দক্ষিণ এশিয়া (South Asia) হলো পাশ্চাত্যের দ্বারা নিপীড়িত অঞ্চল। এই অঞ্চল নেপাল, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা রাষ্ট্রগুলো নিয়ে গঠিত। এছাড়াও জাতিসংঘ ঘোষিত দক্ষিণাঞ্চলীয় এশিয়া নামের উপ-অঞ্চলে উপরের দেশগুলো ছাড়াও আফগানিস্তান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এই অঞ্চলের বৃহত্তম দেশ অবিভক্ত ভারতের শাসক ছিল ব্রিটিশ। লেনিন ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকদের ‘বিশুদ্ধ চেঙ্গিস খাঁ’ নামে চিহ্নিত করেছিলেন। এরাই দুই শতাব্দীর অধিককাল ভারতে লুণ্ঠন ও নির্যাতন চালায়।
ভারতের জনগণ বিদেশী হামলাকারীদের বিরুদ্ধে সর্বদাই সংগ্রাম করেছে। ১৯১৭ সালে রাশিয়ার মহান অক্টোবর বিপ্লব জাতীয় মুক্তিসংগ্রামে উদ্দীপনা সৃষ্টির মাধ্যমে তাদের এই সংগ্রামকে অনেকটা প্রভাবিত করেছিল। ১৯৪১-১৯৪৫ সালের পিতৃভূমির মহান যুদ্ধে সােভিয়েত জনগণের জয়লাভ ভারতীয় জনগণকে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে চড়ান্ত সংগ্রাম আরম্ভের অনুপ্রেরণা যােগায়। এই সংগ্রামের ফলে ভারত স্বাধীন বিকাশের পথ গ্রহণ করে।
দক্ষিণ এশিয়া থেকে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকদের উৎখাতের ফলে ভারতীয় উপদ্বীপে দুটি বৃহৎ রাষ্ট্র – ভারত ও পাকিস্তানের অভ্যুদয় ঘটে। পূর্ববঙ্গে মুক্তিসংগ্রামের সাফল্যের ফলে ১৯৭১ সালের শেষে পাকিস্তানের পূর্ব অংশে বাংলাদেশ গণপ্রজাতন্ত্র গঠিত হয়। বার্মা, শ্রীলঙ্কা ও মালদিভের প্রাক্তন ব্রিটিশ উপনিবেশগলিও স্বাধীনতা লাভ করে। নেপাল তার স্বাধীনতা মজবুত করছে এবং ভুটান জাতিসঙ্ঘের সদস্যভুক্ত হয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ার সদ্যস্বাধীন রাষ্ট্রগুলির অর্থনীতি মূলত কৃষিনির্ভর। কৃষিতেই তাদের জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ কর্মরত এবং এটিই অর্ধাংশের বেশি জাতীয় আয়ের উৎস। উৎপাদনের এই শাখায় চা, তামাক, রবার এবং রপ্তানিযােগ্য অন্যান্য কৃষিজাত ফসল চাষের গুরুত্ব খুবই উল্লেখযােগ্য। ক্ষুদ্র কৃষকদের অধ-গ্রাসাচ্ছাদনসর্বস্ব অর্থনীতি ও জমিদারীগুলি নিজেদের খাদ্যচাহিদা মেটাতে পারে না। কৃষির অনগ্রসরতা এসব দেশের শিল্পােন্নয়নের মন্থর গতির একটি প্রধান কারণ।
তথ্যসূত্র:
১. কনস্তানতিন স্পিদচেঙ্কো, অনুবাদ: দ্বিজেন শর্মা: বিশ্বের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ভূগোল, প্রগতি প্রকাশন, মস্কো, বাংলা অনুবাদ ১৯৮২, পৃ: ১২৩-১২৫।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।