একটি বিশ্বযুদ্ধ (ইংরেজি: World war) হচ্ছে একটি বৃহত্তর পরিসরের যুদ্ধ যা পুরো বিশ্বকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করে। একাধিক মহাদেশ, একাধিক দেশসমূহ বা মাত্র দুটি দেশব্যাপী বিস্তৃত অঞ্চলে সাধারণত বিশ্বযুদ্ধসমূহ ঘটে থাকে। স্নায়ু যুদ্ধ এবং সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের মতো বৈচিত্র্যপূর্ণ বিশ্বব্যাপী সংঘর্ষকে আত্মগতভাবে “বিশ্বযুদ্ধ” হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছে। তবে বিশ্বযুদ্ধ শব্দটি বিশ শতকে সংঘটিত দুটি প্রধান আন্তর্জাতিক সংঘর্ষের ক্ষেত্রে প্রযুক্ত করা হয়; যেমন: প্রথম বিশ্বযুদ্ধ (১৯১৪–১৮) এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (১৯৩৯-৪৫)।
বিশ্বযুদ্ধ শব্দটিকে অক্সফোর্ড ইংরেজি অভিধানে ১৮৪৪ সালে স্কটিশ পত্রিকা দ্য পিপলস জার্নালে ইংরেজী ভাষার প্রথম পরিচিত ব্যবহারের উদ্ধৃতি দিয়েছিল: “বৃহৎ শক্তিসমূহের মধ্যে অবধারিতভাবে সংঘটিত একটি যুদ্ধ এখন একটি বিশ্বযুদ্ধ।” “ওয়ার্ল্ড ওয়ার” শব্দটি কার্ল মার্কস এবং তাঁর সহযোগী ফ্রিডরিখ এঙ্গেলস ১৮৫০ সালের ফ্রান্সে শ্রেণিসংগ্রাম নামে অভিহিত একাধিক নিবন্ধে ব্যবহার করেছিলেন। জার্মান লেখক অগাস্ট উইলহেলম অটো নিম্যান তাঁর ব্রিটিশবিরোধী উপন্যাস Der Weltkrieg: Deutsche Träume (বিশ্ব যুদ্ধ: জার্মান স্বপ্নসমূহ) এর শিরোনামে “ওয়ার্ল্ড ওয়ার” শব্দটি ১৯০৪ সালে ব্যবহার করেছিলেন, ইংরেজিতে বইটি The Coming Conquest of England শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছিল।
বিশ্বযুদ্ধ সম্পর্কে মাও সেতুং
বিশ্ব সাম্যবাদী আন্দোলনের মহান নেতা মাও সেতুং বিশ্বযুদ্ধগুলো বিশ্লেষণ করে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছিলেন। তাঁর সারসংকলন ছিলো, আমরা যুদ্ধের বিরুদ্ধে, তবে সাম্রাজ্যবাদীরা যুদ্ধ লাগাতে মরিয়া হয়ে গেলে আমরা যুদ্ধকে ভয় পাই না। মাও সেতুং লিখেছেন,
দুনিয়ার সকল দেশের মানুষ এখন আলোচনা করছে, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বাঁধবে কি না। এ প্রশ্নেও আমাদের অবশ্যই মনের দিক থেকে প্রস্তুত হতে হবে, তার বিশ্লেষণও করতে হবে। আমরা দৃঢ়ভাবে শান্তির পক্ষে এবং যুদ্ধের বিরুদ্ধে। কিন্তু সাম্রাজ্যবাদীরা যদি যুদ্ধ বাধাবার জন্য জেদ ধরে, তাহলে আমাদের তাতে ভয় পাওয়া উচিত নয়। যে কোনো ‘বিশৃঙ্খলা’ সম্পর্কে আমাদের যে মনোভাব, এ প্রশ্ন সম্পর্কেও আমাদের সেই একই মনোভাব: প্রথমত, আমরা এর বিরুদ্ধে; দ্বিতীয়ত, আমরা একে ভয় করি না। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরেই জন্মলাভ করেছিল বিশ কোটি মানুষের দেশ সোভিয়েত ইউনিয়ন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে নব্বই কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত সমাজতান্ত্রিক শিবিরের অভ্যুদয় ঘটেছিল। যদি সাম্রাজ্যবাদীরা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বাধাতে জেদ ধরে, তাহলে এটা নিশ্চিত যে, আরো বহু কোটি লোক সমাজতন্ত্রের পক্ষে চলে আসবে এবং সাম্রাজ্যবাদীদের জন্য পৃথিবীতে আর বেশি স্থান অবশিষ্ট থাকবে না, এটাও সম্ভব যে, গোটা সাম্রাজ্যবাদের ব্যবস্থাটাই পুরোপুরি ধ্বসে পড়বে।[১]
বিভিন্ন প্রাক্তন সরকারী কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ, লেখক এবং সামরিক নেতারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির পর থেকে বহুবিধ অতীতের এবং বর্তমান বিশ্বের যুদ্ধগুলিকে “তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ” এবং “চতুর্থ বিশ্বযুদ্ধ” হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছেন। উদাহরণস্বরূপ তারা যথাক্রমে শীতল যুদ্ধ এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধকে তৃতীয় ও চতুর্থ বিশ্বযুদ্ধ বলেছেন; তাদের মধ্যে প্রাক্তন আমেরিকান, ফরাসী এবং মেক্সিকান সরকারী কর্মকর্তা, সামরিক নেতা, রাজনীতিবিদ এবং লেখকরা রয়েছেন। তাদের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, এই যুদ্ধগুলির কোনওটিই সাধারণত বিশ্বযুদ্ধ হিসাবে বিবেচিত হয় না।
তথ্যসূত্র:
১. মাও সেতুং, “জনগণের ভেতরকার দ্বন্দ্বের সঠিক মীমাংসার সমস্যা সম্পর্কে”, অধ্যায় ১০ খারাপ ব্যাপারকে কি ভাল ব্যাপারে রূপান্তরিত করা যায়, অনুচ্ছেদ ৫, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৭
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।