আর তুমি
বাঙলার উনিশশো নব্বই ও দুই হাজারের
বছরগুলোয় কোনোমতে বেঁচে থাকা তরুণী,
কাদা জলে পা টিপে হেঁটে কোন দূর্গমে যাবে?
জোঁকের আক্রমণ হতে আর কত দূর্গমে পালাবে?
তোমারও তো স্বামী সঙসার স্বপ্নবাড়ি খেলা করে
শ্বাসরুদ্ধ মাঠে।
আর আমার চোখে-মুখে সর্বাঙ্গে সজারুর কাঁটার
আঘাতে উদগত বিতৃষ্ণার ফুসকুড়ি;
পরিত্যক্ত শিকনির নালায় ভরে গেছে
হৃদয়ের নদ নদী বিল ঝিল, সমুদ্রের মানসিকতা,
গা শিরশিরানো দুর্গন্ধের স্রোতে
ভেসে গেছে অন্তরঙ্গ পথঘাট,
মগজে পেরেকের
ব্যথা আর জিহ্বায় রাতের চটচটে তেতো স্বাদ;
তোমাকে বাঁচায় সাধ্য কার?
তোমার আমার যন্ত্রণা ডুবে আছে তাদের হাসিতে।
সহস্র বছরের ক্লান্তি অপমান মুক্তিকামনা ধ্বংসকূপে;
আরো কত দূরে তোমার আমার বাঁচবার মাঁচা
সাফল্যের পরাগায়ন, কচি ফুল, কচি ফল।
কবে যে খেয়েছিলাম চোনা বোঝাই
নতুন ব্রান্ডের মদ মনে পড়ে না,
ত্বকের উপরে হাঁটে শামুকের মতো ত্বক
আর আমি হাঁটি তোমার পাশাপাশি
কাঁধ পেরোনো ঝাঁকড়া চুলের করিডোরে,
উজ্জ্বল আটাশাধিক বসন্তের ফুল,
রাস্তাপাশে কড়া আলোর বিজ্ঞাপনঃ
ভোগে ভোগে ভাগা ভাগি
চেটেপুটে স্বাদ নাও সোনালি সবুজ।
পরিবেশের আধমরা বৃদ্ধাশ্রমে পরিত্যক্ত
বুড়োদের দল, যত্তো সব উটকো খাজুরে নাগর,
ত্যাগে ভোগে অনাস্থার আশির অধিক বছরগুলো
পকেটের মধ্যে সযতনে রেখে অপেক্ষায় থাকে মোহন মৃত্যুর।
প্রাণ ভোমরার কাপে শুধু এসিডের জ্বালা_
অবদমিত আবেগের উত্থিত ঝরণা।
দশ হাজার বছরের মূল্যবোধ সহজে খসে?
গাছের ডালে আবার যাবো নাকি?
খাঁচায় মন কতদিন টিকে?
ছোটাছুটি হুটোপুটি_
রাত্রির দরজায় প্রতিদিন কড়া নাড়ে বয়সের কদু।
ভাবাবেশ কবে যেন খুব কাছে এসে চলে গেছে
গণহত্যকারি যুদ্ধ বিমানের কাছে,
ছোট ছোট ঢেউ তুলে আটলান্টিকের উপর দিয়ে
সকলের মোড়লের পিছে।
অনুভূতি কল্পনার রোমান্টি ককবি
দেখে যেয়ো গণধর্ষকদের তন্ত্রমন্ত্র;
মন্ত্রের জোরে পাথুরে ঘুম এখন
নড়ে চড়ে হেলে দুলে পেরোয় পাথুরে রাজপথ,
দুই হাতে ধরে রাখে হৃদয়ের ডিম;
বাম পায়ের দায়িত্ব আধমরা বাচ্চা ফুটাবে,
ভোগবাদে ডান পা বাবা সেজে বসে থাকে সোনার সিংহাসনে, অমর অজর।
নিরুত্তেজক দুর্বলের মৃত্যু মজাদার র্দশনের সূত্রপাত ঘটায়;
দার্শনিক সে তো কোনো মহাহিসাবরক্ষক নয়;
দুঃস্বপ্নবাদিদের মুখে আশাবাদ ফুলের রেনু মাখায়,
উত্থানের ডাক দেয় হেস্তনেস্তবাদ;
মানুষের হিসেব মেলা সহজাত সহজপ্রাপ্তি নয়
প্রজন্ম প্রজন্মান্তরে হিসেবে সমানুপাত হয়।
ঘৃণা-দাহ-অবজ্ঞার রোদ ঠিকরে পড়লে আমাদের জীবন চক্রে
শত জনমের পাওনা কারা নিয়ে যায় শোধ দিয়ে-
প্রতিশোধ নেয় কোন যুদ্ধের ময়দানে?
চিত্রের ইতিহাস: কবিতায় ব্যবহৃত অংকিত চিত্রটি অজানা শিল্পীর আঁকা চিত্র গোলাকার টেবিলে নাইট (Chevaliers de la Table Ronde)। শিল্পী চিত্রটি আঁকেন উনিশ শতকের প্রথম দিকে। এখানে চিত্রটিকে হুবহু ব্যবহার করা হয়েছে।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।