চালক
একটি হাসপাতাল খুলছে মানুষ নয়, লোহা লক্কড়ের
তার যন্ত্রাংশ মূল্য দিয়েই কিনতে হয়,
সে কিছু যাত্রীকে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছায়, ভাড়া নেয়, কথা বলে,
দুএকজন যাত্রীদের জীবন বাঁচাতে
নিজেকে একটু-আধটু বিলিয়ে দেয়,
যাত্রীরা গন্তব্যে যায়; —
কিন্তু চালকেরা পৌঁছে না সঠিক ঠিকানায়;
অভিজ্ঞ জনচালকেরা মিলিয়ে যায় সর্বংসহা পৃথিবীর কোলে
আদর ও আদরস্য ভঙ্গিমায় পৃথিবী বুকে টেনে নেয়
সেই সব যাত্রীবাহী মানুষ,
প্রমাণ করে তাদের জীবন কতো সাধারণ ছিলো,
আনন্দে হৈ হুল্লোড়ে সন্ধেবেলা তারা নাচে গানে বা ঝগড়ায় কাটায়,
পুরো অভাবী জীবনে আনন্দের কলতান;
তাদের কথাতে ছন্দ, গানে ছন্দ, নৃত্যে ছন্দ, মুখের ভাষায় মধু,
কষ্টকর জীবনে আদি রসের সংগে সকাল দুপুরের সখ্যতা,
সন্ধাকালে
আমরা গেলে
খুশি মনে চিত্ত মেলে
দেয় খুলে
মুক্ত দ্বার।
প্রান্তের থেকে আরো দূরে,
কাজিয়া লাগলে
খিস্তি খেউরই মূল বিনোদন
পাড়ার সকল লোক
ঝগড়া দর্শক,
আর সব শালা ঘুর ঘুর করে মক্ষীরানির চারধারে,
যদিও প্রত্যেক পুরুষের ঘরে পাওয়া যেতো সেবাদাসি,
যারা অন্ধ হলে হাসে হাসি
সংসার পেলেই মহাখুশি
এই তো প্রান্তিক পরিবারের ব্যঙ্গচিত্র!
অন্যদিকে আছে আরেক শ্রেণি
যারা ভদ্রবেশে ১ ফুট পানিতে ৩ দিন সাঁতার কাটে
দিন কাটায় হোটেলে বা ফ্লাটে
অভাব আর অভিযোগ, বেঁচে থাকাই সুখ,
অবিরত স্বপ্নবিলাসি,
প্রকৃতির সান্নিধ্যে বছরে একবার সমুদ্র বিলাস,
অথবা একদিন নাটক সরনিতে কবিতা শোনা,
অথবা কাউকে না বলে ছুটি কাটানো লুকিয়ে,
লুকোচুরি খেলে কেউ বাতাস ভবনে।
মুক্তির পথে লড়ে যেতে খুজেঁ বের করতে হয় কতো কী?
খোঁজো মনের মানুষ, খোঁজো মাঠ, ধূলিকণা, পুরোনো পুস্তক,
দেহরক্ষী ও তার হাতে পুজনীয় শক্ত বাঁশের লাঠি,
তিনি আমাদের রক্ষাকর্তা রাজকীয় ব্রুটাল ফুলিস
আমলাদের দেশরক্ষার একমাত্র হাতিয়ার,
আকাশ মাটি জল তারা রাখিবে মুক্ত
আমাদের সেনাবাহিনী, দেশরক্ষার দায়িত্বে,
১৯৪৭ থেকে ষাটটি বছর
শেষকালে বিক্রি হলো পাউন্ডে ডলারে,
আমলারা গামলার মতো ভুঁড়িতে শুভ সব গিলে খেল,
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দালাল এইসব বড়কর্তা সচিব,
বিদেশি পণ্যের ব্যবহারে বড় খুশি; —
রঙ ফর্সাকারি কৃম, স্তন ঠিক রাখার আধুনিক কলা কৌশল,
কামদন্ডের মলম, যৌনতার পত্রিকা
মেডোনার[১] টসটসে শরীর এবং
ছেচল্লিশে বিয়োনোর জন্য উদগ্রীব
ভারতীয় ভেষজ চিকিৎসা গ্রহণ
‘মা হবো বউ হবো’;
এসব ছাপিয়ে কয়েকজন অভিশপ্ত ভারতীয় নর ও নারীর
আঁখিও সে গোল্লি মারে নাচ আর গান আর এ আর রহমান
আর ফার্মের ষাঁড়ের
মতো গোঁয়ার গোবিন্দ[১] আর আবেদনময়ী বিপাশা ঠসা[২]
আর বাঙলার তরুণ তরুণীরা নীল ছবিতে বিনীল
লুঙ্গি শাড়ি না পরেই ডুবসাতাঁর।
আমাদের আরেক আমলা কাজিয়া পছন্দ করত
লোক দেখানো ছেঁড়া গেঞ্জি আমদানি করত ভাঙা স্যুটকেসে,
আরেক দল আমলা তিনমাসি গাভী আর ব্লাক বেঙ্গল ছাগী পালত,
বাঙলার মাটি ব্যবহার করবে আমিরিকার জঙ্গি ঘাঁটি;
তারা পাঁচ বছরে কতো কী লেখে, অর্থভিক্ষা,
অর্থলোপাট, অনর্থক আইন, হত্যা আইন;
দখলে নাও নদী মাঠ আকাশ বাতাস আর সমস্ত সম্পদ,
বিশেষ দখল আইন, শত্রু আইন, বিশ চারশ ধারা,
আমাদের জাতীয় অর্থভিক্ষুক আর তসবিঅলা রাণী আর
সুন্দরী মহারাণী;
আহা হা কী চমৎকার
আমাগো দ্যাশে কোনো অভাব নাই, কী সোন্দর নেতানেত্রি
আহা হা কী চমৎকার চা খাওয়ায় মফিজ আবুল ও কুদ্দুসদের
ভোট চায়, ভোট লয়;
গণতন্ত্র দিবার চায়;
স্বাধীনতা দিবার চায়!!
টিকা
১. পপ কুইন মেডোনা নাচে গানে ভরপুর পুরুষতান্ত্রিক ডানা কাটা পরী। মেডোনা পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদী দুনিয়ার শরীর প্রদর্শক এক নারী যাদেরকে শিল্পী হিসেবে পুঁজির ধামাধরারা প্রচার করেছে।
২. গোবিন্দ হচ্ছে একটা ষাঁড়, যাকে দেখতে মানুষের মতো, এদের অভিনয় ভারতে পুরুষতন্ত্র ও পুঁজিবাদকে শক্তিশালী করেছে।
৩. বিপাশা বসু হচ্ছে আরো অনেক অভিনেত্রীর মতোই নির্বোধ শরীরঅলা এক মহিলা, যে যৌনতাকে ব্যবসায় কাজে লাগিয়েছিল।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।