রক্তচাপ বা ব্লাডপ্রেশার নিয়ন্ত্রণে দশটি ভেষজ চিকিৎসা পদ্ধতি

উচ্চ রক্তচাপ ও নিন্ন রক্তচাপ যেকোন কারণে হতে পারে। এই ধরণের সমস্যায় প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য নিম্নে ১০টি খাবার বা ভেষজ উপাদানের ব্যবহার দেওয়া হলও-

১. সুষনিশাক: ব্লাডপ্রেসার বেশি থাকলে কাঁচা সুষনিশাক বা সুনসুনি শাক আন্দাজ ১২ গ্রাম বেটে, জলে গুলে, ছেকে নিয়ে একটু মিছরি বা চিনি মিশিয়ে সরবৎ করে খেতে হয়; তবে ডায়াবেটিস থাকলে অথবা অম্লরোগ থাকলে কোনো মিষ্টি দেওয়া চলবে না; আর শাক শুকিয়ে গেলে ৩ থেকে ৪ গ্রাম আন্দাজ ৩/৪ কাপ জলে সিদ্ধ করে এক কাপ থাকতে নামিয়ে, ছেকে ওটাকেই সরবৎ করে খেতে হয়; তবে সিদ্ধ করার পূর্বে একটু থেঁতো করে দেওয়াই ভাল।

২. সর্পগন্ধার: পূর্বে উন্মাদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করার সময় ৫ থেকে ৭টি গোলমরিচ বাঁটা এর সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হতো। হয়তো এর উদ্দেশ্য সর্পগন্ধার অবসাদ আনা দোষটাকে সে অনেকটা কাটিয়ে দেয়, যেহেতু গোলমরিচ হৃদবলকারক, উষ্ণগুণবিশিষ্ট ও উত্তেজক।

৩. সজনা: নাফেন সংবাদ প্রতিষ্ঠানের একটি সংবাদ প্রকাশ বার্মিজ চিকিৎসকগণের মতে-সজনের পাকা পাতার টাটকা রস যা জলে বেটে নিংড়ে নিতে হবে, তা দুইবেলা আহারের ঠিক অব্যবহিত পূর্বে ২ বা ৩ চা-চামচ করে খেলে সপ্তাহের মধ্যে প্রেসার কমে যায়। তবে যাদের প্রস্রাবে বা রক্তে সুগার আছে, সেক্ষেত্রে এটা খাওয়া নিষেধ করেছেন। এটির সত্যাসত্য বৈজ্ঞানিকগণকে দেখতে অনুরোধ করি।

৪. অর্জুন ছাল: যাঁদের বুক ধড়ফড় করে অথচ হাই ব্লাড প্রেসার নেই, তাঁদের পক্ষে অর্জুন ছাল কাঁচা হলে ১o থেকে ১২ গ্রাম অথবা শুষ্ক হলে ৫ থেকে ৬ গ্রাম একটু থেঁতো করে, আধ পোয়া দুধ আর আধ সের জল একসঙ্গে সিদ্ধ করে, আন্দাজ আধ পোয়া থাকতে নামিয়ে, ছেঁকে বিকেলের দিকে খেতে হবে। তবে গরম অবস্থায় ঐ সিদ্ধ দুধটা ছেঁকে রাখা ভাল। এর দ্বারা বুক ধড়ফড়ানি নিশ্চয়ই কমবে। তবে পেটে বায়ু না হয় সেদিকটাও লক্ষ্য রাখতে হয়।

আরো পড়ুন:  কৃমি-র লক্ষণ ও প্রতিকারের বারোটি ভেষজ চিকিৎসা ও প্রয়োগ

৫. রসুন: রসুন, পুদিনা, জিরে, ধনে, গোলমরিচ ও সৈন্ধব একসঙ্গে মিশিয়ে পিষে নিয়ে চাটনি মতো করে খেলেও ব্লাডপ্রেসার কমে। রসুন পিষে দুধে মিশিয়ে পান করলে রক্তচাপ অথাৎ ব্লাডপ্রেসার কমে। রসুন ব্লাডপ্রেসারের মহৌষধ।

৬. মধু: উচ্চ রক্তচাপ কমাতে: দুই চা চামচ পাতিলেবুর রসের সঙ্গে এক চা চামচ মধু ব্লাড প্রেশারে যাঁরা ভুগছেন তাঁদের উচ্চ রক্তচাপ কমবে।

৭. ধনিয়া: উচ্চ রক্তচাপ এর কারণে যদি পিপাসা লাগে সেক্ষত্রে পলতার পাতা তিনটি এবং ঐ পলতার ডাঁটা (stem) ৭ থেকে ৮ ইঞ্চি, ধনে এক চা চামচ, এগুলোকে একটু থেঁতো করে এক কাপ গরম জলে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখার পর ২ থেকে ৩ চা চামচ খেতে দিলে পিপাসার শান্তি হয়।

৮. মিশ্রিদানা বা চিনিপাতা: উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশনে এর পাতা ব্যবহার করা হয়।

৯. বিশল্যকরণী: বিজ্ঞানীরা অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর স্থির সিদ্ধান্তে এসেছেন যে, বিশল্যকরণীর মধ্যে ‘ভোগেলিন’ নামে এক ধরনের জৈব যৌগ রয়েছে। এটা যে কোনো ধরনের উচ্চ রক্তচাপ অর্থাৎ ‘হাই-ব্লাড প্রেসার’-কে কমিয়ে স্বাভাবিক করতে পারে। কাজেই বিশল্যকরণী গাছের মূল, পাতা অথবা টাটকা কচি ডাল তুলে এনে সামান্য পানি দিয়ে বেটে তার রস দশ মি.লি. পরিমাণ প্রতিদিন সকালে খালিপেটে একবার করে খেলে রক্তের চাপ অবশ্যই স্বাভাবিক হবে। ৪ থেকে ৫ দিন ওষুধ খাওয়ার পর রক্তের চাপটা অবশ্যই পরীক্ষা করে দেখা দরকার। স্বাভাবিক হলে ওষুধ বন্ধ করে দিতে হবে।

১০. তেঁতুল: দেহে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং হৃদরোগীদের জন্য খুব উপকারী।

তথ্যসূত্র:

১. আয়ূর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্রচার্য: ‘চিরঞ্জীব বনৌষধি‘ খন্ড ২, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৪।

১. সাধনা মুখোপাধ্যায়: সুস্থ থাকতে খাওয়া দাওয়ায় শাকসবজি মশলাপাতি, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, নতুন সংস্করণ ২০০৯-২০১০।

আরো পড়ুন:  বমি বা বমন বন্ধ করার ১৮টি ভেষজ ঘরোয়া সহজ পদ্ধতি যা জেনে রাখা ভাল

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Woonjiawei

Leave a Comment

error: Content is protected !!