সােভিয়েত ইউনিয়নের রাষ্ট্রীয় গােয়েন্দা সংস্থার সংক্ষিপ্ত নাম ছিলো কেজিবি (ইংরেজি: কমিটি ফর স্টেট সিকিউরিটি) বা রুশ ভাষায় তার পুরাে নাম হলো কমিতে গসুদার্সভেনয় বেজপাসনস্তি (রুশ: Комите́т Госуда́рственной Безопа́сности (КГБ)। ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে গঠিত এই সংস্থার কর্মপরিধি একই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক। রাজনৈতিক নিরাপত্তা বিধান ও পুলিশের কাজ সম্পন্ন করা এবং তৎসংক্রান্ত যাবতীয় খোঁজখবর সংগ্রহ করা সংস্থাটির অন্যতম দায়িত্ব ছিলো।
প্রকাশ্যে ও গােপনে সর্ববিধ রাজনৈতিক তথ্য সংগ্রহ, সােভিয়েত দেশের রাজনৈতিক নেতাদের নিরাপত্তা বিধান, অভ্যন্তরীণ বিশেষ নিরাপত্তা ফৌজের ব্যবহার, আন্তর্জাতিক সীমানায় সেনাবাহিনীর উপর নজর রাখা, রাষ্ট্র ও সমর বিভাগের গােপনীয় বিষয়াদি সংরক্ষণ করা, রাজদ্রোহ ও অন্তর্ঘাতমূলক ক্রিয়াকর্ম দমন করা, বিভিন্ন দেশে পাতা গুপ্তচরদের জাল পরিচালনা করা ছিলো এটির দায়িত্ব। সেনসরজনিত ক্রিয়াকর্মের তত্ত্বাবধান এবং সােভিয়েত ইউনিয়নে বিদেশি পর্যটক এবং প্রবাসে দেশের নাগরিকদের উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা এই সংস্থার অন্যতম প্রধান কাজ ছিলো।
যে বিবর্তনের ধারায় কে জি বি তার রূপ পরিগ্রহ করেছিল তার উৎপত্তি ঘটে ১৯১৭ খ্রি বলশেভিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হবার পর। প্রারম্ভে সংক্ষিপ্ত নাম ছিল তার ‘চেকা’। রাজদ্রোহী ও প্রতিবিপ্লবীদের দেশের শত্রু হিসেবে গ্রেপ্তার, কারাদণ্ড ও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া ছাড়াও গােয়েন্দাকর্ম ছিল তার মূল দায়িত্ব। ১৯২২ খ্রি চেকার স্থলাভিষিক্ত হয় ওগপু নামে অনুরূপ এক সংস্থা।
ওগপুর উপর অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে শ্রমশিবির পরিচালনা এবং কিছু বিচার বিভাগীয় কাজ ন্যস্ত হয়। যৌথ খামার গঠনে কৃষকদের প্রবৃত্ত করা, কুলাকদের দেশান্তরে পাঠানাে এবং মেনশেভিকদের গণআদালতে বিচার ইত্যাদি দায়িত্বও এসে পড়ে। ওগপুর হাতে সশস্ত্র বাহিনী, বিমান, ট্যাঙ্ক ও অন্যান্য যুদ্ধের সরঞ্জাম দেওয়া হয়। ১৯৩৪ খ্রি ওগপুর স্থান নেয় নবগঠিত এন কে ভি ডি নামে এক সংস্থা। ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার সংস্থাটি পৃথক করে গঠিত হয় এনকেজিবি নামে। সেটিও ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে এমভিডি এবং এমজিবি নামে যথাক্রমে অভ্যন্তরীণ বিষয় ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার দায়িত্ব সমন্বিত দুটি মন্ত্রকের অধীনে চলে যায়। মহান স্তালিনের মৃত্যুর পর ওই দুটির সমন্বয়ে কেজিবি গঠিত হয়। বিশ্বের বৃহত্তম গুপ্ত পুলিশ ও গুপ্তচর সংগঠন হিসেবে কেজিবি সােভিয়েত ইউনিয়নের রাজনৈতিক জীবনে বিপুল ক্ষমতার অধিকারী ছিলো। নব্বইয়ের দশকে অবলুপ্তির পূর্বে কেজিবি কমিউনিস্ট পার্টির সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে চালিত হতো।
দ্রষ্টব্য. সিআইএ
তথ্যসূত্র:
১. গঙ্গোপাধ্যায়, সৌরেন্দ্রমোহন. রাজনীতির অভিধান, আনন্দ পাবলিশার্স প্রা. লি. কলকাতা, তৃতীয় মুদ্রণ, জুলাই ২০১৩, পৃষ্ঠা ৮২-৮৩।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।