গুড় বাংলাদেশের সহজলভ্য ও প্রচলিত মিষ্টান যাতে আছে নানা গুণ

গুড় আখ কিংবা খেজুরের রস হতে তৈরি করা এক প্রকারের মিষ্ট দ্রব্য। যদিও কোথাও কোথাও তালের রস হতেও গুড় তৈরি করা হয়। এই তিন গাছের অধিকাংশ জলীয় রস ঘন করে পাক দিয়ে গুড় তৈরি করা হয়।

আমরা এই নিবন্ধে মূলত আখের গুড়ের বিষয়ে আলোচনা করছি। গুড়ে আখের রসের সব খনিজ ও ক্ষারক পদার্থ সুরক্ষিত থাকে। এই সব খনিজের জন্যেই একে এরকম অস্বচ্ছ ও অপরিষ্কার দেখায়। পণ্ডিত ভাবমিশ্র গুড়কে উদ্দেশ্য করে বলেছেন ‘দোষত্রয়ক্ষয়কারয়’ নমো গুড়ায়। অর্থাৎ বাত, পিণ্ড আর কফ এই তিন দোষ নাশ করে গুড়।

গুড় শীঘ্রই হজম হয়ে যায়। গুড়ের সমান ওজনের চিনি হজম হতে অনেক বেশি সময় লাগে। গুড়ে চিনির চেয়ে শতকরা তেত্রিশ ভাগ পোষকতত্ত্ব (পুষ্টিগুণ) বেশি আছে। সেইজন্যে চিনির তুলনায় গুড়ে বেশি শক্তি দেয়।

যিনি শারীরিক ভাবে দুর্বল, যাঁর কোনো আঘাত লেগেছে, যার অর্শ, শ্বাস, মূর্চ্ছা প্রভৃতি রোগ আছে, অধিক পথ হাঁটার জন্যে যিনি ক্লান্ত, যিনি খুব বেশি পরিশ্রমের কাজ করেছেন, যিনি পড়ে গিয়ে আঘাত পেয়েছেন, যাঁর নেশা হয়ে গেছে, বা যাঁর শরীরে কোনো রকমের বিষ ঢুকে গেছে, যিনি মূত্রকৃচ্ছতায় বা প্রস্রাব কম হওয়ায় ভুগছেন, যার পাথুরি রোগ হয়েছে (কিডনি বা গলস্টোন), যিনি পুরানো জ্বর বা ম্যালেরিয়ায় ভুগছেন, যাঁর রক্তপিত্ত, দাহ, তৃষ্ণা ইত্যাদির কষ্ট আছে, যাঁর রক্তের দোষ (রক্তবিকার) হয়েছে, এমনকী যিনি ক্ষয় রোগে ভুগছেন তিনি যদি নিয়মিতভাবে পুরানো গুড় খান তাহলে সুফল পাবেন।

সুস্থ থাকতে গুড়ের প্রয়োগ:

১. আদা ও গুড় খেয়ে কোনো কাজ আরম্ভ করলে সে কাজ করার শক্তি বেশি পাওয়া যায়। সেইজন্যে আগে বলা হত আদা গুড় খেয়ে কাজে লেগে যাও অথাৎ পুণোদ্যমে কাজ শুরু করো।

২. আদা ও গুড়কে একসঙ্গে মিশিয়ে খেলে কফ দূর হয়।

আরো পড়ুন:  মহুয়া সাপোটাসি পরিবারের মধুকা গণের ভারতবর্ষ ও এশিয়ার চিরসবুজ বৃক্ষ

৩. হরীতকীর সঙ্গে গুড়ের মিশ্রণ খেলে পিত্তের প্রকোপ দূর হয়।

৪. শুঠের (শুকনা আদা) সঙ্গে গুড় মিশিয়ে খেলে সব রকমের বায়ুর প্রকোপ নাশ হয়।

৫. গুড়, শুঠ ও অল্প ঘি মিশিয়ে পাতিলেবু আকারে লাড্ডু তৈরি করে খেলে বর্ষাকালে ও শীতকালে বায়ুনাশ হয়, খিদে পায়। এই লাড্ডু খেলে বর্ষাকালে বৃষ্টিতে ভিজলেও সর্দি হয় না।

৬. পরিশ্রম করবার পর গুড়ের টুকরা খেলে ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। মানুষের কাছে গুড়ই খাদ্য একাধারেও পরিশ্রমীর পথ্য। সেইজন্যে বলা হয়ে থাকে গুড় যত পুরানো হয় তত বেশি শরীরে উপকার দেয়। সুশ্রুতের অভিমতে, পুরোনো গুড়ের চেয়ে নতুন গুড়ের উপকারী ও হিতকর অনেক কম। তাই পুরনো গুড়ের কদর বেশি। বাণভট্ট বলেন পুরোনো গুড় হার্টের পক্ষে উপকারী।

আয়ুর্বেদ মতে পুরোনো গুড়ের হজম ক্ষমতা বেশি সেজন্যে রক্তাস্বল্পতা, জন্ডিস, পিত্ত, ত্রিদোষ এবং কোনো জায়গায় ফুলে ওঠা দূর করে। গুল্ম, অর্শ, অরুচি, ক্ষয়, কাশি, বুকের আঘাত, ক্ষীণতা প্রভৃতি অসুখ ও অসুবিধেতে সঠিক ওষুধের সঙ্গে পুরোনো গুড় খেলে সুফল পাওয়া যায় ।

গুড় যত পুরোনো হয় ততই বেশি শীতল হয়ে যায়—অর্থাৎ উষ্ণভাব কমে যায়।

তথ্যসূত্রঃ

১. সাধনা মুখোপাধ্যায়: সুস্থ থাকতে খাওয়া দাওয়ায় শাকসবজি মশলাপাতি, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, নতুন সংস্করণ ২০০৯-২০১০, পৃষ্ঠা ৪৩-৪৪।

Leave a Comment

error: Content is protected !!