বাগানের জন্য উদ্ভিদ নির্বাচনের পদ্ধতি

কোথাও এলোমেলোভাবে কয়েকটি উদ্ভিদ লাগিয়ে দিলেই বাগান হয় না। বাগান হবে এমন একটি স্থান বা পরিবেশ যা মনের মধ্যে একটি অনুভূতি জাগিয়ে তুলবে, সে অনুভূতি হতে পারে আনন্দের, স্নিগ্ধতার অথবা নির্জনতার। বাগান করা একটি শিল্পকর্ম। এর জন্য একদিকে যেমন সৌন্দর্য সম্পর্কে অন্তর দৃষ্টি থাকা প্রয়োজন, অপরদিকে তেমনি উদ্ভিদের আকার-আকৃতি, ফুল ধরার সময় ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশ ও চাহিদা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকা অপরিহার্য। এ দুয়ের সার্থক সমন্বয় ঘটাতে পারলেই কেবল আকর্ষণীয় বাগান তৈরি হতে পারে।

বাগানের জন্য উদ্ভিদ নির্বাচন ও নির্বাচিত উদ্ভিদ লাগানাের স্থান নির্ণয় বাগান রচনার সবচেয়ে দুরূহ কাজ। এ ব্যাপারে কোনো নির্দিষ্ট নীতিমালা অনুসরণ করা সম্ভব নয়। ব্যক্তি বিশেষের রুচিই এখানে প্রধান নিয়ামক। বাগানে লাগাবার উপযােগী উদ্ভিদ সংখ্যায় অনেক, এর মধ্য থেকে সঠিক উদ্ভিদ বেছে নেয়া সত্যিই কঠিন, বিশেষত যেখানে নির্বাচিত উদ্ভিদের সংখ্যা সীমিত রাখতে হয়।

বৃহৎ গণ্যোদ্যানের বা জাতীয় উদ্যানের বেলায় উদ্যানকে কয়েকটি অংশে ভাগ করে প্রত্যেক অংশে ভিন্নরকম পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করা যেতে পারে। যেমন, কোনো অংশে বড় বড় নিচ্ছিদ্র পল্লবধারী বৃক্ষ অনিয়মিত দূরত্বে লাগিয়ে ঘন ছায়াময় বনভূমি সদৃশ এলাকা সৃষ্টি করা যায়। এ অংশের অনুভূতি হবে নির্জনতার। অনুরূপভাবে আরেকটি এলাকায় বিভিন্ন ধরনের মৌসুমী ও দীর্ঘজীবী ফুলের গাছ লাগিয়ে সারা বছর বিচিত্র বর্ণের ফুলের মেলা বসানাে যায়। এ এলাকার অনুভূতি হবে আনন্দের।

আজকাল সারা দুনিয়ায় উদ্ভিদ রক্ষার আন্দোলন গড়ে উঠেছে। কেননা অনেক উদ্ভিদ প্রজাতিই এখন বিপন্ন। বাগানে বিপন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ রক্ষার আয়োজন রাখা যেতে পারে।

বাগানে জলাশয় থাকলে তার পাশে সব রকমের উদ্ভিদ ভাল মানায় না। জলাশয়ের ধারে কেয়া, হিজল, জারুল, কদম ও অশ্বথ ইত্যাদি উদ্ভিদ সুন্দর দেখায়। বড় বড় বাগানের একটি অংশ কেবল গুল্মের জন্য নির্ধারিত থাকে, একে shrubbery বলা হয়। অনুরূপভাবে গোলাপের জন্য রক্ষিত আলাদা এলাকাকে rosetum বলে।

আরো পড়ুন:  কন্যারি বাংলাদেশ, ভারত মায়ানমারের বিপন্ন বৃক্ষ

তথ্যসূত্র:

১. ড. মোহাম্মদ মামুনুর রশিদ, ফুলের চাষ, দিব্যপ্রকাশ ঢাকা, দিব্যপ্রকাশ সংস্করণ বইমেলা ২০০৩, পৃষ্ঠা ৭৩।

Leave a Comment

error: Content is protected !!