অস্ট্রেলিয়া বা অস্ট্রেলিয়া কমনওয়েলথ একটি দ্বীপ-মহাদেশ। এটি এশিয়ার দক্ষিণ-পূর্বে ওশেনিয়া অঞ্চলে অবস্থিত। হাজার হাজার কিলোমিটারের ব্যবধান সত্ত্বেও উত্তর গোলার্ধের কানাডা এবং দক্ষিণ গোলার্ধের অস্ট্রেলীয় কমনওয়েলথ ইতিহাস, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির দিক থেকে বহুলাংশে অভিন্ন। কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া এই উভয় দেশই প্রাক্তন ব্রিটিশ উপনিবেশ এবং বহিরাগত ইউরোপীয়রাই এগুলির উন্নতি ও জনসংখ্যা গঠন করেছে। আজও দেশ দুটি ব্রিটেনের প্রাক্তন উপনিবেশ নিয়ে গঠিত কমনওয়েলথের সদস্য। প্রাক্তন ব্রিটিশ ডমিনিয়ন (ইংলণ্ডের রাণীকে নামিক প্রধান রেখে স্বায়ত্তশাসিত রাষ্ট্র) কানাডা ও অস্ট্রেলীয় কমনওয়েলথ বহুকাল থেকেই অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ব্যাপারে স্বাধীন ছিল। এরা উভয়ই অত্যুন্নত পুঁজিবাদী অর্থনীতির দেশ।
আয়তনের দিক থেকে দেশটি কানাডার প্রায় সমান হলেও এর জনসংখ্যা কানাডার চেয়ে কম। শিল্পোৎপাদনের পরিমাণ হিসাবে পুঁজিবাদী বিশ্বে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম সারির দশটি দেশের অন্যতম।
এই দেশ খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ। প্রতি বছর সেখানে লক্ষ লক্ষ টন সীসা, দস্তা ও তামা আকরিক, বক্সাইট, টাংস্টেন, কোবাল্ট, অ্যান্টিমনি, ট্যাণ্টেলাম, ইউরেনিয়াম, বেরিলিয়াম, বিসমাথ ও বিরল ধাতু সংগহীত হয়। তার নিষ্কাশিত লৌহ ও ম্যাঙ্গানিজ আকরিকের পরিমাণও এখন বাড়ছে।
লৌহ ও ইস্পাত এবং লৌহেতর ধাতু উৎপাদন মানুফ্যাকচারিং শিল্পের একটি গুরত্বপূর্ণ শাখা। তার বার্ষিক ইস্পাত উৎপাদন এখন ৮০ লক্ষ টনে পৌঁছেছে। সীসা ও দস্তা উৎপাদনে পুঁজিবাদী বিশ্বে অস্ট্রেলিয়ার স্থান যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয়। পশ্চিমা দেশগুলিতে অস্ট্রেলিয়ার রপ্তানিসামগ্রীর প্রায় ১০ ভাগই আকরিক ও ধাতু।
মানুফ্যাকচারিং শিল্পের উৎপাদনে ইঞ্জিনিয়রিং, তৈলশোধন ও রাসায়নিক শিল্পের অংশভাগ এখন বধমান। সিডনি, মেলবোর্ন ও অন্যান্য শহরে মোটরগাড়ি, মেশিন টুলস, যন্ত্রপাতি এবং কারখানা ও খামারের বিবিধ সাজসরঞ্জাম তৈরি হয়ে থাকে।
অস্ট্রেলিয়ার তেলসম্পদ খুবই সীমিত। তার বন্দরগুলি আমদানিকৃত অশোধিত তৈল শোধন করে। স্থানীয় কয়লা ও নদী থেকে উৎপন্ন জলবিদ্যুতই (বছরে প্রায় ৯৮, ৩০০০ কোটি কিলোওয়াট-ঘণ্টা) শক্তির প্রধান উৎস।
অস্ট্রেলিয়ার বৃহৎ পুঁজিবাদী খামারগুলি গরুপালন ও শস্যচাষে বিশেষীকৃত। মেষসংখ্যা এবং পশম উৎপাদন ও রপ্তানির ক্ষেত্রে এদেশ বিশ্বের প্রথম স্থানের অধিকারী। এর গব্যশালা শিল্পও কৃষির অন্তর্ভুক্ত। অস্ট্রেলিয়া যথেষ্ট পরিমাণ মাংস, মাখন ও পনির রপ্তানি করে।
গম দেশের প্রধান ফসল। দেশে বার্ষিক উৎপন্ন ১.৫-১.৬ কোটি টন গমের অর্ধেকই বিদেশে রপ্তানি করা হয়। সব মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়ার রপ্তানিমুল্যের দুই-তৃতীয়াংশই কৃষিসামগ্রী থেকে আহৃত। আখ-চিনি উৎপাদনও এখন রপ্তানিমুখী।
অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল দেশের প্রধান অর্থনৈতিক এলাকা এবং সর্বাধিক ঘনবসতিপূর্ণ। এখানেই কৃষির তিন-চতুর্থাংশ এবং শিল্পপণ্যের চার-পঞ্চমাংশ উৎপন্ন হয়। সিডনি (শহরতলী সহ জনসংখ্যা ২৬ লক্ষ) দেশের বৃহত্তম শহর, শিল্পকেন্দ্র ও সমুদ্রবন্দর। নিউক্যাসল উন্নত ধাতুশিল্প, জাহাজনির্মাণ ও অন্যান্য শিল্পে সুসমৃদ্ধ। মেলবার্ন (জনসংখ্যা শহরতলী সহ ২৩ লক্ষ) একটি শিল্পকেন্দ্র ও বন্দর। রাজধানী ক্যানবারায় কোন উল্লেখ্য শিল্প নেই।
অস্ট্রেলিয়ার অন্যান্য অঞ্চলগুলি তার কৃষি ও কাঁচামাল উৎপাদনের উপাঙ্গবিশেষ। এখানকার স্থানীয় অধিবাসীরা অনুন্নত এলাকার বাসিন্দা। পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থার বদৌলতে অস্ট্রেলীয় আদিবাসীরা সপ্তাবস্থায় পর্যবসিত হয়েছে।
তথ্যসূত্রঃ
১. কনস্তানতিন স্পিদচেঙ্কো, অনুবাদ: দ্বিজেন শর্মা: বিশ্বের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ভূগোল, প্রগতি প্রকাশন, মস্কো, বাংলা অনুবাদ ১৯৮২, পৃ: ২১৪-২১৬।
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।