতির অভিধান, আনন্দ পাবলিশার্স প্রা. লি. কলকাতা, তৃতীয় মুদ্রণ, জুলাই ২০১৩, পৃষ্ঠা ৭৮-৭৯।

Leave a Comment

error: Content is protected !!