বাস্তিলের বিক্ষোভ বা বাস্তিলের পতন বা বাস্তিল দুর্গের পতন (ইংরেজি: Fall of Bastille) হচ্ছে তৎকালীন অত্যাচারী ফরাসি সম্রাটের বিরুদ্ধে জনতার বিপ্লবী অভ্যুত্থানের সূচক বলে ইতিহাসে পরিগণিত। ঘটনাটি ১৭৮৯ সালের ১৪ জুলাই ফ্রান্সের প্যারিস শহরে সংঘটিত হয়। বাস্তিল দুর্গ ছিল প্যারিস শহরে ফান্সের বিখ্যাত কারাগার। স্বৈরতান্ত্রিক সম্রাট এবং সামন্তবাদী শাসন ও অত্যাচারের প্রধান প্রতীক হিসাবে বাস্তিল দুর্গ জনসাধারণের মনে সর্বাধিক ঘৃণা এবং ক্রোধের সৃষ্টি করেছিল।[১]
ফরাসি বিপ্লব শুরু হলে প্যারিস শহরের একটি কারখানার শ্রমিকদের নেতৃত্বে বিক্ষুদ্ধ জনতা বাস্তিল দুর্গকে আক্রমণ করে এবং দুর্গের সশস্ত্র বাহিনীকে পর্যদস্ত করে দুর্গের দ্বার ভেঙ্গে ফেলে দুর্গের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে। জনতার হাতে দুর্গের শাসক নিহত হয়। সমগ্র ফ্রান্সের নির্যাতনের প্রতীক হিসাবে জনতা এরপরে দুর্গকে একেবারে ভূমিসাৎ করে ফেলার জন্য তার প্রাচীরের পাথর একটি একটি করে খুলে ফেলতে আরম্ভ করে। ১৪ জুলাই বাস্তিল দুর্গ পতন দিবসকে আজো ফরাসি দেশের জনসাধারণ শক্তির দিবস হিসাবে পালন করেন।
বাস্তিল আক্রমণের লক্ষ্য এবং এর পতনের তাৎপর্য নিয়ে ইতিহাসের গবেষকদের মধ্যে মতের পার্থক্য আছে। অনেকে মনে করেন যে, বাস্তিল দুর্গে রাজনীতিক বন্দিদের মুক্তির জন্য জনতা বাস্তিল আক্রমণ করেছিল, একথা ঠিক নয়। আসলে জনতার প্রধান লক্ষ্য ছিল দুর্গের অস্ত্র দখল করা। কিন্তু একথা ঠিক যে, বাস্তিলের পতনের মধ্যে দিয়ে বিপ্লবী আক্রমণের উদ্যোগ ব্যপকতম জনসাধারণের হাতে চলে গিয়েছিল। এদিক দিয়ে ফরাসি বিপ্লবের সবচেয়ে নাটকীয় এবং তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা ছিল বাস্তিলের পতন। এই ঘটনার পরে জনসাধারণের প্রতিনিধিদের জাতীয় পরিষদই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার উৎস হয়ে দাঁড়ায়।
বাস্তিল পতনকে শাসকশ্রেণিও মূল্যায়ন করে। স্বৈরতন্ত্রী শাসকেরা জনগণকে শাসন করতে বাস্তিলের পতন থেকেও শিক্ষা নেয়। যেমন, বাস্তিলের পতন সম্পর্কে জনগণ গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার শত্রু জওহরলাল নেহেরু তাঁর কন্যা পিশাচিনী ইন্দিরা প্রিয়দর্শীনিকে পত্রাকারে লিখেছেন, “বাস্তিলের পতন ইতিহাসের একটি স্মরণীয় ঘটনা। সারাদেশ ব্যাপী বাস্তিলের পতন ছিল মহাবিদ্রোহের সংকেত। এর অর্থ দাঁড়াল, ফ্রান্সে প্রাচীন রীতি সামন্তপ্রথা রাজার একাধিপত্য এবং সম্প্রদায় বিশেষের বিশেষ অধিকারের পরিসমাপ্তি। ১৪ই জুলাই ক্রুব্ধ জনতার কাছে বাস্তিল দুর্গের পতন হলো”।[২]
তথ্যসূত্র:
১. সরদার ফজলুল করিম; দর্শনকোষ; প্যাপিরাস, ঢাকা; ৫ম মুদ্রণ জানুয়ারি, ২০১২; পৃষ্ঠা ৮১।
২. পূর্বোক্ত, পৃষ্ঠা ১৬৭।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।