সাদা চিনি (ইংরেজি: White Sugar) হচ্ছে এক ধরনের শোধন করা চিনি যা বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান দ্বারা প্রক্রিয়াকৃত। যেহেতু চিনি একটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, এখন বাংলাদেশের সব বাজার এই সাদা চিনি দ্বারা বোঝাই হয়ে আছে। চিনি ছাড়া একদিনও চলে না আমাদের, প্রতিটি বাড়িতে প্রতিদিনই এটির বহুবিধ ব্যবহার হচ্ছে। চাহিদা মেটাতে আমদানি হচ্ছে কোটি কোটি টন।
সারা দুনিয়ার একচেটিয়া ব্যবসায়ীরা কিন্তু বিশুদ্ধ ও স্বাস্থ্যকর চিনি বাজারজাত করছে না। বিখ্যাত সব মোড়কে আমরা চিনির সাথে গ্রহণ করছি তিনটি জিনিষ। সাদা চিনির সাথে আছে তিনটি থেকে চারটি বিষাক্ত উপাদান। আমরা আগেই উল্লেখ করেছি সাদা চিনি হচ্ছে বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান দ্বারা প্রক্রিয়াকৃত। এই প্রক্রিয়া করা হয় ব্লিচিং ও সালফোনেশন পদ্ধতিতে। আসুন চিনি শোধন করা (ইংরেজি: Refine) ও প্রক্রিয়াজাত করার পদ্ধতিটি সংক্ষেপে বুঝে নিই।
চিনির সাথে মিশে থাকা প্রথমটি হচ্ছে সোডিয়াম হাইড্রো সালফাইড বা হাইড্রোজ। এটি চিনিকে শ্বেতাঙ্গ বানিয়ে দেয়। আখের রসের সাথে হাইড্রোজ মিশিয়ে আখের কালো ও বাদামি রঙমিশ্রিত উপাদানগুলো ফেনার সাথে মিশিয়ে পরে ফেনা সরিয়ে দূর করা হয়।
দ্বিতীয় উপাদানটি ক্যালসিয়াম হাইড্রক্সাইড (ঐতিহ্যভাবে বলা হয় স্লেকেড লাইম বা এক ধরনের চুন)। এই ক্যালসিয়াম হাইড্রক্সাইড একটি বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদান। আমরা যখন চিনির তৈরী কোন খাবার গ্রহন করি, তখন এ বিষাক্ত উপাদান আমাদের দেহে প্রবেশ করে। মূলত বাদামি চিনিকে শতকরা ৭০ ভাগ তরল করে এই চুন মেশানো হয়। ৭০ ভাগ তরল এবং আঁশ ও অন্যান্য উপাদান দূর করতে গিয়ে মিষ্টতা কমে যায়।
তৃতীয় উপাদানটি সোডিয়াম সাইক্লামেট বা ঘনচিনি। এই রাসায়নিক, সাধারণ চিনির চাইতে ৫০ গুণ বেশী মিষ্টি। ঘনচিনি দেখতে সাইট্রিক অ্যাসিড ও সোডিয়াম সাইট্রেটের মতো হওয়ায় কাস্টমস আটকাতে ব্যর্থ হয় বেশীরভাগ সময়েই। আগের প্রক্রিয়ায় মিষ্টতা কমে গেছিল, ঘনচিনি আগের সাদা চিনির সাথে আবার মিশিয়ে চিনির মিষ্টতা বাড়ানো হয়। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল-বিএআরসির গবেষণায় দেশের বিভিন্ন বাজার থেকে প্যাকেটজাত ও খোলা চিনির নমুনা পরীক্ষায় সোডিয়াম সাইক্লামেট বা ঘনচিনির অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এই সংক্রান্ত প্রতিবেদন ২০১৯ সালে দেখা গেছে।[১]
চিনি জলীয় বাষ্পের সংস্পর্শে এসে গলে যায়। আর জলীয় বাষ্প শোষণ করার ক্ষেত্রে স্লেকেড লাইম বা ক্যালসিয়াম হাইড্রক্সাইড ভূমিকা নেয়। তবে এটাও শোনা যায় যে, সামান্য পরিমাণে ক্যালসিয়াম হাইপোক্লোরাইট বা ব্লিচিং পাউডারও মেশানো হয়। কারণ ক্যালসিয়াম হাইপোক্লোরাইট জলীয় বাষ্প শোষণ করে।
লাল বা বাদামি চিনির পুষ্টিগুণ
রাসায়নিক এবং পুষ্টির দৃষ্টিকোণ থেকে, সাদা চিনিতে খনিজ পদার্থ যেমন ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, আয়রন এবং ম্যাগনেসিয়াম কম থাকে। তার কারন হচ্ছে গুড়ের মধ্যে থাকা এসব খাদ্য উপাদানকে সাদা চিনিতে সরিয়ে ফেলা হয়। যদিও বাদামি চিনিতে এসব উপাদান কিছুটা হলেও বিদ্যমান থাকে, যদিও তা গুড়ের তুলনায় কম।[২][৩][৪]
বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের ‘আখের চিনি’। খুচরা মূল্য ৭০ টাকা প্রতি কেজি। মাঝে মাঝে প্যাকেট ঘেমে থাকে, মাঝে মাঝে কিছুটা ময়লাও মনে হবে, আখের আঁশও পাওয়া যাবে মাঝে মাঝে। কিন্তু, বাংলাদেশের কৃষকের শ্রমের ফসল এই চিনি। যে চিনি আমাদেরকে বাঁচতে সহায়তা করে।
সাদা চিনির ক্ষতিকর দিক
শুধুমাত্র একটি প্রভাবের কথা দেখুন; ক্যালসিয়াম হাইড্রক্সাইডের অরক্ষিত প্রভাবের ফলে ত্বকের তীব্র জ্বালা, রাসায়নিক পোড়া, অন্ধত্ব, ফুসফুসের ক্ষতি অথবা ফুসকুড়ি হতে পারে।[৫] যাই হোক, একচেটিয়া পুঁজির মুনাফাখোরেরা বিষ বাজারজাত করে লাভবান হন এবং জনগণকে রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত করে মানবসেবা করতে তারাই আবার হাসপাতাল নির্মাণ করেন।
… তো কিভাবে বাঁচবেন ?
কেন বাপু, এত বর্ণবাদী হয়ে বেঁচে থাকবেন কেন?
কেন ধবধবে ফর্সা সাদা চকচকে পরিষ্কার চিনি খেতে হবে?
বেঁচে থাকলে বহুদিন চিনি খেতে পারবেন, মিষ্টিমুখ করবেন ও করাবেন।
বাঁচতে হলে সাদা চিনি পরিপূর্ণ বর্জন করুন।
তথ্যসূত্র
১. লেখকের নামহীন, ” সোডিয়াম সাইক্লামেট মুক্ত হোক চিনি” দৈনিক দেশরূপান্তর, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, https://www.deshrupantor.com/amp/editorial-news/2019/09/05/165653, সংগ্রহের তারিখ ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০
২. Raffaella Procenzano (28 January 2014). “Lo zucchero bianco fa male più dello zucchero grezzo?” (in Italian). Retrieved 30 October 2018.
৩. Anahad O’Connor (12 June 2007). “The Claim: Brown Sugar Is Healthier Than White Sugar”. Retrieved 30 October 2018.
৪. Dario Bressanini (6 April 2009). “Miti culinari 5: le virtù dello zucchero di canna”. Le Scienze Blog (in Italian). Retrieved 30 October 2018.
৫. “MSDS Calcium hydroxide” (PDF). Archived from the original (PDF) on 25 March 2012. Retrieved 21 June 2011.
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।