প্রেমের পরাজয়, ক্ষমতা ও দম্ভের কাছে

যদি দেখতে পাও সম্মুখে

এক লাল নীল গ্রহে হামাগুড়ি দেয়া শিশুদের বুকে পিঠে আগুনের জলছাপ,

তুমি ইতিহাস লেখতে পারো স্বদেশি নেতাবিহীন প্রজাদের;

যদি দেখ বুকের উপর ঘুরন্ত টায়ারের হিসহিস শব্দের মতো চলমান ট্রেন,

সেই ট্রেনে উঠে তুমি পড়শিদের ঘুম নির্ঘুম করে বাজাতে বাজাতে বাঁশি

ঘুমিয়ে পড়তে পারো একাকি অপরিচিত কোনো জংগলে;

যদি একবার সেন্ডেলে পা গুঁজে হাঁটতে পারো,

এক যুগের জন্মভিক্ষা পাবে;

যদি ভিনদেশি ব্যবসায়ির হাত ধরে চলে যেতে পারো,

তবে আধোমুক্তির স্বাদ পাবে;

আর যদি জংগলে ফুটাতে চাও বাগানের ফুল,

সেই সব জংলি অকৃত্রিম কাঠুরেরা কুড়ালের আঘাতে মাটির পাতিল

ভাঙার মতো সবার মাথাকে ভাঙবে।

তুমি চাইলে মহাসমুদ্রে সাঁতার কেটে এসে

ঘিয়ে ভরা জ্বলন্ত চিতায় তাজা প্রাণকে পুড়িয়ে ফেলতে পারো,

সিন্দবাদের মতো কোনো মৃত তোমাকে উদ্ধার করতে আসবে না;

যদি একবার আমার মতো করে অন্য কারো দিকে ক্ষণিক তাকাও

তবে তোমার চোখ এসিডে ঝলসে যাবে;

ক্ষীণ হাসি দেয়া ঠোঁট করুণায় গলে গলে মোমের মতো তোমার

প্রত্যাশিত প্রেমিকের বুকে পড়লেও

সে তোমাকে গণ্ডারের ত্বকের নিচে নিক্ষেপ  করবে,

তুমি উকুনের মতো বেঁচে রবে;

তোমার আর্ত চিৎকারে মহাবিশ্ব নিশ্চিহ্ন হতে পারে,

পৃথিবী তার কক্ষপথ পাল্টাতে পারে,

মরা চাঁদটা ডুবে যেতে পারে কোনো ব্যর্থ জমিনে,

তবুও সে তোমার বুকে লাথি মেরে চলে যাবে;

যদি মেশিনগানের সামনে দাঁড়িয়ে তুমি অর্থহীন প্রাণ দাও

তবুও সে তোমার মৃত লাশকে লাথি দেবে;

আর যদি তুমি হও সর্বগ্রাসি মৃত্যুপুরির রাজা

তবেই সে তোমার সাথে

এক বিকেল হাত উঁচিয়ে

ডাঙ্গুলি বা বৌচি খেলতে পারে।

 

চিত্রের ইতিহাস: কবিতায় ব্যবহৃত অংকিত চিত্রটি পল ফারনান্ড করমনের (১৮৪৫-১৯২৪) আঁকা চিত্র ‘সিরেইলে খুন(Murder in the Serail)। শিল্পী চিত্রটি আঁকেন ১৮৭৪ সালে। এখানে চিত্রটিকে উপরে কিছুটা ছেঁটে ব্যবহার করা হয়েছে।

Leave a Comment

error: Content is protected !!