বিজেপি ভারতের জনগণ, গণতন্ত্র ও মানবতা বিরোধী সংগঠন

বিজেপি বা ভারতীয় জনতা পার্টি (হিন্দি: भारतीय जनता पार्टी) হচ্ছে ভারতের জনগণ, গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও মানবতার শত্রু এক সন্ত্রাসবাদী গণহত্যাকারী নরপিশাচদের সংগঠন। এটি জনসংঘ তথা ভারতীয় জনসংঘের পরিবর্তিত বর্তমান নাম। বিজেপি ভারতের কর্পোরেট টাটা-বিড়লা-বাজাজ-আদানি-আম্বানিদের প্রধান রাজনৈতিক ভিত্তি। যেমন ২০১৮-২০১৯ সময়ে বিজেপি বিভিন্ন কর্পোরেট থেকে ৪৭৩ কোটি টাকার অনুদান পেয়েছিল। টাটা গ্রুপের মালিকানাধীন একটি ট্রাস্ট, যেটির নাম প্রগ্রেসিভ ইলেক্টোরাল ট্রাস্ট,-এর কাছ থেকে পেয়েছিল ৩৫৬ কোটি রূপী টাকা যা বিজেপির নেয়া মোট অনুদানের ৭৫ শতাংশ।[১]

জনসংঘের প্রতিষ্ঠাতা শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি সময়ে হিন্দু মহাসভা পরিত্যাগ করেন। সে সময়ে তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। দিল্লিতে ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে জওহরলাল নেহরু-লিয়াকত আলি চুক্তির প্রতিবাদে তিনি মন্ত্রিত্বে ইস্তফা দেন। তাঁর নেতৃত্বে ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দের গোড়ায় প্রাদেশিক ভিত্তিতে পশ্চিমবঙ্গ ও পাঞ্জাবে জনসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পিছনে ছিল রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের জোরালো সমর্থন। ক্রমে ভারতের অন্যান্য প্রদেশেও প্রাদেশিক সংঘ গড়ে ওঠে। ওই বছরের ২১ অক্টোবর বিভিন্ন প্রাদেশিক সংঘের সমন্বয়ে ভারতীয় জনসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়। উদ্বোধন সম্মেলনে শ্যামাপ্রসাদ ঘোষণা করেন যে ধর্মরাজ্য অর্থাৎ আইনের শাসন গড়ে তোলাই সংঘের অভীষ্ট বস্তু।[২]

ভারতে ১৯৫১-৫২ খ্রিস্টাব্দের সাধারণ নির্বাচনে ভারতীয় জনসংঘ চারটি সর্বভারতীয় দলের অন্যতম হিসেবে স্বীকৃতি পায়। ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দের ২৩ জুন শ্যামাপ্রসাদের মৃত্যুতে সংঘ বিশেষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সংঘের উপর রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের আধিপত্যের প্রশ্ন দলের ভিতর দীর্ঘকালের একটি বিতর্কের বিষয়। সেইসুত্রে ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে মৌলিচন্দ্র শর্মা তার সমর্থকদের নিয়ে দল ত্যাগ করে। ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে জম্মুতে পণ্ডিত প্রেমনাথ ডোগরার নেতৃত্বে প্রজা পরিষদ জনসংঘের সঙ্গে যুক্ত হয়। দক্ষিণ ভারতে সংঘের অস্তিত্ব ছিল নগণ্য। ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বরে সংঘের চতুর্দশ বার্ষিক সম্মেলন কালিকটে অনুষ্ঠিত হবার পর দক্ষিণ ভারতে সংঘের জনপ্রিয়তা দৃঢ়মূল হতে শুরু করে। পরের বছর সংঘের উপর প্রচণ্ড আঘাত পড়ে যখন দলের দীর্ঘকালের সংগঠক ও সাধারণ সচিব দীনদয়াল উপাধ্যায়ের জীবনাবসান ঘটে। উপাধ্যায় দলের সাংগঠনিক রদবদলের সঙ্গে চেয়েছিলেন রাষ্ট্রীয় স্বয়সেবক সংঘের আধিপত্য থেকে মুক্তি। 

পাঞ্জাবের হোসিয়ারপুর জেলায় প্রকাশ দেব এবং মনিলাল শর্মা ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে দল ছেড়ে স্বতন্ত্র জনসংঘ নামে একটি দল গঠন করেন। পরের বছর অকালি দলের সঙ্গে রাজ্য জনসংঘের মিতালির প্রতিবাদে এবং হিন্দি ভাষার স্বার্থে ফকিরচাঁদ আগরওয়াল দল থেকে ইস্তফা দিয়ে দ্বিতীয় স্বতন্ত্র জনসংঘ সৃষ্টি করেন। ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে উত্তরপ্রদেশে সংঘের বিশিষ্ট নেতা আর ভি কাপুর স্বয়ংসেবকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন। একই কারণে বিহারের বিশিষ্ট নেতা কালিকানন্দন দল থেকে ইস্তফা দিয়ে রাষ্ট্রীয় জনসংঘ গঠন করেন। 

দলের রাজনৈতিক কৌশলের প্রশ্নে বিশেষ করে ১৯৬৭ খ্রিস্তাব্দের সাধারণ নির্বাচনে কমিউনিস্টদের সঙ্গে জোট বাঁধার বিরুদ্ধে সোচ্চার হন জনসংঘের অন্যতম বিশিষ্ট নেতা বলরাজ মাধোক; বস্তুত সেটা ছিল সে বছরে স্বতন্ত্র দল ও ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে নির্বাচনে কংগ্রেস (স) দলের সঙ্গে মোর্চার অন্যতম অঙ্গ। দলের তাতে ক্ষতি ছাড়া লাভ কিছু হয়নি। বলরাজকে ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে ওয়ার্কিং কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়। পরে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। তিনি ক্ষমতাশালী অটলবিহারী বাজপেয়ী গোষ্ঠীর উপর দোষারোপ করেন। মাধোকও রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবকদের একটা দায় হিসেবে দেখতেন। ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে জনসংঘ জয়প্রকাশ নারায়ণের নেতৃত্বে বিহারে বিধানসভার পুনর্নির্বাচনের দাবির সমর্থনে দলীয় সদস্যদের পদত্যাগের নির্দেশ দেয়। সদস্যদের একাংশ সেই নির্দেশ অমান্য করে।

১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে গণশত্রু ইন্দিরা গান্ধীর সরকার বিগত বছর দুয়েকের এমার্জেন্সি আদেশ প্রত্যাহার করে সাধারণ নির্বাচনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলে জয়প্রকাশের নেতৃত্বে বিভিন্ন অকমিউনিস্ট দল, যথা কংগ্রেস (স), লোকদল ও সোসালিস্ট পার্টির সঙ্গে ভারতীয় জনসংঘ জনতা পার্টি নামে নতুন একটি দলে মিশে যায়। নির্বাচনে জনতা পার্টির অন্তর্ভুক্ত জনসংঘীরা লোকসভায় অন্যান্যদের তুলনায় সবচেয়ে বেশি আসন পায়। অবশ্য সব দলই তাদের স্বতন্ত্র সত্তা জনতা পার্টিতে মিশিয়ে দিয়েছিল। ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিলে জনতা পার্টির কার্যনির্বাহী সমিতি পার্টির সদস্যদের দ্বৈত দলীয় সদস্যপদ অর্থাৎ সদস্যদের অন্য কোনো দলের সদস্যপদে থাকার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। কিন্তু পূর্বতন জনসংঘীরা অধিকাংশই তাঁদের রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সদস্যপদ বজায় রাখেন। এই নিয়ে জনতা পার্টিতে তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি হয়। শেষাবধি ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে জনসংঘীরা জনতা পার্টি থেকে সবাই একসঙ্গে বেরিয়ে এসে ভারতীয় জনতা পার্টি (সংক্ষেপে বিজেপি) গঠন করেন। পার্টির সভাপতি হন অটলবিহারী বাজপেয়ী।

দলের ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দের নিবাচনী ইস্তাহার এবং সারনাথ অধিবেশনের (১৯৯২) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জাতীয় অখণ্ডতা, মূল্যবোধভিত্তিক গণতন্ত্র ও রাজনীতি, প্রত্যক্ষ (পজিটিভ) হিন্দুত্ববাদী ধর্মনিরপেক্ষতা এবং গান্ধীবাদী নিপীড়ন বিজেপি-র লক্ষ্য। জাতীয় ঐতিহ্য এবং গান্ধী ও দীনদয়ালের ভাবধারায় অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিধি-ব্যবস্থার নবরূপায়ণ তার আদর্শ। স্বরাজ ও স্বদেশি প্রত্যয়ের উপর তারা গুরুত্ব আরোপ করে। বিজেপি-র দৃষ্টিতে সারা ভারতের জাতি, বর্ণ, ধর্ম নির্বিশেষে জাতীয় সুসংবদ্ধতার অন্তর্নিহিত মূল সুর হলো হিন্দুত্ব। বিজেপি-র ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলির অন্যতম হলো আরএসএস, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বজরং দল ও ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ। 

ভারতীয় সন্ত্রাসবাদ বিস্তারে বিজেপি

বিজেপির চার সন্ত্রাসবাদী নেতা হচ্ছে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, অটলবিহারী বাজপেয়ী, লালকৃষ্ণ আদভানী এবং নরেন্দ্র মোদী। লালকৃষ্ণ আদভানী ১৯৮৪ সালে দলের সভাপতি হবার পর অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণের বিষয়টিকে বিজেপি প্রথমাবধি হিন্দু জনচিত্তে প্রভাব বিস্তারের জন্য প্রাধান্য দিয়ে এসেছে। ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বরে বাবরি মসজিদ ধ্বংসে বিজেপি-কংগ্রেস এক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করে, যদিও চারটি রাজ্যে বিজেপি সরকার ভেঙে দিয়ে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করে তৎকালীন বর্বর কংগ্রেস সরকার।

১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিলে দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সরিস্কাতে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে বিজেপির রণকৌশল পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে হিন্দুত্ব ও রামজন্মভূমির উপর কেবল নির্ভর করে জাতপাত ও নিম্নবর্গের মানুষের স্বার্থের উপর জোর দেওয়া হয়। ওই বছরের ডিসেম্বরে দলের নেতৃবর্গ প্রগতিশীল জাতীয়তাবাদ ও প্রকৃত ধর্মনিরপেক্ষতার সঙ্গে আরএসএস অনুসৃত স্বদেশি মতাদর্শের অর্থনৈতিক বিষয়াদির সামঞ্জস্যের প্রশ্ন তোলেন। গ্যাট চুক্তির সমালোচনা, একচেটিয়া বাণিজ্য ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের অনুপ্রবেশ রদ করার সঙ্গে কারিগরি বিদ্যার উন্নয়ন, বিকেন্দ্রীকরণ, দুর্নীতি নিবারণ এবং সর্বোপরি গান্ধীবাদী অন্ত্যোদয় আদর্শের উপর জোর দেওয়া হয়। হিন্দুত্ব ও জাতীয়তাবাদের সংমিশ্রণে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ত্রিমুখী চিহ্ন বিশিষ্ট ত্রিশূল ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয়। ত্রিশুলের তিনটি মুখ হলো নিরাপত্তা, জাতীয় সমন্বয় এবং স্বদেশী হিন্দুত্ববাদী ভাবধারা।

উচ্চবর্ণের দল হিসেবে বিবেচিত বিজেপি ভারতের সামাজিক প্রেক্ষাপটে নিম্নবর্ণের মানুষদের নিপীড়নকারী একটি বেনিয়া প্রভাবিত দল। কর্ণাটক রাজ্যের নির্বাচনে বিজেপির আংশিক সাফল্য দলকে উদ্দীপিত করে। জনপ্রিয়তা অর্জনের তাগিদে রাম রোটি ও ইনসাফ ছেড়ে ছয় রাজ্যের নির্বাচনে (১৯৯৫) রোটি নিমক আউর পানি ছাড়াও নানা ধরনের আর্থিক ও জীবনযাত্রার উন্নতির প্রতিশ্রুতি দেয় বিজেপির কর্মসমিতি। তার আগে পানাজিতে আয়োজিত জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে দলিত, উপজাতি ও পশ্চাৎপদ সম্প্রদায় সমুহের স্বার্থ-সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি নির্বাচনে ফলপ্রসূ হয়। ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে বোম্বাইয়ের উপকণ্ঠে ভিররে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে নির্বাচনে সাফল্য অর্জনের অনুকূল যাবতীয় প্রতিশ্রুতি নির্বাচকমণ্ডলীর কাছে তুলে ধরার সিদ্ধান্ত হয়। এজন্য বিজেপি-র মুসলিম সম্প্রদায়কে তোষণ করার নীতি সংঘ পরিবারের মূল সংস্থা আরএসএস-কে শঙ্কিত করে তোলে। বিশেষ করে মুসলিম সম্প্রদায়কে বিজেপি-র ত্রিবিধ ‘T’ নামক সুবিধাদির প্রতিশ্রুতি। যথা তালিম (শিক্ষা), তনজিম (সংগঠন) এবং তিজরত (ব্যবসায় ও কর্মসংস্থান)। দিল্লি, রাজস্থান, গুজরাত ও মহারাষ্ট্র (মোর্চা) রাজ্যে ক্ষমতাসীন বিজেপি লোকসভার প্রধান বিরোধী দল হিসাবে অধিষ্ঠিত। ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠেয় লোকসভার নির্বাচনে বিজেপি বিকল্প সরকার গঠনের অভিলাষী।

এনডিএ সরকার (১৯৯৮-২০০৪)

আঞ্চলিক দলগুলির একটি জোট ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করেছিল, কিন্তু এই গ্রুপিং স্বল্পস্থায়ী ছিল এবং ১৯৯৮ সালে মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বিজেপি ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (NDA) নামে একটি জোটের নেতৃত্বে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল, যার মধ্যে বিদ্যমান ছিল সমতা পার্টি, শিরোমণি আকালি দল, শিবসেনা ছাড়াও সর্বভারতীয় আন্না দ্রাবিড় মুনেত্র কাজগম (এআইএডিএমকে) এবং বিজু জনতা দল-এর মতো সহযোগীরা৷ এই আঞ্চলিক দলগুলির মধ্যে, শিবসেনাই একমাত্র ছিল যার আদর্শ ছিল বিজেপির মতো; উদাহরণস্বরূপ, অমর্ত্য সেন জোটকে একটি “অ্যাডহক” বা “বিশেষ উদ্দেশ্যে গঠিত” গ্রুপিং বলেছেন। তেলুগু দেশম পার্টির (টিডিপি) বাইরের সমর্থনে এনডিএ সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়েছিল এবং বাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ফিরে আসেন। যাইহোক, ১৯৯৯ সালের মে মাসে জোট ভেঙে যায় যখন AIADMK-এর নেত্রী, জয়ললিতা, তার সমর্থন প্রত্যাহার করে নেন, এবং আবার নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

ইতিহাস সম্পর্কে একটি নৃত্য আলেখ্য দেখুন

১৩ অক্টোবর তারিখে এনডিএ, এআইএডিএমকে ছাড়া, সংসদে ৩০৩টি আসন জিতেছিল এবং এইভাবে একটি পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। বিজেপি দলের তখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ১৮৩ জন সাংসদ। বাজপেয়ী তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন; আদভাণী উপপ্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হন। এই এনডিএ সরকার তার পূর্ণ মেয়াদ পাঁচ বছর স্থায়ী হয়েছিল। এর নীতি এজেন্ডায় প্রতিরক্ষা এবং সন্ত্রাসবাদিতার পাশাপাশি নয়া-উদারনৈতিক অর্থনৈতিক নীতিগুলির উপর আরও সহযোগীতার অবস্থান অন্তর্ভুক্ত ছিল।

২০০১ সালে, তৎকালীন বিজেপি সভাপতি বাঙ্গারু লক্ষ্মণ প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কাছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য হাতে ধরা থার্মাল ইমেজার কেনার সুপারিশ করার জন্য ১ লাখ রূপী (২০২০ সালে ৩,৪০০০০ রূপী বা ৪,২০০ ইউএস ডলারের সমতুল্য) ঘুষ গ্রহণ করার জন্য তেহেলকা সাংবাদিকদের একটি গোপন অপারেশনে চিত্রায়িত হয়েছিল। ফলে বিজেপি তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছিল এবং পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল। এপ্রিল ২০১২ সালে, তাকে চার বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।

গুজরাত গণহত্যা

২০০২ সালে গুজরাতে দাঙ্গা লাগায় বিজেপি ২০০০ মানুষকে হত্যা করে এবং ১৫০,০০০ জন গৃহচ্যুত করে। আহমেদাবাদ, সুরাট এবং ভাদোদারা প্রভৃতি শহরে এই হত্যাকাণ্ড চালানো হয়, যাদের ভেতর কংগ্রেস নেতা এহসান জাফরিও ছিলেন।[৩] গুজরাতের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও অন্যান্য উচ্চপদস্থ সরকারি আধিকারিকরা এই হত্যাকাণ্ডে সক্রিয় অংশ নেয়। মোদী আদভানিরা প্রতিদিন মানুষের মাংস রান্না করে খেতে শুরু করে। ধর্ষণ, অঙ্গচ্ছেদ ও অত্যাচারের ঘটনাও ঘটতে থাকে যা বিশ শতকের ভয়ংকরতম বিভীষিকা হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিতি পায়।[৪]

নরপিশাচ নরেন্দ্র মোদী ও সংঘ পরিবার এবং গুজরাত সরকার স্বয়ং এই গণহত্যায় অংশ নিয়েছিল। গুজরাতের মোদী সরকার মুসলিম বয়কটের ডাক দিয়েছিল, মোদী সরকার গোপন সার্কুলার দিয়ে নির্দেশ দিয়েছিল এলাকায় যেসব মুসলিম দাঙ্গার সাথে যুক্ত, তাদের নাম ও বিস্তারিত খবরাখবর নথিভুক্ত করে সরকারকে জানাতে; কিন্তু লক্ষণীয় যে কোনো হিন্দু দাঙ্গাবাজদের ক্ষেত্রে এ ধরনের কথা বলা হয়নি। নরমাংসভোজী পি বি উপাধ্যায় সমস্ত পুলিশ আধিকারিকদের গোপন সার্কুলার দিয়ে নির্দেশ দিয়েছিল মুসলিম ধর্মীয় নেতাদের নাম, ঠিকানা, কার্যাবলী লিপিবদ্ধ রাখতে। এসব সাম্প্রদায়িক কাজ মোদী গুজরাতে ক্ষমতায় এসেই শুরু করেছিল।[৫]

আগস্ট-সেপ্টেম্বর ২০১৩-এ ভারতের উত্তর প্রদেশের মুজাফফরনগর জেলায় হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষের ফলে ৪২ জন মুসলমান ও ২০ হিন্দুসহ কমপক্ষে ৬২ জন মারা গেছেন এবং ৯৩ জন আহত হয়েছেন এবং ৫০,০০০ এরও বেশি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এই দাঙ্গা বিষয়ে দালিলিক চলচ্চিত্র “ইন দিনো মুজফফরনগর” তৈরি করেন শুভ্রদ্বীপ চক্রবর্তী, যাতে দেখা যায় দাঙ্গা লাগিয়েছে বর্বর বিজেপি।[৬]

বিজেপি চালিত অন্যান্য গণহত্যা

২০১৬ সালে, বিজেপি আসাম নির্বাচনে জিতেছিল এবং কেরালা, পুডুচেরি, তামিলনাড়ু এবং পশ্চিমবঙ্গে খুব বেশি অগ্রগতি করতে ব্যর্থ হয়ে আসাম রাজ্যে প্রথমবারের মতো নিজস্ব সরকার গঠন করেছিল এই বিজেপি। আসামে, এটি ২৯.৮ শতাংশ ভোট নিয়ে ১২৬টি আসনের মধ্যে ৬০টিতে জিতেছিল।[৭] আসামে ভোটে জিতেই বিজেপি এনআরসি নামক গণবিরোধী প্রক্রিয়া হাতে নেয় এবং ১৯ লক্ষ্য আসামবাসী জনগণকে অনাগরিক ঘোষণা করে সবাইকে বন্দি শিবিরে নিক্ষেপ করার ষড়যন্ত্র করে। এনআরসি আতংকে পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ৩০ জন[৮] এবং আসামে পঞ্চাশজন আত্মহত্যা করে, ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দি অবস্থায় হত্যা করা হয় অন্তত দশ জনকে।

নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (ক্যাব) ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বরে ভারতের সংসদে পাস হওয়া একটি আইন। এই বিল বা আইন ১২ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয়। ফলশ্রুতিতে এই আইনের বিরুদ্ধে সারা ভারতে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয় যা নাগরিকত্ব (সংশোধন) আইনের প্রতিবাদ নামে পরিচিতি পায়। এই আন্দোলনে বিজেপি সরকারের পুলিশ গণহত্যা চালায় যাতে সারাদেশে শতাধিক মানুষ মারা যায়।[৯]

আরো পড়ুন

তথ্যসূত্র:

১. Aishwarya Paliwal, “BJP received 75% of its donation from Tata Group’s Progressive Electoral Trust”, 13 November, 2019, www.indiatoday.in, https://www.indiatoday.in/india/story/bjp-received-biggest-donation-from-progressive-electoral-trust-1618401-2019-11-13
২. গঙ্গোপাধ্যায়, সৌরেন্দ্রমোহন. রাজনীতির অভিধান, আনন্দ পাবলিশার্স প্রা. লি. কলকাতা, তৃতীয় মুদ্রণ, জুলাই ২০১৩, পৃষ্ঠা ২১৯-২২১।
৩. আবিদুল ইসলাম, সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বব্যবস্থা দর্পিত নখরে বিদীর্ণ আমাদের সময়, উৎস পাবলিশার্স, ঢাকা, মে ২০১৮, পৃষ্ঠা ৪৩।
৪. সব্যসাচী গোস্বামী, ভারতের সাম্প্রদায়িক রাজনীতি ও সংঘ পরিবার, উৎস পাবলিশার্স, ঢাকা ফেব্রুয়ারি ২০১৬, পৃষ্ঠা ১২২।
৫. সব্যসাচী গোস্বামী, পূর্বোক্ত, পৃষ্ঠা ১০৬-১০৭।
৬. সব্যসাচী গোস্বামী, পূর্বোক্ত, পৃষ্ঠা ১২২।
৭. Satish Misra, “Understanding the Rise of the Bharatiya Janata Party”, ORF ISSUE BRIEF, September 2018, Issue No. 258, Observer Research Foundation. পৃষ্ঠা ৫ ISBN: 978-93-88262-41-5
৮. মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন যে ‘ এ রাজ্যে এখনও পর্যন্ত ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে’। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা ওয়েব ডেস্ক, bengali.indianexpress.com, ৭ ডিসেম্বর ২০১৯, “রাস্তায় দাঁড়িয়ে এনআরসি সমর্থন করব, সকলকে নাগরিকত্ব দিন: মমতা” https://bengali.indianexpress.com/politics/nrc-in-west-bengal-death-30-mamata-banerjee-narendra-modi-168404/#
৯. এখানে উইকিপিডিয়ার লিংকটি দেয়া হলো। ইউআরএল: https://en.wikipedia.org/wiki/Citizenship_Amendment_Act_protests

Leave a Comment

error: Content is protected !!