প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নৌযুদ্ধ তৎপরতা মূলত অবরোধ দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছিল

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নৌযুদ্ধ তৎপরতা (ইংরেজি: Naval warfare of First World War) মূলত অবরোধ দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছিল। মিত্র শক্তিগুলি, তাদের বৃহত্তর নৌবহর এবং আশেপাশের অবস্থানের দরুন জার্মানি এবং অন্যান্য কেন্দ্রীয় শক্তিগুলির বিরুদ্ধে তাদের অবরোধ অনেকাংশে সফল করেছিল। অপরপক্ষে কেন্দ্রীয় শক্তিগুলি সেই অবরোধ ভাঙ্গার চেষ্টা করেছিল, বা সাবমেরিন এবং বাণিজ্য হামলাকারী জাহাজের মাধ্যমে একটি কার্যকর প্রতি-অবরোধ স্থাপনের চেষ্টা করেছিল যদিও শেষ পর্যন্ত সেগুলো ব্যর্থ হয়। প্রধান নৌবহরের ক্রিয়াকলাপগুলি যুদ্ধে কম নির্ধারক ছিল।

আটলান্টিকের ত্রাস জার্মান ইউবােট

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত ব্রিটিশ নৌবাহিনীকে ইউরােপের প্রতিটি দেশ সমীহ করে চলতে। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে দেখা যায় এক ভিন্ন চিত্র। ১৯১৪ সালের দিকে উদ্ভাবিত জার্মান ইউবােট এক্ষেত্রে হঠাৎ করেই আটলান্টিকের অতলে ত্রাস সৃষ্টি করে। জার্মান শব্দ ‘আন্ডারসিবােটভাভি’ থেকেই এ ইউবােটের নামকরণ যা পানির তলদেশ দিয়ে আক্রমণ চালাতে অনেক কার্যকর একটি সাবমেরিন। ব্রিটেন জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘােষণার ঠিক দুদিন পর তৎপরতা শুরু করে এ ইউবােট। ১৯১৪ সালের ৬ আগস্ট হােলিগােল্যান্ডে অবস্থিত নৌঘাঁটি থেকে ব্রিটিশ রয়্যাল নেভির ওপর আক্রমণ শানাতে যাত্রা করে ১০টি জার্মান ইউ বােট। ইতিহাসে প্রথমবারের মত সাবমেরিন টহল শুরু হলে মাইনের আঘাতে কয়েকটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে ১৯১৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর থেকে সফলতার মুখ দেখে ইউবােটগুলাে। লেফটেন্যান্ট অটো হার্সিং ইউ-২১ থেকে টর্পেডাে নিক্ষেপ করে ব্রিটিশ ক্রুজার পাথফাইন্ডারকে ডুবিয়ে দেয়। এতে ২৫৯ জন ক্রুর কেউই প্রাণরক্ষা করতে পারেনি। এদিকে ২২ সেপ্টেম্বর লেফটেন্যান্ট অটো ওয়েডিগেন ইউ-৯ তিনটি ব্রিটিশ ক্রুজারে প্রাণঘাতী হামলা চালান। এতে তিনটি ব্রিটিশ ক্রুজার আবুকির, ক্রেসি ও হগ পুরােপুরি পানিতে ডুবে যায়। মাত্র আধঘণ্টার এ লড়াইয়ে প্রায় ১ হাজার ৪৬০ জন ব্রিটিশ নাবিক প্রাণ হারায়। এরপর আরাে কয়েকটি হামলা চালিয়ে এককথায় আটলান্টিকের ত্রাস হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে জার্মান ইউবােট। 

আরো পড়ুন:  প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণ অর্থনৈতিক দ্বন্দ্ব, সামরিকবাদ, সাম্রাজ্যবাদ ও জাতীয়তাবাদের বিকাশ

জুটল্যান্ড রণাঙ্গন 

উত্তর সাগরের জুটল্যান্ড রণাঙ্গনে জার্মান বাহিনীর মুখােমুখি হয় ব্রিটিশ-আইরিশ যৌথ বাহিনীর একটি দল। ১৯১৬ সালের ৩১ মে থেকে ১ জুন পর্যন্ত চলতে থাকা এ যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত কৌশলগত বিজয় লক্ষ করা যায় জার্মান বাহিনীর। স্যার জন জোলিকোয়ি ও স্যার ডেভিড বিটির নেতৃত্বে বিশাল বাহিনী নিয়ে সমবেত হয় ইঙ্গো-আইরিশ সেনারা। তাদের সাথে ২৮টি যুদ্ধজাহাজ, ৮ টি ব্যাটল ক্রুজার, ৮টি সাঁজোয়া ক্রুজার, ২৬টি হালকা ক্রুজার ও ৭৮টি ডেস্ট্রয়ার ছিল। এদিকে ১৬টি যুদ্ধজাহাজ, ৫টি ব্যাটল ক্রুজার ড্রিডনট, ১১টি হালকা ক্রুজার ও ৬১টির মত টর্পোডাে বােট নিয়ে রেইনহার্ড শীয়ার ও ফ্রাঞ্চ ফন হিপারের নেতৃত্বে প্রতিরােধ যুদ্ধ শুরু করে জার্মানরা। তবে এবারের যুদ্ধে জার্মান ইউবােটকে অকার্যকর রাখাটাই ছিল ব্রিটিশ বাহিনীর বড় কৃতিত্ব।

১. মো. আদনান আরিফ সালিম, আধুনিক বিশ্বের ইতিহাস, [Pdf]. বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, জানুয়ারি ২০১৯. সানজিদা মুস্তাফিজ ও সুমা কর্মকার. সম্পা. পৃষ্ঠা ৪১-৪২; Retrieved from http://www.ebookbou.edu.bd/wp/OS/hsc4_2.php#hsc2855

Leave a Comment

error: Content is protected !!