একদিন তোলপাড় বর্ষার বৃষ্টির ফোঁটায়

তোমার শৈশব তোমার মেয়েবেলা আজকের

সারাদিনের বৃষ্টির ভুরভুর গন্ধে মিশে গেছে;

তোমার মানসপ্রতিমা জানালা বন্ধ করেছে বৃষ্টির ছাঁট

এসেছে বলে; না তুমি খোলা জানালা বন্ধ করো না,

তুমুল বৃষ্টি আসুক, আমি বৃষ্টির কণায় মিশে

হাওয়া জলে সাঁতার কেটে এসে দাঁড়াবো তোমার জানালার পাশে;—

তোমার চোখের বুদবুদে আমার ছায়াকে নিশ্চিত দেখতে পাবো।

 

পৃথিবীর সমস্ত জলের ফোঁটা আজকে

তোমার বিমূর্ত কল্পনাকে আমাদের

কল্পনার ক্যানভাসে রঙতুলি দিয়ে আঁকে কল্পনার ছবি;

আমার প্রত্যাশিত পিরামিড এখন তোমাদের ছাদে ভেসে চলে;

তুমি কি এখন জানালার পাশে বসে আনমনে দেখছো আকাশ

সমুদ্র ঝড় বজ্রবিদ্যুত স্মৃতির উপমা শখের প্রবালদ্বীপ,

নাকি শিশুবেলার মতো ভিজে ভিজে শিলা কুড়াচ্ছো,

মুখে দিচ্ছো, কেঁপেঁ কেঁপেঁ উঠছো;— সেই শীতল শিলা যা

প্রাগৈতিহাসিক কালেও কুড়িয়েছিলাম আমরা দুজন,

যে শিলা ছিলাম আমি যে শিলা ছিলে তুমি।

 

তোমার ব্যক্তিগত ঘরে কি এখন আমাদের

প্রতিবিম্ব দুলছে, নাকি অন্য অপরিচিত কারো

প্রতিবিম্ব বুকে নিয়ে তুমি ঘুমিয়েছো ইতিহাসের কোলে?

লাঙলের ফলার মতো সুতীব্র ওলট পালট করা

তুমুল বৃষ্টিতে আমরা তোমার মনের ছাদে অবিরাম ভিজছি,  

পাশের বাসার ছাদে সেই ছেলেটি, আমারই মতো, আছে তো।

নাকি তুমি অন্যমনস্ক, হৃদয়ের মরুভূমিকে জলবিহীন রাখতে চাও?

 

তোমার সাথে আর বুঝি বৃষ্টির আনন্দটুকু উপভোগ করা হলো না।

আজকের বৃষ্টিতে ভূমিকম্প হোক,

হোক পৃথিবী চুবানো জলোচ্ছাস,

ভেসে যাক হাতুড়ি পেটানো বৃদ্ধার ক্লান্তি,

ডুবে যাক মন্ত্রিপাড়া, বিশেষ পাড়া,

ছেঁড়া শাড়ি শুকোনো মা, গাড়ি ও অট্টালিকা, অশুভ সংকেত,

তুমুল জল উল্টে ফেলুক সিংহাসন ও চেয়ার,

তুমি পাল্টে ফেলার কালজয়ি কর্মি হও আমাদের চারপাশে।

 

আমি জানি না তুমি কি এখন জাগ্রত, সদা থাক সচেতন,

দেখছ কি তোমার অপেক্ষায় কাটানো চব্বিশ বছরের নির্ঘুম জীবন,

নৃত্যবিহীন ঘুরে বেড়ানো নদীবন্দর হতে সমুদ্রবন্দরে,  

আরো পড়ুন:  একুশের গান

মধ্যমা অনামিকার অচেনা ক্রন্দন;

আমি খুব চিনি তোমার আঙুল, তোমার পুতুল

তোমার রূপকথার বারান্দায় ফোঁটা জবা ফুলের কুঁড়ি,

তুমি উদাসিন, চুপচাপ থাকতে পার পার্থিব জীবনের

টানা হ্যাঁচড়া উচ্ছৃঙ্খলতা দেখে;— কৌতুহলবিহীন;

আর আমি খোলা জানালা হতে অতিদূরে আকাশি রঙের পাহাড়

কুয়াশায় ঘন সাদা হয়ে দিগন্তের কোলে মিশে যেতে দেখি

অনুভূতির সতেজ আলোয়;

আজকের কালজয়ি বৃষ্টিতে, তোমার সৃষ্টিতে।

 

২৯.০৫.২০০২; সূর্যসেন হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

চিত্রের ইতিহাস: কবিতায় ব্যবহৃত অংকিত চিত্রটি ইভান শিশকিনের (১৮৩২-১৮৯৮) আঁকা ওক বনে বৃষ্টি (Rain in an Oak Forest)। এখানে চিত্রটিকে নিচে সামান্য ছেঁটে ব্যবহার করা হয়েছে।

Leave a Comment

error: Content is protected !!