কাশি নিরাময়ে ঘরোয়া কয়েকটি ভেষজ চিকিৎসা

কাশি (ইংরেজি: Cough) মূলত জীবাণু থেকে শ্বাসনালীকে রক্ষা করার জন্য এক ধরণের প্রতিক্রিয়া। বাইরের কোনো বিরক্তকর বা উত্তেজক বস্তু থেকে শরীরকে বাঁচান বা সচেতেন করার জন্য ইঙ্গিত। যেই কারণেই এই কাশি হোক না কেনো তা প্রতিকার বা প্রতিরোধ করা প্রয়োজন।

কাশি থেকে মুক্তির ঘরোয়া কয়েকটি উপায়:

১.  পিত্তশ্লেষ্মাজনিত কাসিতে অড়হর পাতার রস ৭ থেকে ৮ চামচ একটু গরম করে ১ চামচের মতো মধু মিশিয়ে খেলে কাসিটা কমে যায়।

আরও একপ্রকার কাসি আছে যাতে সর্দি উঠে যাওয়ার পর একটি উপশম হয়, অথবা জল খেয়ে বমি হয়ে গেলে যে কাসির উদ্বেগটা চলে যায়, বুঝতে হবে। এই কাসি আসছে অগ্ন্যাশয়ের বিকৃতি থেকে, যেটাকে আমরা সাধারণত বলে থাকি পেট গরমের কাসি। সেক্ষেত্রে গোলমরিচ গুঁড়ো করে, কাপড়ে ছেঁকে নিয়ে, সেই গুঁড়ো এক গ্রাম মাত্রায় নিয়ে একটু গাওয়া ঘি ও মধু মিশিয়ে, অথবা ঘি ও চিনি মিশিয়ে সকাল থেকে মাঝে মাঝে একটু একটু করে ৭ থেকে ৮ ঘন্টার মধ্যে ওটা চেটে খেতে হবে। এর দ্বারা ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে ঐ পেট গরমের কাসিটা প্রশমিত হবে।

২. নব্য প্রতিশারে (কাঁচা সর্দি, হাঁচি, নাক দিয়ে কাঁচা জল পড়া) তেতুলের কাঁচা পাতাকে (৩ থেকে ৪ গ্রাম) সিদ্ধ করে তার ঠাণ্ডা জল খেলে উপশম হয়।

৩. যেসব শিশুদের মধ্যে সর্দি কাসির প্রবণতা আছে; অতি তুচ্ছ কারণেও সর্দি হয়, তাদের প্রতিদিন সকালে ৫ থেকে ১০ ফোঁটা তুলসী পাতার রস ২ থেকে ৫ ফোঁটা মধু মিশিয়ে অথবা না মিশিয়ে খাওয়ালে সে অসুবিধা থাকবে না। এমন কি এর দ্বারা শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্যও দূর হবে; এটা অবশ্য সব বয়সেই ব্যবহার করা চলে।

৪. ঘুংড়ি কাসিতে  নিসিন্দাপাতা ও তার গাছের ছালের ক্বাথে নিশ্চয়ই তা সারে। বয়সানুপাতে মাত্রা ঠিক করতে হয়।

আরো পড়ুন:  অনিদ্রা কমাতে ঘরোয়া উপায়ে নানাবিধ ভেষজ চিকিৎসা

৫. প্রবল কাসি  তার সঙ্গে কফের যোগ, সেক্ষেত্রে বাবলার ফল চূর্ণ ২ রতি (৪ গ্রেণ) মাত্রায় অল্প চিনি বা মিছরির গুড়া মিশিয়ে দিনে রাতে মোট ৩ বার খেতে হয়, এর দ্বারা শ্লেষ্মা উঠে যায়, কাসিও কমে।

৬. হপিং কাসিতে  রামবাসকের সিরাপ দুরারোগ্য হপিং কাসিকে নিরাময় করে। এটা ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে উপলদ্ধি করা যায়।

এছাড়াও কালোকাসুন্দের পাতার মিহি চূর্ণ চিনির রসে পাক করে ৩ থেকে ৪ গ্রাম ওজনের লজেন্সের মতো পাকিয়ে রাখতে হবে। প্রতিদিন সকালে একটা ও বিকালে একটা চুষে খেতে হবে, এটা চুষে খেলে দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে কাসির দমকটা কমে যাবে।

এমন কি ফেরিনজাইটিস হলে আগুনে সেঁকা মনসার পাতা হাতে চেপে রস করে সেই রসে একটু চিনি বা লবণ মিশিয়ে খেলে দুই বা তিন দিনেই উপশম হবে এবং ৪ থেকে ৫ দিনের মধ্যে এই কাসির ধমকটা চলে যাবে; এর মাত্রা হলো পূর্ণ বয়স্কের এক বা দেড় চা চামচ ১০ থেকে ১১ বৎসর বয়স পর্যন্ত ৪০ থেকে ৪৫ ফোঁটা ৬ থেকে ৭ বৎসর বয়সের হলে ১০ থেকে ১৫ ফোঁটা আর তার কম বয়সের ৫ থেকে ৭ ফোঁটা অল্প দুধের সঙ্গে খেতে দিতে হবে।

৭. খসখসে কাসি  অনন্তমূল চূর্ণ দেড় গ্রাম মাত্রায় সকালে ও সন্ধ্যায় দুবার খেতে হবে। এটাতে উপশম হয়।

৮. শুষ্ক কাসিতে একে আমরা চলতি কথায় শুকানো কাসি বলি। কাসিই হয়, কিন্তু কিছু বেরোয় না, যদিও বেরোয় সেটা আঠার মত সাধারণত এলার্জির কাসিতে এই রকম বেরোয়, এক্ষেত্রে অপরাজিতা মূলের রস আন্দাজ ১ চা চামচ আধ কাপ অল্প গরম জলে মিশিয়ে, সেই জল মুখে নিয়ে ১০/১৫ মিনিট বসে থাকতে হয় একে বলে কবল ধারণ করা আর মুখটা উচু করে এমনভাবে গরগরা করতে হয় যেন গাল তালুতে লাগে; এর দ্বারা ঐ অসুবিধেটা চলে যাবে।

আরো পড়ুন:  ত্বকের যত্ন নিতে আটটি ঘরোয়া পদ্ধতি

৯. অনেক সময় কাসি হেকে ডেকে আসে না, খসখসে, সেখানে একটু গুলঞ্চের ক্বাথে মধু মিশিয়ে খেলে অসুবিধাটা কমে যাবে।

১০. শিশুদের কাসি ও দুধে শ্বাস: দেখা যায় কাসতে কাসতে শিশুর চোখমুখ লাল হয়ে যায়, মনে হয় যেন দম বন্ধ হয়ে গেল, এইরকম অবস্থায় ২ চা চামচ, আতপ চাল ১০ থেকে ১২ চা চামচ জলে ভিজিয়ে সেই জল ৭ থেকে ৮ চা চামচ নিয়ে, ঐ জলে আধা চা চামচ ধনে বেটে, ওটাকে ছেঁকে নিয়ে সেই জলটি আধ চা চামচ করে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা অন্তর সমস্তদিন ধরে খাওয়ালে ঐ কাসিটা বন্ধ হয়ে যাবে।

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্রঃ

১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১ ও ২ আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা।

Leave a Comment

error: Content is protected !!