সাল্টু বা এমোনিয়াম সালফেট এবং ইউরিয়া সার ব্যবহৃত হচ্ছে খাদ্য নরম করতে

সাল্টু হচ্ছে খাদ্য দূষণকারী একটি বিষাক্ত উপাদান যা সাধারণত এমোনিয়াম সালফেট এবং ইউরিয়া সার গুঁড়া করে তৈরি করা হয়। তবে সাল্টু প্রকৃতপক্ষে কি কি রাসায়নিকের সংমিশ্রণ তা জানার জন্য পরীক্ষার প্রয়োজন আছে বলে বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন। উল্লেখ্য এমোনিয়াম সালফেট সার অসম্ভব এসিডিক।

সাম্প্রতিককালে সাল্টু আলোচনায় এসেছে। তন্দুরি ও নান রুটি এবং পরটা নরম করতে এই সাল্টুর ব্যবহার করা হচ্ছে বলে কথা উঠেছে। পাউরুটি ফুলে নরম হওয়া এবং পরাটা নরম করার কাজে বহুল ব্যবহৃত হচ্ছে এই অজৈব রাসায়নিক সার। সারা দেশেই অত্যন্ত সহজলভ্য আইটেম সাল্টু। বড়া, জিলাপী, পুরিতেও দেয়া হচ্ছে তা। দিনাজপুর অঞ্চলের সিঙ্গাড়াগুলো খুব নরম হয়। অনেকে সন্দেহ করছেন এতেও সাল্টু দেয়া হচ্ছে। তার মানে আমরা সাল্টু নামে খাদ্যের সাথে দুটি রাসায়নিক সার খাচ্ছি।

হোটেল মালিকরা বলছেন রুটি বা পরটা নরম চায় কাস্টমাররা, তাই এ্যামোনিয়া সারের এই সাল্টু নামের মিশ্রণের ব্যবহার চলছে। ঢাকায় বিভিন্ন হোটেলে নরম পরটা ও তন্দুর রুটিতে সাল্টুর ব্যবহার চলছে। মোহাম্মদপুর, পুরান ঢাকা অঞ্চলে সাল্টুর ব্যবহার হচ্ছে হরহামেশা।

যারা ১৯৮০-১৯৯০ সালের দিকে ঢাকায় হোটেলে পরটা খেতেন তাদের মনে থাকার কথা, পরাটা ভাজার পরে পরাটাকে দুহাতের চেটো দ্বারা আঘাত করে পরাটা ভেঙ্গে দেয়া হত। এই দৃশ্য সর্বশেষ কবে দেখেছেন? অনেকেই প্রশ্ন করেছেন রুটি বা পরটা নরম করার জন্য এমোনিয়া সারই উৎকৃষ্ট এই আবিষ্কার কার হাত ধরে এ বঙ্গে চালু হলো?

উল্লেখ করা অপ্রাসঙ্গিক হবে না যে, উত্তরবঙ্গের লোকজন ১৯৯০-এর দশক থেকেই চালে ইউরিয়ার ব্যবহার দেখে আসছে। ভাত যাতে শক্ত না থাকে এবং চাল যাতে ফরসা দেখায় সেজন্য ধান সিদ্ধ করার সময় ইউরিয়া সার দেয়া হয়, এটি সম্ভবত ১৯৮৫ সালের দিকেই উত্তরবঙ্গের লোকজন জেনে যায়।

সাধারণ গ্যাসের বা চুলার তাপে চাল সিদ্ধ হতে প্রায় বিশ মিনিট লাগে। কিন্তু বাজারের বেশিরভাগ চাল ৫-৭ মিনিটেই সিদ্ধ হয়। এই দ্রুত সিদ্ধ হওয়া এবং ভাত নরম, বিশেষভাবে মোটা চালের ভাত নরম করার জন্য ইউরিয়া ব্যবহার করা হয়। অনেক সময় পাকা ধান বন্যার পানিতে ডুবে গেলে ২-৪ দিনের ভেতরে কাটা সম্ভব হলে যে চাল পাওয়া যায় তা কালো রঙ হয়। এই কালো রং দূর করতেও সাল্টুর ব্যবহার আছে বলে শুনেছি।

আরো পড়ুন:  জোয়ার বা জওয়ার বিশ্বব্যাপী চাষাবাদকৃত খাদ্যশস্য

কুড়িগ্রাম দিনাজপুর, রংপুরসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় হোটেলের পরোটা খুব নরম হয়। নেত্রকোনা জেলাতেও হোটেলের পরটা খুব নরম হয়। ঢাকা শহরেও অনেক হোটেলের রুটি এবং পরটা খুব নরম। রংপুর থেকে জামালপুর পর্যন্ত সবখানেই সাল্টুর ব্যবহার সম্পর্কে হোটেল মালিকরা অবগত। কেউ স্বীকার করছে কেউ করছে না।

পালিশ করা, চিকচিক করা বা ঝিলিক দেয়া এক ধরনের চাল ঢাকার বাজারে দেখা যায়। এই চালকে অনেকে মোমপালিস করা চাল বলেন। এইটা শুধুই মোম নাকি কোনো প্রযুক্তি ব্যবহার করে অন্য রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় তা জানা যায়নি।

অনেকেই খেয়াল করেছেন, চাল ধোঁয়ার সময় হাত পিচ্ছিল হয়ে যায়, এটি প্রথম আমি টের পাই ২০১১ সালে। কেন পিচ্ছিল হয়, সেটা ময়মনসিংহের অনেক চাল বিক্রেতাকে জিজ্ঞেস করেও জবাব পাইনি। তবে তারা কিছু সমাধান দিয়েছিলেন, যাতে আমি সেই চাল এড়িয়ে যেতে পারি।

অনেকদিন আগে সোডিয়াম সাইক্লামেট বা অবৈধ ঘন চিনি ধরতে গিয়ে দেখা গেছিল ঘন চিনির সাথে ম্যাগনেসিয়াম সালফেট সার মিশিয়ে পুরাণ ঢাকা, ইসলামপুর, মৌলভী বাজারে বিক্রি হচ্ছে। ফার্মগেট মৃত্তিকা গবেষণা ইন্সটিটিউট থেকে ল্যাব পরীক্ষা করে দেখা গেছিল ঘন চিনির সাথে ম্যাগনেসিয়াম সার মেশানোর কাহিনী।

সাল্টু মেশানো চাল চিনবেন কীভাবে?

চালের দিকে খেয়াল করুন। চাল কি খুব ফর্সা, তবে বুঝুন এটি পালিশ করা, বা রাসায়নিক মিশ্রিত। চালের রং সাধারণত বাদামি, সাদা রঙের চাল হচ্ছে সেই চাল যেটি থেকে কুঁড়া (ইংরেজি: Bran) বাদ দেয়া হয়েছে। ফলে চাল কেনার সময় সতর্ক থাকুন। সম্ভব হলে নিজেদের দ্বারা সেদ্ধ করা এবং ভাঙানো চাল সংগ্রহ করে চালের রঙ দেখে চাল চিনুন। পরবর্তীতে চাল কেনার সময় দক্ষতা বাড়বে।

বাদামি রঙের চাল কিনুন, চালের ঘ্রাণ নিন। দূষণমুক্ত চাল নাকের কাছে নিলে আপনি যথেষ্ট ঘ্রাণ পাবেন। কিন্তু সাল্টু ব্যবহৃত চালে ঘ্রাণ পাবেন না। এইটা সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি চাল চেনার।

আরো পড়ুন:  গম খাওয়ার উপকারিতা ও আটারবহুবিধ ব্যবহার

চাল কি দ্রুত সিদ্ধ হয়ে ভাত হয়ে গেল, ভাত কি খুব নরম হয়ে গেল ৫-৭ মিনিটে। নিশ্চিত থাকুন, এটি সাল্টু মিশ্রিত। পাতিলের পানি গরম হবার পরেও চাল সিদ্ধ হতে অবশ্যই ১৫-২০ মিনিট সময় লাগবে।

চাল ধোয়ার সময় কি হাত পিচ্ছিল লাগছে বা হাতে আঠালো ভাব এসেছে। তাহলে অবশ্যই বুঝবেন চালে রাসায়নিক মিশ্রিত আছে। চাল দুই মাস রাখার পরেও চালে পোকা ধরেনি। এতেও বুঝবেন চালে রাসায়নিক বিষ মেশানো আছে। রাইস মিলগুলো এখন বিষ ব্যবহার করে যাতে চালে পোকা না লাগে। সুতরাং সচেতনতাই আপনাকে বাঁচাতে পারে।

চালের রঙ চিনুন, ধবধবে চাল মানেই ভালো চাল নয়। চালের রঙ হবে ধূসর থেকে বাদামি। সাদা ভাত হতে পারে বিষাক্ত যা আপনার শরীরের ক্ষমতাকে হয়ত নিঃশেষ করে চলেছে।

সাল্টু দেখুন ভিডিওতে

Leave a Comment

error: Content is protected !!