গণিকাবৃত্তির বিরুদ্ধে সংগ্রামের পঞ্চম আন্তর্জাতিক কংগ্রেস

সম্প্রতি লন্ডনে সাদা গোলামদের ব্যবসায় নিরোধকল্পে পঞ্চম আন্তর্জাতিক সম্মেলন হয়ে গিয়েছে।

এই কংগ্রেসে অনেক ডিউকের স্ত্রী, কাউন্টের স্ত্রী, বিশপ, পাদ্রী শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিত, পুলিস কর্মচারী এবং সমস্ত রকমের বুর্জোয়া বিশ্ব প্রেমিকদেরই আবির্ভাব হয়েছিল। সেখানে আনুষ্ঠানিক ভোজসভা ও সরকারী অভ্যর্থনার অন্ত ছিল না। আর পতিতাবৃত্তি যে কতো ক্ষতিকর ও কতদূর লজ্জাজনক সে সম্বন্ধে গুরু গম্ভীর বক্তৃতারও অন্ত ছিল না।

কিন্তু এই কংগ্রেসে এই পরিপাটি বুর্জোয়া প্রতিনিধিরা সংগ্রামের কোনো উপায় দাবি করেছিলেন ? তাদের প্রধান হাতিয়ার দুইটি, ধর্ম ও পুলিস। তাঁরা বলেন, এই দুইটি। হলো গণিকাবৃত্তি নিরোধের সবচেয়ে নিশ্চিত ও নিরাপদ উপায়। লাইপৎসিক ফোকসজাইটুং কাগজের লন্ডন সংবাদদাতা লিখেছেন: একজন ইংরাজ প্রতিনিধি গর্ব করে বলেন যে, তিনি পার্লামেন্টে গণিকাবৃত্তির দালালির অপরাধে প্রাণদণ্ড দেওয়া হবে এই মর্মে একটি বিল পর্যন্ত উত্থাপন করেছেন। ইনিই হলেন গণিকাবৃত্তির বিরুদ্ধে সংগ্রামে একজন আধুনিক ‘সুসভ্য’ বীরপুরুষ।

কানাডার একজন ভদ্রলোক ‘পতিতা’ নারীদের উপর নজর রাখবার জন্য পুলিস ও নারী পুলিসের প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে খুবই উৎসাহ দেখালেন। অবশ্য মজুরি বৃদ্ধির বেলায় তিনি মন্তব্য করলেন যে, নারী শ্রমিকরা আর বেশি মজুরি পাবার যোগ্য নয়।

একজন জার্মান পাদরী আধুনিক বস্তুবাদের বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠে নিন্দা করে বললেন যে, এই বস্তুবাদই আজকাল লোকের মধ্যে ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ে স্বাধীন প্রেমের বিস্তার করছে। সামাজিক কারণগুলির উল্লেখ করে যখন তিনি বললেন, শ্রমিকশ্রেণীর পরিবারের দুঃখ কষ্টের কথা, শিশুদের শ্রম শোষণের কথা, বাসস্থানের অসহ্য অবস্থা ইত্যাদির কথা তখন তাঁর বিরুদ্ধে চেঁচামেচি করে তাঁকে থামিয়ে দেওয়া হলো।

অথচ এদিকে প্রতিনিধিদের কাছে হোমরা চোমরা ব্যক্তিদের সম্বন্ধে উপদেশপূর্ণ এবং ধর্মসংক্রান্ত গল্প বলা হলো। যেমন, জার্মান সম্রাজ্ঞী যখন বার্লিনে একটি প্রসূতি আগার পরিদর্শন করতে যান, তখন ‘জারজ’ সন্তানদের মায়েদের আঙ্গুলে আংটি পরিয়ে দেওয়া হয় যাতে অবিবাহিত মায়েদের বীভৎস দৃশ্য জার্মান সম্রাজ্ঞীর মতো এত বড় মহামান্য সুবিখ্যাত ব্যক্তিকে দেখতে না হয় !

আরো পড়ুন:  সংস্কৃতিবান ইউরোপীয় ও বন্য এশীয়

এর থেকেই বোঝা যায়, এই সব আভিজাত্যপূর্ণ বুর্জোয়া কংগ্রেসগুলি কি বিরক্তিজনক বুর্জোয়া প্রতারণায় ভরা থাকে। এইসব ভণ্ড দাতারা এবং পুলিসী সাহায্যে মানুষের দুঃখ-কষ্টের প্রতি বিদ্রুপকারীরা ‘পতিতাবৃত্তি’ নিরোধের নামে জড়ো হয়, অথচ ঠিক এই সব অভিজাত ও বুর্জোয়ারাই পতিতাবৃত্তির পোষণ করে থাকে।

রবোচায়া প্রাভদা, ২৬শে জুলাই, ১৯১৩ সাল[১]

টিকা:

১. লেনিনের এই প্রবন্ধটি কনক মুখোপাধ্যায় (সেপ্টেম্বর ২০০৬) সম্পাদিত নারী মুক্তির প্রশ্নে, কলকাতা: ন্যাশনাল বুক এজেন্সি প্রাইভেট লিমিটেড, পৃষ্ঠা ৯৮ থেকে নেওয়া হয়েছে।

Leave a Comment

error: Content is protected !!