দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বা বিশ্ব যুদ্ধ দ্বিতীয় (প্রায়শই ইংরেজিতে: Second World War বা সংক্ষিপ্তরূপে WWII বা WW2), হচ্ছে একটি বিশ্বযুদ্ধ যা ১৯৩৯ থেকে ১৯৪৪ সাল পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। সমস্ত মহাশক্তিশালী দেশসহ বিশ্বের সবগুলো দেশের অধিকাংশ— মিত্রশক্তি এবং অক্ষশক্তি নামে অবশেষে দুটি বিরোধী সামরিক জোট গঠন করেছিল। সমগ্র যুদ্ধের একটি অবস্থার উত্থান হয়েছিল, যেখানে সরাসরি ৩০টিরও বেশি দেশের ১০ কোটিরও বেশি লোক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল। বেসামরিক এবং সামরিক সংস্থার মধ্যে পার্থক্যকে ঝাপসা করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রধান অংশগ্রহণকারীরা তাদের সম্পূর্ণ অর্থনৈতিক, শিল্প, এবং বৈজ্ঞানিক ক্ষমতা যুদ্ধ প্রচেষ্টার পিছনে ব্যয় করে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ হচ্ছে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে মারাত্মক সংঘাত। এই মহাসমরে ৭ থেকে সাড়ে ৮ কোটি লোক হতাহত হয়েছিল, যাদের বেশিরভাগই ছিলো সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং চীনের বেসামরিক মানুষ। এই হতাহতের মধ্যে গণহত্যাকাণ্ড, হলোকাস্টের গণহত্যা, কৌশলগত বোমা হামলা, অনাহার ও রোগের মাধ্যমে পূর্বপরিকল্পিত হত্যা এবং এই যুদ্ধেই কেবল পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার হয়েছিল।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর প্যারিস শান্তি সম্মেলন প্রকৃত অর্থে ইউরােপের শান্তি আনতে পারেনি। জার্মানির ওপর জোরপূর্বক চাপিয়ে দেয়া ভার্সাই চুক্তির অপমানজনক শর্তগুলােকে সামনে রেখে আরেকটি বিশ্বযুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকে তারা।
ইতিহাস জয়ীর পক্ষে, পরাজিত শক্তির ক্ষেত্রে সবকিছু হয় নেতিবাচক এ কথাটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাসের ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম মহাসত্য। বিশেষ করে প্রচলিত ইতিহাসে জার্মান নেতা হিটলার এবং তার মিত্র ইতালি ও জার্মানির ভূমিকাকে যেভাবে উপস্থাপন করা হয় সেখানে মূল ঘটনা অনেকটাই বাদ পড়ে যায়। পরস্পর আক্রমণ প্রতি আক্রমণের প্রচলিত রীতি বাদ দিলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিছক একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। এক্ষেত্রে প্রচলিত ঐতিহাসিক কাহিনীগুলােতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বলতে অক্ষশক্তি ও জার্মান নেতা হিটলারের পৈশাচিক রুদ্রমূর্তি নানা ঘটনার ঘনঘটায় বার বার উপস্থাপন করা হয়েছে। এসব ঘটনার প্রায় প্রতিটিই পরিস্থিতি বিচারে অর্ধসত্য এবং অনেক ক্ষেত্রে অসত্যও বটে। তাই প্রচলিত ইতিহাসের এ বর্ণনাগুলােকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বিষয়ক আলােচনায় পুনঃপাঠ ও তার কার্যকারণ সম্পর্কভিত্তিক আলােচনা করা জরুরি।[১]
বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে বিশ্বজুড়ে এমন কিছু ঘটনা ঘটে যা নতুন করে আরেকটি যুদ্ধে জড়াতে প্রণােদিত করে বিশ্বনেতাদের। বিশেষ করে জার্মানির জন্য অপমানজনক ভার্সাই চুক্তির পাশাপাশি প্যারিস শান্তি সম্মেলনের ব্যর্থতা আরেকটি যুদ্ধের পথ করে দেয়। দুটি বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়কালের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে গ্রেট ডিপ্রেশন তথা মহামন্দাকেও। তাই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমি ও কারণ বােঝার ক্ষেত্রে দুই বিশ্বযুদ্ধের অন্তর্বর্তীকালীর ইউরােপের ইতিহাসও বেশ গুরুত্বপূর্ণ।[১]
রণাঙ্গনে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের চেয়ে অনেক উন্নত অস্ত্রের ব্যবহার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রাণহানির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। বহুলাংশে। এই বিশ্বযুদ্ধ দেশ থেকে দেশ ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল মহাদেশ থেকে মহাদেশে। অন্যদিকে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ সাগরতল, মহাসাগর এমনকি অন্তরীক্ষেও চলেছিল প্রাণঘাতী সংঘাত। ৬১ দেশের প্রত্যক্ষ পরােক্ষ অংশগ্রহণে এ যুদ্ধ চলেছিল প্রায় ৬ বছরের মত। লিটল বয় ও ফ্যাটম্যান পরামানবিক বােমা নিক্ষেপের মাধ্যমে বিশ্ব প্রত্যক্ষ করেছে মৃত্যুর তাণ্ডবলীলা। ১৯৪৫ সালে জার্মানির আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে এ যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটেছিল।
তথ্যসূত্র
১. মো. আদনান আরিফ সালিম, আধুনিক বিশ্বের ইতিহাস, [Pdf]. বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, জানুয়ারি ২০১৯. সানজিদা মুস্তাফিজ ও সুমা কর্মকার. সম্পা. পৃষ্ঠা ৭০; Retrieved from http://www.ebookbou.edu.bd/wp/OS/hsc4_2.php#hsc2855
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।