আকবরের রাজত্বকাল ও রাজ্যবিস্তারের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ সময়

আকবরের রাজত্বকাল হচ্ছে ভারতের মুঘল যুগের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ সময়। শের শাহ মৃত্যুর ফলে পুনরায় একবার দিল্লীর সিংহাসন নিয়ে আফগান সামন্ত-ভূস্বামীদের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। শেষপর্যন্ত ক্ষমতা দখল করেন শের শাহের কনিষ্ঠ পুত্র। তিনি রাজত্ব করেন ১৫৫৪ খ্রীস্টাব্দ পর্যন্ত। এর মত্যুর পরে আবার প্রচণ্ড সংঘর্ষ বাধে, আর তা বাধে সিংহাসনের চারজন দাবিদারের মধ্যে। এই পরিস্থিতির সুযোগ নিলেন হুমায়ন, তিনি এই সময়ে পারস্য থেকে ফিরে এসেছিলেন তুর্কি, পারসিক, আফগান, তুর্কোমান ও উজবেকদের নিয়ে গঠিত এক বহুজাতিক সেনাবাহিনী নিয়ে। সিংহাসনের অন্যান্য দাবিদারের সেনাবাহিনীগুলিকে উৎখাত করে ১৫৫৫ খ্রীস্টাব্দে তিনি দিল্লী দখল করলেন। তবে এবারও তাঁর রাজত্ব ছিল স্বল্পস্থায়ী, কেননা কয়েক মাস পরে মার্বেল পাথরের একটি সিড়ি থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যু ঘটল তাঁর। এবার তেরো বছর বয়সী সম্রাটপুত্র আকবরের অভিভাবক ও রক্ষক তুর্কোমান বৈরাম খাঁ আকবরকে তাড়াতাড়ি সিংহাসনে বসিয়ে দিলেন এবং তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে রাজ্যশাসন করতে লাগলেন।

ওই সময়ে মোগলদের রাজ্য গঙ্গা যমুনার উপত্যকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল, কেননা উত্তরে পাঞ্জাব ও আফগান ভূখণ্ডগুলির সঙ্গে যোগাযোগ গিয়েছিল ছিন্ন হয়ে। মোগল রাজ্যের প্রধান বিপদ হয়ে তখন দেখা দিয়েছিলেন হিমু, তিনি ছিলেন সুর-সুলতানদের একজনের সেনাপতি। নীচ বংশোদ্ভূত হওয়া সত্ত্বেও (হিন্দু, বণিক-পরিবার থেকে এসেছিলেন তিনি) প্রতিভাবান সেনাধ্যক্ষ হিসেবে হিমু খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তিনি দিল্লী দখল করেন এবং রাজা বিক্রমাদিত্য উপাধি নিয়ে নিজেকে দেশের শাসক বলে ঘোষণা করেন। ১৫৫৬ খ্রীস্টাব্দে মোগলদের বিরুদ্ধে পানিপথের অতীব গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধে হিমু আকবরের সেনাবাহিনীর সংখ্যাগরিষ্ঠতা সত্ত্বেও তার পার্শ্বদেশে ভাঙন ধরাতে সমর্থ হন, কিন্তু হঠাৎ একটি তীর তাঁর এক চোখে বিদ্ধ হওয়ায় হাতির পিঠ থেকে পড়ে যান। ফলে সেনাপতিকে রণক্ষেত্রে দেখতে না-পাওয়ায় হিমুর সৈন্যরা পালাতে শুরু করে (ভারতে তখন ভাড়াটে সৈন্যদলের মধ্যে এইটাই ছিল রীতি — বেতন দেয়ার মালিক সেনাপতির মত্যু হলে সৈন্যরাও অবিলম্বে রণক্ষেত্র ছেড়ে পালাত) এবং যুদ্ধে বিজয়ী হন আকবর। বৈরাম খাঁ’র নির্দেশে ওই যুদ্ধক্ষেত্রে দাঁড়িয়েই আকবর তাঁর সেনাপতিদের মধ্যে জমি দান করতে ও খেতাব বিতরণ করতে শুরু করেন। প্রায় পঞ্চাশ বছর দিল্লীতে রাজত্ব করেন আকবর (১৫৫৬ থেকে ১৬০৫ খ্রিস্টাব্দ) এবং এই সময়ে উত্তর-ভারতে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় মোগল-সাম্রাজ্য। আকবর যমুনা নদীর তীরে আগ্রা শহরে রাজধানী স্থাপন করেন।

আকবরের বিজয়-অভিযান:

গোড়ার দিকে আকবরের অভিভাবক বৈরাম খাঁ’র হাতেই ছিল সত্যিকার শাসনক্ষমতা। তিনি আজমীর দখল করেন ও রাজপুতদের হাত থেকে কেড়ে নেন গোয়ালিয়র দুর্গ এবং পঞ্জাবে মোগল-শাসনের প্রতিষ্ঠা করেন। তবে নিজে শিয়া-সম্প্রদায়ের লোক হওয়ায় নিজ সম্প্রদায়ভুক্ত লোকজনের মধ্যে সরকারি উচ্চ পদ ও জমিজায়গা বিতরণ করেন। এর ফলে দরবারের সুন্নি-সম্প্রদায়ভুক্তদের মধ্যে দেখা দেয় প্রবল অসন্তোষ ও শত্রুতা। ১৫৬০ খ্রীস্টাব্দে দরবারের অপর একটি গোষ্ঠী ক্ষমতাদখল করে। অতঃপর বৈরাম খাঁ’কে ‘সম্মানের সঙ্গে মক্কায়’ নির্বাসিত করা হয়, কিন্তু পথিমধ্যে গুজরাটে গুপ্তঘাতকের হাতে তিনি নিহত হন।

আরো পড়ুন:  জালিয়ানওয়ালাবাগ গণহত্যা ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে অন্যতম কুখ্যাত গণহত্যা

এই সময়ে রাষ্ট্রক্ষমতা কিছুকাল কুক্ষিগত থাকে আকবরের ধাত্রীর আত্মীয়স্বজন নিয়ে গঠিত এক উজবেক উপদলের। মালব-রাজ্য এই সময়ে মোগল সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। মালবের রাজা বজ বাহাদুর প্রথমে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান, অবশ্য পরে তিনি আকবরের অধীনে চাকুরি গ্রহণ করেন। তাঁর প্রেমিকা নর্তকী রূপমতী বন্দিদশার চেয়ে মত্যু শ্রেয়জ্ঞান করে আত্মহত্যা করেন। এই বজ বাহাদুর ও রূপমতীর কাহিনী পরে বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক গাথাকাব্যের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।

এর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই অভিভাবক (অস্থায়ী শাসক)-এর কবল থেকে নিজেকে মুক্ত করে আপন হাতে রাজ্যের শাসনভার তুলে নেন আকবর। আঠারো বছরের তরুণ আকবর ছিলেন বুদ্ধিমান, সবলদেহ ও সাহসী; তিনি শিকারপ্রিয় ছিলেন এবং ছিলেন আশ্চর্য এক স্মৃতিশক্তির অধিকারী, শ্রুতিধর পুরুষ। তবে তাঁর শিক্ষকদের প্রাণান্ত চেষ্টা সত্ত্বেও লিখতে বা পড়তে শেখার কোনো আগ্রহ প্রকাশ পায় নি তাঁর মধ্যে। ওই অল্প বয়সেই তিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে একমাত্র হিন্দু-মুসলমানের মিলিত সাহায্যেই ভারত শাসন করা সম্ভব। প্রথমেই তিনি রত হলেন যোদ্ধৃজাতি রাজপুতদের সমর্থন আদায়ে এবং এই উদ্দেশ্যে তাঁদের সঙ্গে একের-পর-এক মৈত্রীচুক্তি করতে ও রাজপুত রাজকন্যাদের বিয়ে করে এই মৈত্রীকে দৃঢ়তর করে তুলতে উদ্যোগী হলেন। ফলে মানসিংহের নেতৃত্বে রাজপুত অশ্বারোহী-বাহিনী এবার যুক্ত হল মোগল সেনাবাহিনীর সঙ্গে। মানসিংহ ছিলেন প্রতিভাবান সেনাধ্যক্ষ এবং অম্বরের রাজার পালিত পুত্র। মুসলমান সম্রাটের কাছে রাজপুতদের একাংশের এই আনুগত্য স্বীকার রক্ষণশীল রাজপুত-মহলগুলিতে অবশ্য বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করল, রক্ষণশীলরা বলতে লাগলেন যে মুসলমান সম্রাটের দরবারে হাজিরা দিয়ে হিন্দুরা নিজেদের অবমাননা করেছেন।

রাজপুত মিত্রদের সাহায্যে আকবর বিদ্রোহী রাজপুত-রাজাগুলিকে দমন করলেন এবং ১৫৬৮ খ্রীস্টাব্দে চিতোর, ১৫৬৯ খ্রীস্টাব্দে রণথর ও পরে রাজপুতানার বেশির ভাগ অঞ্চলই দখল করে নিলেন। একমাত্র মেবারের রানা প্রতাপ সিংহ মুষ্টিমেয় কয়েকজন অনুচর নিয়ে আশ্রয় নিলেন পার্বত্য অঞ্চলে এবং আকবরের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে গেলেন প্রায় পচিশ বছর ধরে।

আকবরের সেনাপতি আসফ খাঁ ইতিপূর্বে রানী দুর্গাবতীর শাসনাধীন বিস্তুত গোল্ডওয়ানা রাজ্য দখল করে নেন। রাজ্যরক্ষার্থে এই রানী নির্ভিকভাবে যুদ্ধ করেন এবং পরাজিত হলে পর ছুরিকাঘাতে আত্মহত্যা করেন। এই সমৃদ্ধ অঞ্চল জয় করে এবং এ-রাজ্যের প্রাক্তন রাজাদের সঞ্চিত অর্থসম্পদ রাজকোষ থেকে লুণ্ঠন করে আসফ খাঁ মনে করলেন নিজেকে স্বাধীন রাজা বলে ঘোষণা করার পক্ষে যথেষ্ট শক্তিসঞ্চয় করেছেন তিনি। এ-উদ্দেশ্যে তিনি পঞ্জাবের বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগ দিলেন। পঞ্জাবে ১৫৬৩ সাল থেকেই বিদ্রোহ ধুমায়িত হয়ে উঠছিল এবং তার নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন আকবরের সেনাধ্যক্ষদের মধ্যে অপরাপর বিচ্ছিন্নতাকামীরা। এই বিদ্রোহীরা অতঃপর লাহোর দখল করলেন এবং কাবুলনিবাসী আকবরের ছোট ভাইকে তাঁদের সুলতান বলে ঘোষণা করলেন। সম্বলের প্রভাবশালী উজবেক গোষ্ঠী-প্রধান বা তথাকথিত ‘মির্জা’রাও যোগ দিলেন এই বিদ্রোহীদের সঙ্গে। এরা সবাই ছিলেন আকবরের দরবারে নানা রাজপুত হিন্দু রাজার স্থানলাভের বিরোধী। আকবরের সৌভাগ্যবশত এই বিদ্রোহীরা নিজেদের নানা গোষ্ঠীর মধ্যে সময়মতো ও যথাযথ সংযোগস্থাপনে অসমর্থ হওয়ায় ১৫৬৭ খ্রীস্টাব্দে সামন্ত-ভূস্বামীদের এই বিদ্রোহ দমন করা সম্ভব হয়। “মির্জা’রা অতঃপর পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নেন গুজরাটে ।

আরো পড়ুন:  মোগল সাম্রাজ্যে জাহাঙ্গীরের রাজত্বকাল ও রাজ্য বিস্তার

গুজরাটে ১৫৩৭ খ্রীস্টাব্দে পোর্তুগিজরা বিশ্বাসঘাতকতা করে বাহাদুর শাহকে হত্যা করার পর বেশ কিছুদিন ধরে তুর্কি, আফগান, আবিসিনীয়, ইত্যাদি বিভিন্ন নৃকুল-গোষ্ঠীর ভিত্তিতে গঠিত নানা সামন্ত-চক্রগুলির মধ্যে ক্ষমতার লড়াই চলে। ‘মির্জা’রাও গুজরাটে আসার পর এই লড়াইয়ে লিপ্ত হন, কেননা ক্ষমতালাভের লিপ্সা তাঁদেরও বড় কম ছিল না। এই সমস্ত সামন্ত-চক্রের বিরুদ্ধে আকবরের সেনাবাহিনী প্রেরিত হয় এবং ১৫৭২ খ্রীস্টাব্দে মোগল-সৈন্য গুজরাট-রাজ্য অধিকার করে। তবে মোগল-বাহিনী গুজরাট ছেড়ে আগ্রায় ফিরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ‘মির্জা’রা ফের একবার বিদ্রোহ করেন, ফলে মোগল সেনাবাহিনীও বাধ্য হয় নতুন করে গুজরাট দখল করতে।

বঙ্গের মুসলমান সুলতান নিজেকে স্বাধীন বলে ঘোষণা করায় (যদিও তিনি আকবরের সামন্তরাজন্য বলে গণ্য ছিলেন বঙ্গকে দমন করতে মোগল-বাহিনীর দু’বছরেরও বেশি সময় লাগে। অতঃপর নতুন-নতুন রাজ্যজয়ের ব্যাপারে আকবর কিছুকাল ক্ষান্তি দেন। ওই সময়ে তিনি মনোযোগ দেন তাঁর ইতিমধ্যে-অর্জিত প্রকাণ্ড সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরীণ প্রশাসন-সম্পর্কিত নানা ব্যাপারে।

নতুন বিজয়-অভিযান

১৫৮০’র দশকে আকবর ফের একবার নতুন-নতুন রাজ্যজয়ে মন দিলেন, তবে এবার তাঁর প্রধান লক্ষ্য ছিল ইতিমধ্যে দঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত তাঁর সাম্রাজ্যের সীমানা বিস্তার। ১৫৮৬ খ্রীস্টাব্দে, কাশ্মীর প্রদেশে সিংহাসনের বিভিন্ন দাবিদারের খুচিয়ে-তোলা নানা বিদ্রোহের সুযোগ গ্রহণ করে আকবর সেনাবাহিনী পাঠিয়ে কাশ্মীর জয় করে নিলেন। তবে এই পাহাড়ি দেশটিতে তাঁর আধিপত্য কায়েম রাখার জন্যে দ্বিতীয় বার তাঁকে সেনাবাহিনী পাঠাতে হলো সেখানে। ১৫৮৯ খীস্টাব্দে কাশ্মীরকে তাঁর সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করে নিলেন আকবর এবং সেখানে দ্রব্যসামগ্রীতে (পশম ও জাফরানে) করদানের ব্যবস্থা প্রবর্তন করলেন। কাশ্মীরের শীতল আবহাওয়া ও সেখানকার হ্রদগুলির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছিলেন আকবর। অতঃপর প্রতিবছর গ্রীষ্মকালটা তিনি কাশ্মীরে কাটাতে শুরু করলেন।

১৫৯০ খ্রীস্টাব্দে আকবর বৈরাম খাঁর ছেলে ও তাঁর রক্ষণাধীন আন্দর রহিমকে থাট্টা (সিন্ধু দেশে) জয় করতে পাঠালেন! থাট্রার প্রাক্তন শাসক অতঃপর হয়ে দাঁড়ালেন আকবরের সভাসদ। ১৫৯২ খ্রীস্টাব্দে আকবর ওড়িষ্য দখল করলেন ও সে-রাজ্যটিকে যুক্ত করে দিলেন তাঁর শাসনাধীন বাংলা-অঞ্চলের সঙ্গে। অতঃপর ১৫৯৫ খ্রীস্টাব্দে বেলুচিস্তান জয় করলেন তিনি এবং পারস্যের কাছ থেকে কান্দাহার কেড়ে নিলেন। এই সময়ে বা এর কিছু আগে থেকেই মোগল বাহিনী দাক্ষিণাত্যে হানা দিতে শুরু করেছিল। ১৫৮৩ খ্রীস্টাব্দে মোগল সেনা আহমদনগর নামে দাক্ষিণাত্যের দুবলতম সুলতানশাহী ও খুবই ছোট একটি রাজ্যের রাজধানী অবরোধ করে। পরিশেষে ১৫৯৯ খ্রীস্টাব্দে আহমদনগরের সুলতান মোগলদের সার্বভৌমত্ব মেনে নেন ও সামন্ত রাজন্যে পরিণত হন। তবে তাঁর শাসিত ভূখণ্ডের অধিকাংশই এবং দৌলতাবাদও সরাসরি মোগল-সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। অতঃপর স্বয়ং আকবরের নেতৃত্বে মোগল-সেনাবাহিনী আসিরগড় অবরোধ করে থাকে দু’বছরের জন্যে। আহমদনগর থেকে ইতিপূর্বে বিচ্ছিন্ন ও স্বাধীন, ছোট্ট খান্দেশ-সুলতানশাহীর অন্তর্ভুক্ত ছিল এই অত্যন্ত সুরক্ষিত দুর্গটি। কিন্তু এই দুর্গেও আত্মসমর্পণ করে ১৬০১ খ্রীস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে। এই সমস্ত যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে মোগল-সেনাবাহিনীর দুর্বলতাও পরিস্ফুট হয়ে ওঠে। ওই বাহিনীর সেনাধ্যক্ষদের মধ্যে সর্বস্ব পূর্ণ করে যুদ্ধ করার ইচ্ছায় ভাঁটা পড়ায় এই দুর্বলতা দেখা দেয়। ইতিমধ্যে আরাম ও বিলাসের জীবনে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়ায় যুদ্ধের সময়েও তাঁরা সর্বত্র সঙ্গে করে অসংখ্য গাড়িবোঝাই ব্যক্তিগত বিলাসের উপকরণ নিয়ে ঘুরতেন, ফলে সমগ্র বাহিনীর দুত নড়াচড়ার ও রণকৌশল প্রয়োগের পক্ষে তা বাধা হয়ে দেখা দিত। এছাড়া ওই সেনাধ্যক্ষরা যুদ্ধে জয়লাভের চিন্তার চেয়ে খানাপিনার চিন্তাতেই সময় ব্যয় করতেন বেশি।

আরো পড়ুন:  আগস্ট আন্দোলন হচ্ছে ১৯৪২ সালের ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রতারণাপূর্ণ আন্দোলন

১৬০৫ খ্রীস্টাব্দে আকবরের মত্যু হল। অতঃপর সিংহাসনে বসলেন তাঁর পুত্র সেলিম, জাহাঙ্গীর উপাধি নিয়ে। আকবরের জীবনের শেষদিকে সেলিম তাঁর পিতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন এবং এলাহাবাদে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন স্বাধীন সুলতান হিসেবে। তবে সেলিমের রাজত্বকালে আগ্রাই রয়ে গিয়েছিল (সাম্রাজ্যের) রাজধানী হিসেবে।

তথ্যসূত্র:

১. কোকা আন্তোনভা, গ্রিগরি বোনগার্দ-লেভিন, গ্রিগোরি কতোভস্কি; অনুবাদক মঙ্গলাচরণ চট্টোপাধ্যায়; ভারতবর্ষের ইতিহাস, প্রগতি প্রকাশন, মস্কো, প্রথম সংস্করণ ১৯৮২, পৃষ্ঠা, ৩১৪-৩১৭ ও ৩৩৪।  

Leave a Comment

error: Content is protected !!