অনিচ্ছায় বিচরণ করি জনমানবহীন অন্ধকার রাতে,
ফুটপাতে,
একাকি, বিষন্ন, ব্যর্থতায় চোখে অনিদ্রার কালি;
চশমা দিয়ে দেখি আতংকিত কংকালের ফ্রেম,
চলমান শার্টপ্যান্ট সালোয়ার কামিজ,
দুর হতে ভেসে আসা বেআক্কেলে সুর
নিচুতলার গান আর তালের বাগান,
দেখি জলের ঘুর্ণিতে ভেঙে যাওয়া পরানের বাস্তুভিটা,
ছেঁড়া ত্যানায় সযতনে বেঁধে রাখা
বাবার দুচোখে মায়ের শেষ আধুলি,
এক জীবনের গরমিল হিসেবের ছেঁড়াখাতা।
মনে পড়ছে এখন,
বোনের নয়নতারা ফুল গাছগুলো
বৃষ্টির বেহিসেবি বর্ষণে বাঁচলো না,
সন্ধ্যামালতির বীজ খুঁটে এখনো কী সে
আটা বের করে, জবা ফুল ঘঁষে দুহাত রাঙায়?
এখনো কী সে ভূত সেজে গাঁয়ের সবাইকে ভয় দেখায়?
এখনো কী সে কাঁদে সন্ধ্যামাসিরা ওইপারে চলে গেলে
হাঁটতে হাটঁতে এগিয়ে যায় অনেকটা পথ
এগিয়ে দেবে বলে;
নাকি
আমার মতোই তার অস্তিত্বহীন বিচরণ
ও অবিরত বাসা বদল এই প্রকাশ্য শহরে;
এখানে উড়ে আগুন, এইখানে পুড়ে পানি,
চিৎকারি ধাড়ি ধড়িবাজের ধান্দাকে সে এখানে
কোনোভাবেই সবুজের ডানায় ওড়াতে পারেনি।
দানবীয় কারখানার ধোঁয়ায় পচে গেছে
আমাদের কৃষিখেত, পুকুরের মৃদুজল,
আর দিকে দিকে পর্যটক ভিসায় প্লেগের জয়যাত্রা;
মানবিক চিতা বহ্নিমান
ছাইয়ের নিচে চাপা পড়ে আছে বাঁশপাতা, কাশফুল,
সাধের দেশি লাউমাচায় ফনা তুলছে যুদ্ধ কামান,
দিগন্তঘেরা মড়কসন্ধ্যা নামছে শুকিয়ে যাওয়া নদীর কিনারে।
পুরোনো নগরীর পোড়াবাড়ি ঘেঁষা কদবেল গাছের
কাণ্ডে-শিকড়ে লেগে আছে হাহুতাশ দীর্ঘশ্বাস,
মরা বৃক্ষতলে মুমূর্ষুর ওষুধের শেষ গন্ধ,
পরিত্রাণের গান লিখছেন কেউ কেউ দেহের নোনাজলে।
কেউ কেউ বলছেন ‘এ মাটিতে ফোটে না
মৌমাছির পাখায় কোনো মহাজাগতিক ফুল’।
দেখছো না অর্থব সন্তানেরা_
মায়েদের পোড়াবাড়ির চৌকাঠে
উইপোকা ও তেলাপোকার উৎসব বসেছে,
মাকড়েরা গড়ছে কবুরে মাটির গম্বুজ।
আর আমি সে তারা, আমরা সবাই
দুপায়ের মাঝখানে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছি
অনিঃশেষ কালিমায় যাপন করেছি হাজারো বছর;
আমি পারিনি প্রিয়তমা আমি পারিনি বাঁচাতে তোমাকে
আমার কাঁধে যাদের জোঁয়াল তাদের হাত থেকে
আমি পারিনি প্রিয়তমা আমি পারিনি বাঁচাতে তোমাকে,
তোমার বুকের মাংস যারা খাবলা বোঝাই করে নিয়ে গেলো,
পাকস্থলি বোঝাই করে খেলো,
তাদের আগ্রাসী হাত থেকে;
তুমি ছিন্ন শাড়ি বুকে নিয়ে
তাদেরকেই মাদুর পেতে বসতে দিয়েছো
আমারই আঙিনাতে।
হায় প্রিয়তমা!
চিত্রের ইতিহাস: কবিতায় ব্যবহৃত অংকিত চিত্রটি অজানা শিল্পীর আঁকা চিত্র এক ডাক্তার রোগিণীর কাছ থেকে সুবিধা নিচ্ছেন (A physician trying to take advantage of a young woman patient)। শিল্পী চিত্রটি আঁকেন ১৮৫২ সালে। এখানে চিত্রটির উপর ও নিচ সামান্য ছেঁটে ব্যবহার করা হয়েছে।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।