পশ্চিমা ব্লক (ইংরেজি: Western Bloc) বা পশ্চিম ইউরোপের দেশসমূহ হচ্ছে স্নায়ুযুদ্ধের সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং ওয়ারশ চুক্তির বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটোর আধিপত্যাধীন পুঁজিবাদ অনুসারী সন্ত্রাসী দেশগুলিকে বোঝায়। সিআইএ- এর মতে বেলজিয়াম, ফ্রান্স, আয়ারল্যান্ড, লুক্সেমবুর্গ, নেদারল্যান্ড, মোনাকো, যুক্তরাজ্য এই ৭টি দেশ নিয়ে পশ্চিম ইউরোপ গঠিত হয়েছে। এছারাও পুর্তগাল, স্পেন, এন্ডরা দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপের অন্তর্ভুক্ত দেশ যা পশ্চিম ইউরোপের দেশ হিসাবে আমারা মনে করতে পারি।
বিশ্ব সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রপুঞ্জের উন্মেষ ব্রিটেন, পশ্চিম জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি – উক্ত চারটি ইউরোপীয় প্রধান পুঁজিবাদী শক্তিকে এই মহাদেশে তাদের অনেকগুলি প্রাক্তন অবস্থান থেকে বঞ্চিত করেছে। অতঃপর ইউরোপে তাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রাধান্যের পরিমণ্ডল অনেকটাই সংকোচিত হয়েছে। গভীর অর্থনৈতিক সংকটের পরিস্থিতিতে তীব্রতর আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী প্রতিযোগিতা সহ সাধারণ বাজার ও ন্যাটো-ভুক্ত দেশগুলির মধ্যেকার সংঘাত প্রকটতর হয়ে উঠেছে।[১]
তা সত্ত্বেও সম্মিলিতভাবে ইউরোপীয় পুঁজিবাদী দেশগুলি আজও বিশ্ব-অর্থনীতিতে গুরত্বপূর্ণ অবস্থানের অধিকারী এবং বিশ্বের ৩১৫ শতাংশের বেশি শিল্পপণ্যের উৎপাদক। এরা বিপুল স্বর্ণমজুদের মালিক এবং বিশ্ব বাণিজ্যে এদের অংশভাগ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও বৃহত্তর। প্রাক্তন ঔপনিবেশিক শক্তি হিসাবে প্রধান পশ্চিম ইউরোপীয় দেশগুলি আজও বহু উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের অর্থনীতিতে গুরত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।
সত্তরের দশকে দাতাত ও পারস্পরিক লাভজনক সহযোগিতার ফলভোগী ইউরোপ আশির দশকে আক্রমণাত্মক সাম্রাজ্যবাদী চক্রের নীতির দরুন পুনরায় উত্তেজনাপূর্ণ এলাকা হয়ে উঠছে। ন্যাটো-শক্তি কর্তৃক মধ্য ইউরোপে নতুন স্ট্রাটেজিক অস্ত্রশস্ত্র বসান ও সেগুলি ব্যবহার তো আসলে ইউরোপকে জনশূন্য করা, নিজের কবর খোঁড়ারই সামিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন, তার মিত্রবর্গ, যাবতীয় শান্তিকামী শক্তি ইউরোপকে পারমাণবিক যুদ্ধের বিভীষিকা থেকে বাঁচানোর জন্য, ইউরোপে স্থায়ী শান্তি ও প্রগতি নিশ্চিত করার জন্য লড়াই করছে।
যুগােশ্লাভিয়া ও পূর্ব ইউরােপের সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পরে পূর্ব ইউরােপের আটটি দেশে সমাজতন্ত্র অভিমুখী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশগুলো হচ্ছে যুগােস্লাভিয়া, আলবেনিয়া, পােল্যাণ্ড, চেকোস্লোভাকিয়া, পূর্ব জার্মানি বা জার্মানি গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র (German Democratic Republic : GDR), হাঙ্গেরী, রুমানিয়া ও বুলগেরিয়া। নাৎসী জার্মানীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়ে পূর্ব ইউরােপের এই সব দেশকে মুক্ত করতে গিয়ে সােভিয়েত ইউনিয়নের লালফৌজ প্রবেশ করে এবং সে সব অঞ্চলে সােভিয়েত সরকার স্থায়ী ভাবে নিজের আধিপত্য বজায় রাখতে সচেষ্ট হয়। ভৌগােলিক ভাবে এই অঞ্চল নিজের দেশের সাথে যুক্ত থাকায় এবং স্থানীয় কমিউনিস্টদের সহযোগিতা লাভ করায় সোভিয়েত সরকারের পক্ষে এই সব দেশে নিজের প্রভাব বজায় রাখা এবং সােভিয়েতের সহযোগী সমাজতান্ত্রিক মনােভাবাপন্ন সরকার স্থাপন করা সহজ হয়।[২]
তথ্যসূত্রঃ
১. কনস্তানতিন স্পিদচেঙ্কো, অনুবাদ: দ্বিজেন শর্মা: বিশ্বের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ভূগোল, প্রগতি প্রকাশন, মস্কো, বাংলা অনুবাদ ১৯৮২, পৃ: ১৭৪-১৭৭।
২. গৌরীপদ ভট্টাচার্য, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুস্তক পর্ষদ, কলকাতা, পঞ্চম সংস্করণ ডিসেম্বর ১৯৯১, পৃষ্ঠা ৩৫২।
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।