মানসিক স্বাস্থ্য ও অবসাদ (ইংরেজি: Mental health and exhaustion) আলোচনার আগে স্বাস্থ্য কী সে সম্বন্ধে আমাদের জানা দরকার। স্বাস্থ্য বলতে আমরা শারীরিক সুস্থতা বা রোগমুক্ত জীবনকে বুঝি। ব্যাপক অর্থে শারীরিক সুস্থতার সাথে মানসিক সুস্থতারও প্রয়োজন। মানসিক স্বাস্থ্য দেহ ও মনের সমতা রক্ষা করে। আমরা যে কাজই করি না কেন শরীর ভালো না থাকলে কোনো কিছুই ভালো লাগে না। ফলে কাজে উৎসাহ আসে না, কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়।
যে ব্যক্তি নিজের চাহিদা ও পরিবেশের সাথে সঙ্গতি বজায় রেখে কাজ করতে পারে সেই মানসিক দিক দিয়ে সুস্থ। তখন ঐ কাজই মানসিক স্বাস্থ্য হিসেবে অভিহিত হয়। অতিরিক্ত কাজ বা পরিশ্রমের ফলে একজন লোকের কর্মদক্ষতা সাময়িকভাবে হ্রাস পায়। আবার দীর্ঘক্ষণ একই কাজ করার জন্য একঘেয়েমি আসে ফলে সেই কাজের প্রতি দৈহিক ও মানসিক পরিবর্তন দেখা দেয়। ব্যক্তির মানসিক ও শারীরিক অবস্থার এই পরিবর্তনকে ক্লান্তি বা অবসাদ বলে।
মানসিক স্বাস্থ্য
সাধারণভাবে মানসিক স্বাস্থ্য বলতে “Full and harmonious functioning of the whole personality” কে বোঝায়। খেলাধুলা ও ব্যায়াম যেমন শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখে, তেমনিভাবে মানসিক স্বাস্থ্য আমাদের দেহ ও মনের ভারসাম্য রক্ষায় সহায়তা করে। যে ব্যক্তি নিজের চাহিদা ও পরিবেশের মধ্যে সংগতি বিধান করতে পারে সেই মানসিক দিক থেকে সুস্থ। আর ব্যক্তির মধ্যে মানসিক সুস্থতা বজায় রাখার বা মানিয়ে নেয়ার জন্য যে বিষয়টি কাজ করছে তাই হলো মানসিক স্বাস্থ্য।
শিক্ষার্থীদের জীবনে মানসিক স্বাস্থ্যের ভূমিকা
দেহের কোনো অঙ্গের ক্রিয়া সঠিকভাবে না হলে যেমন দৈহিক অসুস্থতা দেখা দেয়, তেমনি মানসিক প্রক্রিয়া সঠিকভাবে না হলে মানসিক অসুস্থতার সৃষ্টি হয়। খেলাধুলার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর জীবনে প্রতিযোগিতার মনোভাব বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে এই মানসিক অসুস্থতা লক্ষ্য করা যায়। খেলাধুলা শুধু শারীরিক কসরত নয়, এর সাথে জয় পরাজয় বা আনন্দ-বেদনা জড়িত। তবে একজন ক্রীড়াবিদ শারীরিকভাবে সুস্থ থাকে তখনই যখন সে মানসিকভাবে সুস্থ থাকে। কারণ শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা একে অপরের পরিপূরক।
জয়-পরাজয়ে খেলোয়াড়ের প্রতিক্রিয়া
একজন শিক্ষার্থী বা খেলোয়াড় খেলাধুলায় জয়লাভ করলে উফুল্ল হয়, পরবর্তীতে আরও ভালো করার জন্য তার আত্মবিশ্বাস গড়ে ওঠে। তার এই সাফল্য ধরে রাখার জন্য সে প্রশিক্ষণের প্রতি মনোযোগী হয়। এর পিছনে প্রচুর পরিশ্রম ও সময় ব্যয় করে। আবার এরূপ জয়ের ফলে তার মধ্যে নেতিবাচক প্রভাবও পড়তে পারে যেমন- প্রচন্ড আত্মবিশ্বাস, নিজেকে বড় করে দেখা কিংবা অপরের দক্ষতাকে ছোট করে দেখার মনোভাব গড়ে উঠতে পারে। সুতরাং খেলোয়াড়ের বিজয়ী মানসিকতার ভালো বা মন্দ দুধরনের ফলাফলই আসতে পারে। আবার কেউ পরাজিত হলে হতাশার সৃষ্টি হয়, অন্যের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করে। অনেকে আবার মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে খেলাধুলা ছেড়েও দিতে পারে। সুতরাং জয় পরাজয়ের এই স্বাভাবিক ঘটনা সহজভাবে নিতে না পারলে মানসিক চাপের সৃষ্টি হয় এবং তার কাজকর্মে অসংগতি চোখে পড়ে। এ ক্ষেত্রে ক্রীড়া শিক্ষক বা প্রশিক্ষকের বিজয়ী বা বিজিত খেলোয়াড়ের সাথে একত্রে কাজ করে তার মানসিক স্বাস্থ্য বা মানসিক ভারসাম্য রক্ষার সর্বাত্মক চেষ্টা করা প্রয়োজন। শারীরিক সুস্থতার সাথে সামঞ্জস্য রেখে স্বাস্থ্য বিধি মেনে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করলেযে কোনো খেলোয়াড় জীবনে কাঙ্খিত ফল লাভ করতে পারবে।
শারীরিক সুস্থতার উপর মানসিক স্বাস্থ্য নির্ভরশীল বা একে অপরের পরিপূরক। মানসিক স্বাস্থ্য দেহ ও মনের ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য করে। শারীরিক সুস্থতার সাথে সামঞ্জস্য রেখে মানসিক স্বাস্থ্যের যখন উন্নতি হয় কেবল তখনই একজন খেলোয়াড় তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে। মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি না হলে কেউ সর্বোচ্চ সাফল্য অর্জন করতে পারে না। আবার জয়ের ফলে কারোর মধ্যে নেতিবাচক প্রভাবও পড়তে পারে। যেমন, তার মধ্যে আত্মবিশ্বাস বেড়ে গিয়ে নিজেকে বড় করে দেখে। ফলে বিজয়ী খেলোয়াড়ের মানসিকতায় ভালোমন্দ দুই ধরনের মনোভাব সৃষ্টি হতে পারে।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।
খুব ভাল লিখেছেন। পরিচিত কথা গুলোই যেন নতুন করে ভিন্নভাবে তুলে ধরলেন। ধন্যবাদ আপনাকে