বিভিন্ন কারনে ও যেকোন বয়সে চুলের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই সমস্যাগুলো হচ্ছে- চুল ঝরে যাওয়া, টাক, অকালে চুল পাকা, মাথার ত্বকে চুলকানি, খুস্কি, চুল মলিন হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। অতিরিক্ত কাজের চাপ, দুচিন্তা, ঘুমের অনিয়ম, খাবার সংক্রান্ত সমস্যা ইত্যাদি। আমরা যদি দৈনদিন জীবনে মনোযোগী হয় তাহলে চুলের সমস্যা কি তার সমাধান করতে পারবো।
১. সেগুন: অনেকের মাথার চুল কিছুতেই বাড়তে চায় না, সেক্ষেত্রে সেগুনের বীজের তেল একভাগ আর নারকোল তেল দুই ভাগ একসঙ্গে মিশিয়ে স্নানের পরে ২০। ২৫ ফোঁটা অথবা প্রয়োজনমত মাথায় লাগাতে হবে। শুধু এই তেলটা মাথায় মাখলে চুলে আঠা হবে। সেইজন্য তেলটাকে একটু ফিলটার করে নিলে সুবিধে হয়।
২. কাঁকরোল: যাঁদের চুল উঠে যাওয়া কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না, কাঁকরোলের মূল ১০ গ্রাম বেটে আধ কাপ জলে গুলে তাকে ছেকে নিয়ে ওই জলটা চুলের গোড়ায় লাগাতে হবে, তার কিছুক্ষণ বাদে মাথা ধুয়ে ফেলতে হয়। এটা একদিন অন্তর বা দু’দিন অন্তর দুই-তিন দিন লাগালে চুল পড়া বন্ধ হয়ে যায়।
৩. জবা: পাকা চুল কাল করতে হলে গরুর দুধ ৪ লিটার, জবা ফুল বেটে তার রস সমপরিমাণ এবং যষ্টিমধুর কল্ক ৯০ গ্রাম একটি স্টিলের পাত্রে এক লিটার তেলের সাথে মিশিয়ে আগুনে ফোঠাতে হবে। দুধ ও ফুলের রস মিশে গেলে মাত্র আঁচ থেকে নামিয়ে ঠাণ্ডা হ’বার পর কাচের শিশিতে ভরে রাখতে হবে। এর তেল নিয়মিত ব্যবহার করলে পাকা চুল ধীরে ধীরে কাল হয়।
বহু মানুষের দেখা যায় মাথার খানিকটা অংশে চুল সম্পূর্ণ উঠে গিয়ে টাকের মত চক্ করছে। এরকম অবস্থা কেবল মাথায় নয়, দাড়ি এবং চোখের ভ্রুতেও হতে পারে। এটা এক ধরনের অতি ক্ষুদ্র পোকা যা চুলের কিছুটা খেয়ে ফেলে। চুল গজালেই তারা সেটা খেতে থাকে। ফলে মনে হয় টাক পড়েছে। জবা ফুল বেটে গোসল করার পর ভিজে চুল শুকিয়ে গেলে, ঐ জায়গায় দিনকতক প্রলেপ দিলে আবার নতুন চুল গজাবে এবং টাক থাকবে না। তবে রোগের প্রথম অবস্থায় ব্যবস্থা উপকার পাওয়া যাবে। তবে রোগ পুরানা হয়ে গেলে এ এত আর কাজ হবে না।
জবা গাছের টাটকা পাতার রস এবং মসপরিমাণ জলপাই-এর তেল মিশিয়ে ভালভাবে ফোটাতে হবে। রস তেলের মধ্যে মিশে কেবল যখন তেলটা থাকবে তখন আঁচ থেকে পাত্রটি নামিয়ে ঠাণ্ডা হলে কাচের শিশিতে ভরে রাখতে হবে। এ তেল নিয়মিত মাখলে একদিকে চুল যেমন বাড়বে তেমনি চুল সহজে পারবে না।
৪. করবী: করবী গাছের মূলের ছাল দুধ দিয়ে বেটে গোসল করার তিন ঘণ্টা আগে মাথায় মাখলে কেশ পাকা বন্ধ হয়। এটা বোঝার জন্যে পাকা চুল আগে। সব তুলে ফেলে তারপর ওষুধ প্রয়োগ করলে এর গুণাগুণ সহজেই বোঝা যাবে।
৫. ভৃঙ্গরাজ বা ভীমরাজ: এর পাতার রস করে দুপুর বেলার দিকে লাগাতে হয়। এই পাতার রস দিয়ে তেল পাক করে লাগালেও কেশপতন বন্ধ হয়।
যেসব মা শ্বেতপ্রদরের শিকার হয়েছেন, তাঁদের মাথার চুল প্রায় ক্ষেত্রেই উঠে যেতে থাকে। তাঁরা ভৃঙ্গরাজের পাতা সিদ্ধ করে সেই জলে দিনে ২ বার মাথা ধুয়ে ফেলবেন, এর দ্বারা ৩।৪ দিনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ফল পাবেন।
৬. মেহেদিপাতা: হরীতকী (Terminalia chebula) ১টি ও মেহেদিপাতা ১ তোলা মতো একটু থেতো করে আধ পোয়া জলে সিদ্ধ করে আধ ছটাক মতো থাকতে নামিয়ে ছেঁকে নিয়ে ঠাণ্ডা হলে সপ্তাহে ২ দিন মাথায় লাগাতে দিয়ে থাকেন ইউনানি চিকিৎসক সম্প্রদায়। আমি মনে করি এর সঙ্গে কেশতের পাতা (যার চলতি নাম কৈশত) (Eclipta alba) ২।১ তোলা ক্বাথ করার সময় ওর সঙ্গে দিলে আরও ভাল হয়।
৭. বহেড়া: যাঁদের ছেলেবেলায় বা কম বয়সে পাক ধরেছে, তাঁরা বহেড়া ১০ গ্রাম (বীজ বাদ) জল দিয়ে বেটে, এক কাপ জলে গুলে, ছে’কে, সেই জল দিয়ে কেশ ধুয়ে ফেলবেন। এটা দুপুরের দিকে করাই ভাল, নইলে মাথায় জল বসে সর্দি হতে পারে।
৮. পটোল: এর রস মাথায় লাগালে টাক পড়া বন্ধ হয় ও মাথায় নতুন চুল গজায়। তেতো পটোলের পলতা পাতার রস টাকের পক্ষে উপকারী। পলতা পাতার রস মাথায় ঘষলে নতুন চুল গজায়।
৯. আপাং: আপাং-এর টাকা শিকড় বেটে (কতটা পরিমাণ বাটা হবে তা নির্ভর করছে কি পরিমাণ চুল পেকেছে তার ওপর, ছেলেদের কম লাগবে এবং মেয়েদের লম্বা চুলে বেশি লাগবে।) দুপুরে গোসল করতে যাবার দু-তিন ঘণ্টা আগে সারা মাথায় ব্যবহার করলে উপকারটা সহজেই বুঝতে পারা যাবে। এতে একদিকে চুলের রং যেমন কালো হবে, তেমনি নতুন চুলও গজাবে।
১০. তিল: তিলের শিকড়ে চুলের কালো রং করার ক্ষমতা রয়েছে। কাঁচা শিকড় বেটে সেটা গোসল করতে যাবার দুই-তিন ঘণ্টা আগে মাথায় মাখলে পাকা চুল ধীরে ধীরে কালো হবে।
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্রঃ
১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১,২,৪,৫, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, তৃতীয় মুদ্রণ ১৪০৩।
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।