কৃমি (Worm) পরজীবী প্রাণী। অন্য প্রাণী দেহে বাস করে ও খাবার গ্রহণ করে বেঁচে থাকে। তবে প্রাণীর পেটে যদি কৃমি বেশি হয় তাহলে নানা প্রকার উপসর্গ দেখা দেয়। এটা থেকেই প্রাণী দেহে কৃমির উপস্থিতি বুঝা যায়। যেমন- বমি বমি ভাব, খাবারে অরুচি, পেটে ব্যথা ইত্যাদি। তবে শিশু, প্রাপ্তবয়স্ক বা বৃদ্ধের পেটে কৃমি হলে ঘরোয়া উপায়ে সারানো যায়। এছাড়াও আমাদের প্রতিদিনের খাবারে বৈচিত্র্য আনলে কৃমি হওয়ার সম্ভবনা কমে আসবে।
কৃমি-এর ভেষজ চিকিৎসা:
১. সুপারি: গুড়া কৃমির উপদ্রব দেখা দিলে ৪ গ্রাম সুপারি থেঁতো করে ৩ কাপ পানিতে সিদ্ধ করে এক কাপ থাকতে নামিয়ে ছেকে নিয়ে তা সকাল-বিকাল দুইবার খেলে উপশম হবে। তবে বাচ্চাদের জন্য এ পরিমাণ অর্ধেক করতে হবে।
২. কালমেঘ: সচরাচর বাচ্চাদের রোগের জন্য ব্যবহৃত হয়। তাদের জ্বর, কৃমি, অজীর্ণ, লিভার দোষ প্রভৃতি রোগে কালোমেঘের পাতার রস ভাল কাজ করে থাকে। বাচ্চাদের জন্য কালোমেঘের রস সর্বদাই অতি কল্যাণকর ঔষধ।
৩. গোলমরিচ: অগ্ন্যাশয় বিকারগ্রস্ত, তারই পরিণতিতে রসবহ স্রোতের বিকার; এই দুটি বিকারের ফলে যে ক্রিমির জন্ম হবে, সেটার লক্ষণ হলো পেটের উপরের অংশটায় দু’ধারের পাঁজরের হাড়গুলির সংযোগস্থলের নিচেটায় মোচড়ানি ব্যথা,
এটা ২ থেকে ৭ বা ৮ বৎসর বয়সের বালক বালিকাদেরই হয়। এই ক্রিমির কবলে পড়লে মাথাটা একটু হোড়ে বা বড় হতে থাকে, এদের মুখ দিয়ে জল ওঠে না, প্রায়ই যখন তখন পেটে ব্যথা ধরে;
এই ক্ষেত্রে বালক বালিকাদের জন্য ৫o মিলিগ্রাম মাত্রায় মরিচের গুঁড়োয় একটু দুধ মিশিয়ে খেতে দিতে হবে। দরকার হলে সকালে ও বিকালে ২ বার খেতে দিতে পারা যায়।
৪. রাই সরিষা: রাইয়ের শাক উষ্ণ, পিত্তের প্রকোপ বাড়িয়ে দেয়, রুচিকর, বায়ু, কষ, কৃমি ও কণ্ঠরোগ নাশ করে। রাই-এর শাক খেলে সেই জন্যে কিছুটা উপকার পাওয়া যায়।
৫. শুঁঠ: শুঁঠ চুর্ণ ও বিভঙ্গ চূর্ণ (কবিরাজি দোকানে পাওয়া যায়) মধু মিশিয়ে চাটলে কৃমি সেরে যায়।
৬. হিং: কৃমিনাশক, ঋতুস্রাব-নিরামক, স্নায়ুবিক অস্থিরতা দূর করে; অধোবায়ু, সন্ধিবাত (গাঁটের বাত), মাথা ঘোরা, বধিরতা, খাস, কাশি, কফের প্রকোপ, চোখের অসুখ, গলার রোগ, যকৃৎ (লিভার) ও প্লীহার রোগ নষ্ট করে।
৭. কালোজিরা: সিকা বা ভিনিগারে দিয়ে বেটে কালোজিরে খেলে কৃমি নষ্ট হয়।
৮. লবণ: সকালে ঘুম থেকে উঠে কিছুদিন ধরে নুন মেশানো জল খেলে। পেটের ভেতরের ছোট ছোট কৃমিগুলো বেরিয়ে যায়, নতুন কৃমি জন্মায় না, পাচন ক্রিয়া (হজম) ভাল হয়। শরীরে নুনের অভাব হলে নানা অসুখ এমনকী কৃমি পর্যন্ত হতে পারে।
৯. পালং শাক: পালং শাকের বীজের ঘন তেল কৃমি ও মূত্রের রোগে সুফল দেয়।
১০. গাজরের বীজ: কৃমিনাশ করে, হার্টের পক্ষে ভাল, রুক্ষ, কিন্তু শুক্র বিনষ্ট করে। গাজরের বীজ উষ্ণ খেলে সগর্ভদের গর্ভপাত হতে পারে এরকমও অভিমত আছে।
১১. পেঁপে: ফুটন্ত জলে অল্প মধু ও পেঁপের দুধ মিশিয়ে ২ চা চামচ পরিমাণ খাইয়ে তার দু ঘণ্টা পরে যদি ক্যাস্টর অয়েল অথাৎ এর বা রেড়ির তেলের জোলাপ খেলেই পেট থেকে গোল কৃমি বেরিয়ে যাবে।
১২. করোলার পাতা: মূত্র বৃদ্ধি করে, জ্বর সারায় কৃমি নাশ করে। ওষুধ হিসেবে কারোলা পাতারও অনেক গুণ আছে।
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্রঃ
১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১ ও ২, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩।
২. সাধনা মুখোপাধ্যায়: সুস্থ থাকতে খাওয়া দাওয়ায় শাকসবজি মশলাপাতি, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, নতুন সংস্করণ ২০০৯-২০১০।
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।