এশিয়া পূর্ব এবং উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত পৃথিবীর একটি মহাদেশ

এশিয়া (ইংরেজি: Asia) পৃথিবীর বৃহত্তম এবং সর্বাধিক জনবহুল মহাদেশ, প্রধানত পূর্ব এবং উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত। পৃথিবীর স্থলভাগের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ব্যাপ্ত এশিয়া মহাদেশের জনসংখ্যা ২০১৭ সালে ছিলো প্রায় ৪৪৬ কোটি ২৭লক্ষ, অর্থাৎ পৃথিবীর মােট জনসংখ্যার ষাট শতাংশ। ১৯৮০ সালে এশিয়ার মোট জনসংখ্যা ছিলো ২৬৩ কোটি।

এশিয়ার পূর্বে, দক্ষিণ-পূর্ব ও দক্ষিণের দেশগুলিতেই পথিবীর অধিকাংশ গ্রামীণ মানুষের বাস। এশিয়ার প্রায় এক-পঞ্চমাংশ মানুষ শহরবাসী। শহরে মানুষের হার অপেক্ষাকৃত কম হলেও কোন কোন এশীয় দেশে বিশাল সব শহর রয়েছে। এগুলির মধ্যে সর্ববৃহৎ টোকিও (১ কোটি ২০ লক্ষ বাসিন্দা), সাংহাই, বােম্বাই, পিকিঙ –এই শহরগুলির প্রত্যেকটির লােকসংখ্যা গড়পড়তা চল্লিশ লক্ষাধিক।[১]

এশিয়ায় জাতিসঙ্ঘ কর্তৃক স্বীকৃত স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের সংখ্যা ৪৯টি, দুটি আন্তর্জাতিক রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিসহ প্রকৃত অস্তিত্বপূর্ণ, তবে সাধারণ সার্বভৌম রাষ্ট্র নয়, এবং চারটি মূলত অস্বীকৃত কার্যত রাষ্ট্র এবং ছয়টি পরাধীন এবং অন্যান্য অঞ্চল রয়েছে। ইউরােপের মতাে এগুলিও পুঁজিবাদী অথবা সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থাধীন।

সমাজতান্ত্রিক এশিয়ার ৬০ শতাংশেরও বেশি অঞ্চল সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্গত। এছাড়াও মঙ্গোলিয়া গণপ্রজাতন্ত্র, ভিয়েতনাম সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র, কোরিয়া জনগণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র, লাওস জনগণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র ও চীন গণপ্রজাতন্ত্র সমাজতান্ত্রিক এশিয়ার অন্তর্ভুক্ত।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যেমন্ডিত দক্ষিণ এশিয়ার দেশ নেপাল। হিমালয় অধ্যুষিত এই নেপালের সাথে চীন এবং ভারতের সীমান্ত রয়েছে। ১৯৯০ সালে নেপাল রাজতন্ত্রের পতনের জন্য গৃহযুদ্ধ শুরু করেছিলো। ২০০৬ সালে একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং ওই একই বছরে নির্বাচন হয়। নেপাল ১৪ টি জোন এবং ৭৫ টি জেলায় ভাগ করা। নেপালের সংস্কৃতি বেশ সমৃদ্ধ এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ।

যেসব কারণে এশিয়ার রাজনৈতিক মানচিত্রের পরিবর্তন ঘটেছে তন্মধ্যে প্রাক্তন উপনিবেশগুলির স্থলে এশিয়ায় স্বাধীন রাষ্ট্রের অভ্যুদয় সবিশেষ গুরত্বপূর্ণ। ভারত এদের মধ্যে বৃহত্তম। ব্রহ্মদেশ, ইরাক, সিরিয়া সহ কয়েকটি দেশ অপুঁজিবাদী বিকাশের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। কাম্বােডিয়া ও আফগানিস্তানের জনগণও নতুন জীবনের ভিত্তি নির্মাণ করছে।

আরো পড়ুন:  ইউরোপ উত্তর ও পূর্ব গোলার্ধে অবস্থিত পৃথিবীর একটি মহাদেশ

এশিয়ার অধিকাংশ উন্নয়নশীল দেশ নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করে। এগুলির জনগণ ঔপনিবেশিক উত্তরাধিকার হিসাবে প্রাপ্ত অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অনগ্রসরতা অতিক্রমের, জীবিকার মানােন্নয়নের মতাে মৌলিক সমস্যাবলী সমাধানের ঐকান্তিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এই ব্যাপারে সাবেক সােভিয়েত ইউনিয়ন ও অন্যান্য সমাজতান্ত্রিক দেশের প্রদত্ত নিঃস্বার্থ সহায়তা তাদের এক দৃঢ় অবলম্বন ছিলো।

এশিয়ায় পরিস্থিতির অবনতি সমাজতান্ত্রিক দেশগুলি এবং শান্তিকামী রাষ্ট্রসমূহের উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ এই এলাকায় আক্রমণাত্মক নীতি সম্প্রসারিত করেছে, জাপানী সমরবাদের পুনর্জন্ম ঘটিয়েছে এবং সম্প্রসারণবাদী উদ্দেশ্য পূরণের জন্য চীন-ভারতকে অস্ত্রশস্ত্র যােগাচ্ছে। ওয়াশিংটন-মস্কো-পিকিং-টোকিও-দিল্লি এই আগ্রাসী পঞ্চভুজ এশীয় জনগণের শান্তি ও নিরাপত্তা বিপন্ন করছে।

তথ্যসূত্র:

১. কনস্তানতিন স্পিদচেঙ্কো, অনুবাদ: দ্বিজেন শর্মা: বিশ্বের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ভূগোল, প্রগতি প্রকাশন, মস্কো, বাংলা অনুবাদ ১৯৮২, পৃ: ২০-২১।

Leave a Comment

error: Content is protected !!