ঘুম থেকে জেগে একটি পাথরে হাত দিলে তৎক্ষণাৎ পাথর হয়ে যায় একটি ছুরির ফলা, শুরু হলো শিকার যুগের। শিকারি পশুর ছানা জন্ম হলে জন্ম হয় কৃষিজ ভূমি, নতুন ফসল ফলে নারীর আহ্বানে। পাথরের যুগ শেষ হলে গোত্রপিতার কলহে শুরু হয় নায়কী শোষণ, কোথায় হারিয়ে গেলো আমাদের মুক্ত হাতগুলো।
একদিন যুদ্ধশেষে শান্তি না এলে আমরা পেলাম বেঁচে থাকবার অধিকার, দাস হয়ে জন্মালে পাপ নেই, মুক্তির লড়াইয়ে নেমেছি মানেই আমরা মর্যাদায় সবার উপরে, একটু ভূমির অধিকার পেলে একদা খুশি হয়ে খেটেছি প্রচুর, সেই থেকে এসে গেলো পুঁজির ক্ষমতা।
কেনবার স্বাধীনতা, চোখের সামনে উড়ে রক্তের পতাকা, সেও তো বেশি দামে কেনা, কিনে ফেলেছি ঘর বোঝাই, এখন আমরাই ক্রেতা। আমাদের রক্তে ঘামে জাতিসংঘের অস্ত্রে গলে গলে পড়ে পুঁজির পুরনো পুঁজ।
বদলাবার শক্তি যদি আমাদের মননে খেলা করে, তবে পথ পাওয়া যাবে, ভূমিদাস হিসেবে জন্মালে, শ্রমদাস হিসেবে জন্মালে কোনো পাপ থাকে না, মুক্তির বেলাভূমিতে মুক্তির অস্ত্রহাতে প্রকৃত মানুষেরই গল্প লেখা হয়।
যদি লড়ে যাও তবে স্বাধীন হওয়া যায় ব্যক্তিগত মালিকানার ক্ষত থেকে, শ্রমিকের ভাবনাকে মগজের লোহাতে আগুন ঘষলে মুনাফার পুঁজ থেকে স্বাধীন হবে এই আকালী জগত, মুষ্টিবদ্ধ হাত দুটোতে হাতুড়ি নিলে পুঁজি মারা যাবে অজস্র আঘাতে, পণ্যপূজা থেকে সরে এসে প্রয়োজন ও প্রাপ্তির আলোচনায় নেমে গেলে ব্যবসার শিকল থেকে মুক্ত হবে ক্রেতাপাগলেরা, লোভের গহ্বর থেকে বের হয়ে সবুজ বাতাসে শ্বাস নিলে পণ্যপাপ মুছে যায় মানবজীবন থেকে, রাষ্ট্রের সীমানাগুলো মুছে গেলে যুদ্ধ চলে যাবে যাদুঘরে, অধীনতা ঝেড়ে ফেলে যে পাখিরা উড়ে যায় কাজ ও খাদ্যের লেনদেনে তবে এযুগের সব শ্রমদাস নিপীড়ন মাড়িয়ে প্রকৃত মানুষের গল্প লিখবে।
আলোকচিত্রের ইতিহাস: কবিতায় ব্যবহৃত অংকিত চিত্রটির নাম ‘দাসদের সাথে আচরণ’। চিত্রটি মূলত আফ্রিকার দাসদের সাথে সাথে গ্রিস ও রোমের দাস ব্যবসায়ীদের আচরণ দেখানো হয়েছে।
৩১ আগস্ট, ২০১৮, নওমহল, ময়মনসিংহ।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।