ক্রীড়া, বয়স ও লিঙ্গ ভেদে শারীরিক সক্ষমতা অর্জনে ব্যায়ামের গুরুত্ব

ক্রীড়া, বয়স ও লিঙ্গ ভেদে বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম হয়। শারীরিক সক্ষমতা অর্জনে ব্যায়ামের গুরুত্ব (ইংরেজি: The importance of exercise in achieving physical fitness) তাই অনেক। যেমন, ক্রীড়ার ভিন্নতা অনুযায়ী ব্যায়ামের ধরনও আলাদা হয়ে থাকে। সকল খেলার জন্য একই ধরনের ব্যায়াম উপযুক্ত নয়। কোনো খেলায় পায়ের শক্তির প্রয়োজন আবার কোনো খেলায় হাতের শক্তির বেশি প্রয়োজন হয়। খেলার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যায়াম করা হলে ঐ খেলায় ভালো ফল আশা করা যায়। যেমন,  

ফুটবল: ফুটবল খেলায় সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয় শক্তি, দম ও ক্ষিপ্রতা। সুতরাং যারা ফুটবল খেলবে তাদেরকে শক্তি ও দম বাড়ানোর ব্যায়াম বেশি করে করতে হবে। 

সাঁতার: সঁতারুদের হাত, পা-এর শক্তি এবং দম বাড়ানোর ব্যায়াম বেশি করে করতে হবে। 

ভলিবল: ভলিবল খেলায় স্ম্যাশ করতে হয় বলে হাতের শক্তি বেশি প্রয়োজন। একই সাথে স্ম্যাশ করার জন্য লাফ দিতে হয় বলে পায়েরও শক্তির প্রয়োজন। সেজন্য হাত ও পায়ের শক্তি বাড়ানোর ব্যায়াম করা উচিত। 

বাস্কেটবল: যেসব শিক্ষার্থী বা খেলোয়াড় বাস্কেটবল খেলায় অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে দম, ক্ষিপ্রতা, হাত ও পায়ের ব্যায়ামের উপর জোর দিতে হবে। 

হ্যান্ডবল: হ্যান্ডবল খেলোয়াড়দের হাত, পা ও ক্ষিপ্রতার বেশি প্রয়োজন হয়। সেজন্য হাত ও পায়ের শক্তি বৃদ্ধির ব্যায়াম এবং ক্ষিপ্রতা বাড়ানোর ব্যায়াম করা প্রয়োজন। 

কাবাডি: কাবাডি খেলাকে শক্তির খেলা বলা হয়ে থাকে। তবে শুধুমাত্র শক্তি হলেই কোনো খেলায় ভালো করা যায় না। কাবাডি খেলায় হাতের শক্তি ও ক্ষিপ্রতার বেশি প্রয়োজন। 

ক্রিকেট: ক্রিকেট খেলায় হাত ও বাহু এবং পায়ের শক্তি বেশি প্রয়োজন হয়। তাই হাত ও বাহু এবং পায়ের শক্তি বাড়ানোর ব্যায়াম করা উচিত। 

বয়স ও লিঙ্গভেদে সক্ষমতা অর্জনে ব্যায়ামের গুরুত্ব

বয়স ও লিঙ্গভেদে শারীরিক সক্ষমতা অর্জনে ব্যায়ামের ধরন ও মাত্রার তারতম্য ঘটে। বয়স ও লিঙ্গভেদে তাই ব্যায়ামের আলাদা গুরুত্ব বের করতে হয়। সব বয়সের জন্য যেমন সব ধরনের ব্যায়াম উপযোগী নয়; তেমনি লিঙ্গভেদেও ব্যায়ামের তারতম্য ঘটে এবং এর উপযোগিতা নির্ধারণ করা হয়।

আরো পড়ুন:  শারীরিক সক্ষমতা হচ্ছে যোগ্যতা দিয়ে শারীরিক শিক্ষার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা

বয়সভেদে ব্যায়াম 

সব বয়সের লোকরাই শারীরিক শিক্ষা তথা খেলাধুলার কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারেন। তবে বয়সভেদে এসব কার্যক্রমে তারতম্য দেখা যায়। শুধু ব্যায়ামই নয় খাবার-দাবার, পছন্দ-অপছন্দ, শারীরিক সক্ষমতা ইত্যাদিও ভিন্নতর হয়। যেমনশিশুদের শারীরিক সক্ষমতা বড়দের মতো নয়। শিশুদের সক্ষমতা অর্জনের জন্য খেলার ছলে ব্যায়াম’ এ কথা মনে রেখে তাদের ব্যায়াম তথা খেলাধুলা নির্বাচন করতে হবে। শিশুদের ব্যায়ামের গুরুত্ব বুঝতে হবে মূলত বড়দেরকেই। যেমন- ক্যাঙ্গারুর মতো লাফাও, হাতির মতো হাঁটো, ব্যাঙের মতো লাফাও, হাঁসের মতো চলো, দৌড়ে ঐ দেয়াল ছুঁয়ে আসো বা অন্য কোনো চিত্ত বিনোদনমূলক খেলাধুলার মাধ্যমে শিশুদেরকে শারীরিক যোগ্যতা অর্জন করাতে হবে। কিশোরদের জন্য কিছুটা নিয়মতান্ত্রিক ব্যায়াম ও খেলাধুলা নির্বাচন করতে হবে। যেমন- এক লাইনে দাঁড়ানো, ফাইলে দাঁড়ানো, হাত ও পায়ের বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম করা। ছন্দময় ব্যায়াম, সঙ্গীর সাথে ব্যায়াম, বল নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করা, ছোঁয়াছুঁয়ি খেলা এ জাতীয় ব্যায়াম বা খেলা নির্বাচন করে শারীরিক যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। তবে শিশু ও কিশোরদের ভারোত্তোলন জাতীয় কোনো কঠিন ব্যায়াম করানো যাবে না।

যুবকদের জন্য সময় ও ব্যায়াম নির্বাচন করে নিয়মমাফিক অনুশীলন করাতে হবে। এতে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন খেলার সঠিক কৌশল জানতে পারবে এবং ভবিষ্যত খেলাধুলার ভিত গড়ে উঠবে। লক্ষ্য রাখতে হবে অতিরিক্ত ব্যায়ামের ফলে শিক্ষার্থী যেন অবসাদগ্রস্ত হয়ে না পড়ে। কোনো অঙ্গের উন্নতির জন্য নির্দিষ্ট ব্যায়াম বাছাই করে অনুশীলন করাতে হবে। উপরোক্ত বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমেই শারীরিক সক্ষমতা অর্জন করাতে হবে। বয়স্কদের জন্য হালকা ব্যায়াম, যেমন- হাঁটা, জগিং, ধীরে ধীরে দৌড়, এভাবে ব্যায়াম নির্বাচন করে শারীরিক সক্ষমতা ধরে রাখতে হবে।

লিঙ্গভেদে ব্যায়াম 

শারীরিক শিক্ষা অর্থাৎ খেলাধুলা পুরুষ ও মহিলাদের জন্য পৃথক হলেও শিশু বয়সে ছেলে ও মেয়েদের খেলাধুলা ও ব্যায়াম পৃথক করা যায় না। কারণ সেসময় শারীরিক গঠনের ক্ষেত্রে তেমন কোনো পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় না। শিশুদের জন্য শারীরিক শিক্ষার কার্যক্রম তৈরির সময় নিয়ম কানুন নেই এমন খেলাধুলায় তারা যাতে অংশগ্রহণ করতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে, যাতে তারা স্বাধীনভাবে অঙ্গ প্রত্যঙ্গ পরিচালনার মাধ্যমে খেলাধুলা করার সুযােগ পায়। শিশুদের চিন্তাশক্তি ও কল্পনা বিকাশের জন্য কল্পনা ও অনুকরণমূলক খেলাধুলা, যেমন- বিভিন্ন জীবজন্তু, যানবাহন ইত্যাদির মতো হাঁটা, লাফানো ও দৌড়াদৌড়ি রাখতে হবে। শিশুদের শারীরিক গঠনের ও শারীরিক সক্ষমতা অর্জনের জন্য খেলাধুলার মাধ্যমে শারীরিক শিক্ষার কার্যক্রম তৈরি করা উচিত যাতে শিশুর মনের বিকাশ সাধন হয়। কিশোর বয়সে অর্থাৎ ৭-১২ বছর বয়সে ছেলে এবং মেয়েদের মধ্যে সামান্য পার্থক্য দেখা যায়। মেয়েরা তখন ভারী কোনো খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করে, ছেলেরা দলগত খেলার দিকে বেশি ঝুঁকে পড়ে। তবে ব্যক্তিগত খেলাধুলায় ছেলেমেয়ে উভয়েই অংশগ্রহণ করে থাকে। যেমন- ব্যাডমিন্টন, টেবিল টেনিস, দৌড় ইত্যাদি। এ সময় থেকেই ছেলেমেয়েদের শারীরিক সক্ষমতার জন্য শারীরিক শিক্ষার কর্মসূচি পৃথক করতে হয় ।

আরো পড়ুন:  বয়ঃসন্ধিকালের পুষ্টি চাহিদা ও প্রজনন স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কিত আলোচনা

যৌবন প্রাপ্তির সাথে সাথে ছেলেমেয়েদের শারীরিক পরিবর্তন দেখা দেয়। এ কারণে তাদের কার্যক্রম ভিন্নতর হতে থাকে। ছেলেরা দলগত খেলার সাথে সাথে অ্যাথলেটিকস্, সাঁতার ইত্যাদি খেলা পছন্দ করে। ছেলেরা এ সময় সাহসিকতা এবং ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে দ্বিধাবোধ করে না। মেয়েদের শারীরিক পরিবর্তনের ফলে তাদের আচরণে সংকোচ ও লজ্জাভাব দেখা যায়। সেজন্য শারীরিক শিক্ষার কার্যক্রম আলাদা হয়ে থাকে। খেলাধুলার ক্ষেত্রে যে সমস্ত প্রতিযোগিতা হয় যেমন সাঁতার, অ্যাথলেটিকস্, ব্যাডমিন্টন, টেবিল টেনিস ইত্যাদি ছেলে ও মেয়েদের জন্য পৃথকভাবে আয়োজন করা হয়। ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে শারীরিক শক্তি ও সহিষ্ণুতার ক্ষেত্রে বড় ধরনের পার্থক্য থাকায় শারীরিক শিক্ষা কার্যক্রম ভিন্ন হয়। সুতরাং লিঙ্গভেদে শিশু পর্যায়ে পার্থক্য করা না গেলেও বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে এই পার্থক্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

Leave a Comment

error: Content is protected !!