মাখন ও ঘি খাওয়ার উপকারিতা ও এগুলোর ব্যবহার ও প্রয়োগবিধি

মাখন ও ঘি হলো দুধের তৈরি দ্রব্য। এটি সাধারণ দুধ প্রক্রিয়াজাতের মধ্য দিয়ে ক্রীম থেকে তৈরি করা হয়ে থাকে। মাখন কোনো খাবারে মেখে খাওয়া হয়। এছাড়া সুস্বাদু রান্না করতে, কোনো ভাঁজা খাবার তৈরি, সস অথবা খাবারে সুন্দর সুঘ্রাণ আনতে মাখন ব্যবহার করা হয়। মাখনে চর্বি, পানি এবং দুগ্ধ প্রটিন থাকে।

মাখন ও ঘি সাধারণ গরুর দুধ দিয়ে তৈরি হয়। এছাড়া অন্য প্রাণীর দুধ দিয়েও তৈরি করা হয় যেমন, ভেড়া, ছাগল, মহিষের। দুধ থেকে যে ঘি তৈরি হয়, তা এক বিশেষ ধরণের মাখন। মাখন দেখতে হলুদ রঙের তবে এটির রঙ গাঢ় হলুদ থেকে সাদা রঙের হতে পারে।

ননী: ননীকে সংস্কৃত ভাষায় বলা হয় নবনী বা নবনীত। কাঁচা দুধ মন্থন করনে ননী আলাদা হয়ে যায়। আয়ুর্বেদ মতে সদ্য তোলা টাটকা ননী, সুস্বাদু, মল ধারণ করে, গায়ের রং পরিষ্কার করে (বর্ণ প্রসাদক), ঠাণ্ডা, লঘু, মেধা বৃদ্ধি  করে, পুষ্টিকর, মস্তিষ্কের শক্তি খুব তাড়াতাড়ি বাড়িয়ে তোলে। গরম তাপে গলিয়ে নিলে ননীর সব গুণ নষ্ট হয়ে যায়।

মাখন: মাখনকে সংস্কৃত ভাষায় বলা হয় মৃক্ষণ। দইয়ের জল মিশিয়ে মন্থন করলে মাখন বেরিয়ে আসে। কারো কারো মতে মাখন চোখের পক্ষে ভাল, রক্তপিত্ত নাশ করে, শুক্র, বল বৃদ্ধি করে, মল ধারণ করে, স্নিগ্ধ এবং শীতল। গরুর দুধের তৈরি টাটকা দইয়ের মাখন সবচেয়ে উপকারী।

গরুর দুধের দই থেকে তৈরি মাখন বায়ু, রক্তপিত্ত, ক্ষয়, আর্শ ও কাশির অসুখে খুব উপকার দেয়। এই মাখনের সঙ্গে মিশ্রি মিশিয়ে খেলে রসায়নের কাজ দেয় অর্থাৎ শরীরের সপ্তধাতুর পুষ্টি করে। বাচ্চাদেরও (সহ্য হলে) মাখন মিশ্রি মিশিয়ে খাওয়ানো খুব ভাল।

সুস্থ থাকতে খাওয়া-দাওয়ায় মাখনের প্রয়োগ:

১. গরুর দুধের মাখন মৈথুন শক্তি বাড়িয়ে দেয় (বৃষ্য), গায়ের রং পরিষ্কার করে, বল বৃদ্ধি করে ও খিদে বাড়িয়ে দেয়। মল রোধ করে, বায়ু, রক্তের বিকার, অর্শ, সাইনাস, কাশি সরিয়ে দেয় । গরুর দুধের থেকে তোলা মাখনই স্বাস্থ্যের পক্ষে সবচেয়ে ভাল। সম্ভব হলে এবং শরীরে সহ্য হলে অল্প পরিমাণে এই মাখন প্রতিদিন নিয়ম করে খাওয়া উচিত।

আরো পড়ুন:  সাদা চিনি কি বিষাক্ত? সাদা চিনি বিভিন্ন রাসায়নিক দ্বারা শোধন ও প্রক্রিয়াকৃত

২. এই মাখনের সঙ্গে দেশি চিনি মিশিয়ে খেলে পুরানো জ্বর সেরে যায়।

৩. মাখন, মধু ও সোনার তবক (পাতলা রাংতার মতো যা মিষ্টির ওপরে লাগানো হয়) এক সঙ্গে মিশিয়ে খেলে ক্ষয় রোগে উপকার পাওয়া যায় এবং শক্তি বৃদ্ধি হয়।

৪. গরুর দুধের মাখন তিল মিশিয়ে খেলে অর্শের উপশম হয়।

৫.  মাখন, মধু, দেশি চিনি মিশিয়ে খেলে রক্ত আমাশা সারে।

সুস্থ থাকতে ঘিয়ের প্রয়োগ:

১.  রাতে শোওয়ায় সময় দুধ গরম করে তাতে একটু ঘি মিশিয়ে খেলে সকালে কোষ্ঠ সাফ হয়ে যায় ।

২. গাওয়া ঘিয়ের ফোঁটা নাকে দিলে অনেক সময় নাক থেকে রক্ত পড়া বন্ধ হয়।

৩. গাওয়া ঘি ঘষলে হাত-পায়ের জ্বালা দূর হয় এবং গভীর ঘুম আসে । বৈঙ্গানিকদের মতে ঘি শরীরের শক্তি উৎপন্ন করে, দ্রবণীয় অংশ সঞ্চয় করে, এবং শর্করায় রূপান্তরি হয়ে (যকৃতের সাহায্যে অ্যামিনো অ্যাসিডের রূপে) কাজ করে। ঘি শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রিত করে এবং শরীরকে স্নেহযুক্ত করে অপ্রত্যঙ্গ রক্ষা করে। শুদ্ধ গিয়ে ভিটামিন ‘এ’ ‘ডি’ ‘ই আর কে আছে।

পুরনো ঘি :  পুরনো বাত ও ব্যথায় এবং আরও অনেক অসুখে পুরানো ঘি মালিশ করলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। আয়ুর্বেদ মতে এক বছরের বেশি পুরানো ঘি ত্রিদোষ নাশক (কক, পিও, বাত) মূর্চ্ছা, কুষ্ঠ, বিষ, উন্মাদ, হিস্টিরিয়া, ছানি এবং অন্য চোখে রোগেরও উপশম করে। কানে ব্যথা বা শূল, শোথ, অর্শ, ব্রণ এবং যোনিদোষের পুরানো ঘি উপকার দেয়।

দুধ, তক্র, দুগ্ধজাত সবকিছুই শরীরের পক্ষে সুফলদায়ক। হুম শক্তি অনুশারে পরিমিত পরিমানে এর মধ্যে দু-একটি বেছে নিয়ে খেলে শারীরিক উন্নতি হবে।

তথ্যসূত্রঃ

১. সাধনা মুখোপাধ্যায়: সুস্থ থাকতে খাওয়া দাওয়ায় শাকসবজি মশলাপাতি, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, নতুন সংস্করণ ২০০৯-২০১০, পৃষ্ঠা,৩৮-৩৯।

চিত্রের ইতিহাস: প্রবন্ধে ব্যবহৃত চিত্রটি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রি Armmark.

আরো পড়ুন:  চা পানের বহুবিধ উপকারিতা ও অপকারিতা

Leave a Comment

error: Content is protected !!