আমাশয় রোগ হওয়ার কারণ ও প্রতিকারের উপায়

আমাশয় রোগ-এ (ইংরেজি: Dysentery) কখনও ভোগেনি এমন মানুষ খুব কম আছে বাংলাদেশে। কিন্তু আমাশা কেন হয় সেটা যদি না জানা থাকে তাহলে এটা বারবার ও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। আমাশয়ের আম হচ্ছে বৃহৎ অন্ত্রের ঝিল্লি রস; তা বেশি পরিমাণে বেরোতে পারে কোনো সংক্রমণের দরুণ।

আমাশয় রোগ-এর কারণ:

‘এন্টামিবা হিস্টোলিটিকা’ নামে এক ধরনের পরজীবী জীবাণু আছে। সেই জীবাণু দ্বারা বৃহদন্ত্রের সংক্রমণ ও প্রদাহকে আমাশয় বলে। আমাশায় আক্রান্ত রোগীর মল দিয়ে এই জীবাণুর সিট নির্গত হয়। এই সিস্ট কোনোভাবে খাবারের সঙ্গে মিশে গিয়ে অন্য কোনো লোকের পেটে ঢুকলে সেই ব্যক্তিও সংক্রামিত হয়। আমাশয় সিস্ট সাধারণত খাবার পানির সাহায্যে একজন রোগীর মল থেকে অনেক লোকের খাবারে মেশে।

আমাশয় চিকিৎসার জন্যে অনেক কার্যকরী ওষুধ রয়েছে যেগুলো খেলে আমাশা একেবারে নির্মূল হয়ে যায়। কাজেই আমাশা সারে না এ কথা ঠিক নয়, তবে আমাদের দেশে লোকের বারবার এই রোগে ভোগে তার কারণ হচ্ছে দূষিত খাবার পানির মাধ্যমে তারা বারবার সংক্রামিত হয়। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে পরিশুদ্ধ খাবার পানির সরবরাহের এবং উন্নত নিষ্কাশন ব্যবস্থার দ্বারা আমাশা প্রায় নির্মূল করা সম্ভব হয়েছে। আমাদের দেশেও পানি ফুটিয়ে খেলে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।

সাদা আম অবশ্য সব সময়ই যে সংক্রমণ থেকে হয়, তা নয়। বৃহদন্ত্রের ঝিল্লির সঙ্গে যদি কোনো কিছুর ঘর্ষণ খুব বেশি হয়, তাহলেও এই আম বেশি পরিমাণে বেরোতে পারে। পায়খানা খুব শক্ত হয়ে গেলেও ঝিল্লির, ঘর্ষণেও বেশি আম হতে পারে। বৃহদন্ত্রের কোনো টিউমার বা বৃহদন্ত্রের বেশি সংকোচন বা স্প্যাস্টিক কোলন জনিত কারণেও বেশি আম বেরোতে পারে। এসব ক্ষেত্রে আমাশা ভেবে দোকান থেকে আমাশয়ের ঔষধ বা বড়ি কিনে খাওয়া উচিত হবে না।[১]

রোগ প্রতিকারের উপায়:

যদি আমাশয় খুব বেড়ে যায় ও স্থায়ী রূপ নেয় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ। এছাড়া আমাশয় রোগ-এর চিকিৎসা ভেষজ উপায়ে বাড়িতেই এরোগের সমাধান করতে পারবেন। আমরা বাড়িতে রান্নায় আদা ব্যবহার করে থাকি, সেই আদা শুকালে শুঁঠ হয় তা আমাশয়ের সারাতে বেশ কার্যকরী। এছাড়া গোল মরিচ চূর্ণ সকাল ও বিকাল পানির সাথে খেলে রোগের উপশম হয়। আমড়াঅর্জুন গাছের ছাল ভেষজ ঔষধ হিসাবে ব্যবহার করা হয়।[২]

আরো পড়ুন:  বমি বা বমন বন্ধ করার ১৮টি ভেষজ ঘরোয়া সহজ পদ্ধতি যা জেনে রাখা ভাল

আমাশয় নানা কারণে হতে পারে। এজন্য পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি খাদ্যাভারে দিকে মনযোগী হতে হবে। ভাজা পোড়া, শুকনা মরিচের ঝাল, বাসি খাবার, কাঁচা ফল না ধুয়ে খাওয়া যাবে না। যারা শিল্পাঞ্চলে বাস করলে পানি না ফুটিয়ে পান করা বা গ্রামাঞ্চলে পুকুর, নদী, খালের পানি পরিশোধন ছাড়া ব্যবহার করা উচিৎ না। আমাশয়ের চিকিৎসার বিস্তারিত জানতে পাশের লেখার লিংকে যেতে পারেন: আমাশয় রোগ সারাতে ঘরোয়া পদ্ধতিতে ১৩টি ভেষজ চিকিৎসা

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্রঃ

১. মাওলানা জাকির হোসাইন আজাদী: ‘গাছ-গাছড়ায় হাজার গুণ ও লতাপাতায় রোগ মুক্তি, সত্যকথা প্রকাশ, বাংলাবাজার, ঢাকা, প্রথম প্রকাশ ২০০৯, পৃষ্ঠা, ২৩-২৪।

২. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১ ও ২, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা।

Leave a Comment

error: Content is protected !!