সুইজারল্যান্ড স্থায়ী নিরপেক্ষ দেশ ঘোষিত হওয়ার পর দেড় শতাধিক বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। এই নীতিপালন আলপস পর্বতবর্তী এই দেশের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নের পক্ষে বহুলাংশে সহায়ক ছিল। ট্রান্স-আলপসীয় রেলপথ ও সড়ক এবং রাইন নদীর মাধ্যমে সুইজারল্যান্ড পশ্চিম ইউরোপীয় দেশগুলির সঙ্গে যুক্ত।
পার্বত্য স্বাস্থ্যনিবাসের জন্য বিখ্যাত এই দেশে সারা দুনিয়া থেকে প্রতি বছর অসংখ্যক পর্যটক আসে। কিন্তু পর্যটন শিল্পের যথেষ্ট গুরুত্ব সত্ত্বেও আসলে দেশের অর্থনৈতিক ভিত আধুনিক শিল্পেই প্রোথিত। বিশ্ব একচেটিয়া পুঁজির দুর্ভেদ্য কোষাগারখ্যাত এখানকার ব্যাঙ্কব্যবস্থার ভূমিকাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
স্থানীয় কাঁচামালের অভাবের জন্য সুইস শিল্প এমন ধরনের অত্যুচ্চ মানের পণ্য তৈরিতে বিশেষীকৃত যাতে সামান্য পরিমাণ উপকরণ, কিন্তু প্রভূত দক্ষতার প্রয়োজন হয়। তার মেশিন নির্মাণ শিল্পগুলি আমদানিকৃত ও অংশত স্থানীয় উচ্চ মানের ধাতু ব্যবহার করে।
সুইজারল্যান্ড ফ্রান্সের চেয়ে বেশি পরিমাণ টার্বাইন, জেনারেটর ও অন্যান্য বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম তৈরি করে। ধাতুশিল্পের সাজসরঞ্জাম রপ্তানিতে সে ব্রিটেনের সমতুল্য। বিশ্বে ঘড়ি তৈরি ও রপ্তানিতে এই দেশের অংশভাগ বৃহত্তম।
উৎপাদনের দীর্ঘ প্রতিষ্ঠিত শাখাগুলির মধ্যে বস্ত্র ও অ্যালুমিনিয়াম শিল্প বিশেষ অগ্রগণ্য। আমদানিকৃত বক্সাইট ও স্থানীয় সস্তা জলবিদ্যুতের সাহায্যে সুইজারল্যাণ্ড বছরে প্রচুর অ্যালুমিনিয়াম উৎপাদন করে। তার অত্যুন্নত রাসায়নিক শিল্প থেকে সার, প্লাস্টিক, রঙ ও ঔষধ উৎপন্ন হয়। পুঁজিবাদী দেশে শক্তিশালী সুইস রাসায়নিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলির বহ, সংস্থা রয়েছে। স্থানীয় শোধনাগারগুলিতে আমদানিকৃত তৈল শোধনের ভিত্তিতে দেশে তৈল-রাসায়নিক শিল্পও বিকশিত হচ্ছে।
সুইজারল্যান্ডের বিজলির প্রায় সবটুকুই জলবিদ্যুৎ স্টেশন থেকে উৎপন্ন এবং তার শিল্প ও অর্থনীতি সামগ্রিকভাবে এর উপরই নির্ভরশীল। সে বছরে ৪৪০০ কোটি কিলোওয়াট-ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন করে।
সুইজারল্যান্ডের শিল্প মোটামুটি সমানভাবেই শহরকেন্দ্রিক। জুরিক, বাদেন, জেনোয়া ও বাসেল প্রধান শিল্পকেন্দ্র। রাজধানী বার্ন শিল্পগত গুরুত্বের দিক থেকে জুরিক ও বাসেলের পর তৃতীয় স্থানের অধিকারী। ভ্লাদিমির লেনিন বার্নে কিছুদিন বসবাস ও কাজ করেছিলেন। একদা শহরটি ছিল প্রবাসী রুশে বিপ্লবীদের কর্মকেন্দ্র।
এখানকার দুগ্ধশিল্পই প্রধান কৃষিপেশা। কৃষিজমির একাংশ জুড়ে আছে ফলবাগান, আঙুরখেত ও সব্জিভুঁই। কিন্তু এই কৃষিতে দেশের খাদ্যচাহিদা মেটে না। সুইজারল্যাণ্ডকে অধিকাংশ খাদ্যই আমদানি করতে হয়।
তথ্যসূত্রঃ
১. কনস্তানতিন স্পিদচেঙ্কো, অনুবাদ: দ্বিজেন শর্মা: বিশ্বের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ভূগোল, প্রগতি প্রকাশন, মস্কো, বাংলা অনুবাদ ১৯৮২, পৃ: ২০১-২০২।
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।