ফিনল্যান্ড বন, হ্রদ ও পাথরের দেশ। এর দুই-তৃতীয়াংশই বনাচ্ছন। বহু নদীপ্রপাত সহ ছোট ছোট নদীর মাধ্যমে যুক্ত এর অসংখ্য হ্রদগুলিই দেশের প্রায় এক-দশমাংশ ভূভাগের অধিকারী। ফিনল্যান্ডের নির্ধারিত জলবিদ্যুতের পরিমাণ প্রায় ৩০ লক্ষ কিলোওয়াট। বিপুলে কাষ্ঠসম্ভার এদেশের প্রধান সম্পদ। এখানে লোহা, তামা ও নিকেল আকরিক এবং সোনা, দস্তা, সীসা ও অন্যান্য ধাতুর খনি আবিষ্কৃত হয়েছে।
ফিনল্যান্ডের জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি দেশের দক্ষিণাঞ্চলে কেন্দ্রিত। এখানে গ্রাম, বিশেষত খামারেরই আধিক্য। ফিনল্যাণ্ডের শহরগুলি ছোট এবং সংখ্যার দিক থেকেও সীমিত। হেলসিঙ্কি বৃহত্তম শহর (জনসংখ্যা ৫ লক্ষ ২০ হাজার)। দেশের কর্মরত জনসংখ্যার ৪০ শতাংশের বেশি শিল্পশ্রমিক।
দেশের জাতীয় আয়ের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ শিল্পপণ্য ও বনশিল্প থেকে এবং এক-অষ্টমাংশ কৃষি থেকে উৎপন্ন হয়। বিশটি একচেটিয়া সংস্থাই অর্থনীতির মূল শাখাগলি নিয়ন্ত্রণ করে। দেশের অর্থনীতি মলত রপ্তানিনির্ভর।
ফিনল্যান্ডের অর্থনীতিতে কাষ্ঠ, কাষ্ঠশিল্প, মণ্ড ও কাগজ শিল্পই অগ্রগণ্য। বার্ষিক ৪ কোটি ঘনমিটারের বেশি কাটা-কাঠ, চেরাই-কাঠ, প্লাইউড, আসবাব, প্রবিন্যস্ত গৃহাদি, সেলুলুজ ও কার্ডবোর্ড তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। বনশিল্পের সামগ্রী রপ্তানিতে কানাডা ও সুইডেনের পর ফিনল্যাণ্ড তৃতীয় স্থানের অধিকারী।
দেশের ইঞ্জিনিয়রিং শিল্প প্রধানত কাষ্ঠশিল্পের জন্য কারখানার যন্ত্রপাতি ও মেশিন-পত্র উৎপাদন করে। হেলসিঙ্কি ও তুকু-র জাহাজনির্মাণ শিল্প হল অর্থনীতির একটি প্রধান শাখা। দেশে এখন তামা, দস্তা ও অন্যান্য লৌহেতর ধাতুর উৎপাদন বাড়ছে আর ইস্পাত উৎপাদনও উন্নতিমুখী। রাআহা শহরে বৃহৎ ধাতুকারখানার কাজ করছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে আমদানিকৃত তেল ও গ্যাস এবং পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কল্যাণে দেশের শক্তি-বুনিয়াদ আরও মজবুত হয়ে উঠছে। আজ তার মোট বিদ্যুতের বার্ষিক উৎপাদন ৩০০০ কোটি কিলোওয়াট-ঘণ্টায় পৌঁছেছে।
বছরে উৎপন্ন ৩০-৪০ লক্ষ টন দুধ থেকে ফিনল্যান্ডের অত্যুন্নত দুগ্ধশিল্প প্রচুর পরিমাণ মাখন ও পনির তৈরি করে। কৃষিজাত ফসল দেশের চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।
ফিনল্যাণ্ডের শান্তিপূর্ণ সক্রিয় নীতি এবং রাজনীতি, অর্থনীতি ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে সহযোগিতা তার নিশ্চিত নিরাপত্তার গ্যারান্টি এবং পুরোপুরি জনস্বার্থের অনুকূল। ১৯৭৩ সালে ফিনল্যাণ্ড সি.এম.ই.এ.-ভুক্ত দেশগুলির সঙ্গে সহযোগিতার চুক্তি সম্পাদন করেছে।
তথ্যসূত্রঃ
১. কনস্তানতিন স্পিদচেঙ্কো, অনুবাদ: দ্বিজেন শর্মা: বিশ্বের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ভূগোল, প্রগতি প্রকাশন, মস্কো, বাংলা অনুবাদ ১৯৮২, পৃ: ১৯৩-১৯৪।
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।