পৌরাণিক প্রেম

চলো দূরের ওই দিগন্ত বিস্তৃত মাঠে

ওখানে অপেক্ষা করে আছে আমাদের কাল উদ্দীপিত সখী

রাজকন্যার কানে জানায় আজকের গোপন সংবাদ,

পাহাড় থেকে নেমে আসা নদীটির ধারে

কার খোঁজে দাঁড়িয়ে সেই অচেনা যুবক?

দূরে বন্য হরিণীরা খেলা করছে ইতিহাসের সংগে,

সখীদের সাথে নিয়ে রাজকন্যা কেন

প্রাণ চাইলেও খুব কাছে আসছে না তার,

সেকি অমঙ্গলের ভয়ে— তবে জীবন টানছে কেন

অপর জীবনেরই দিকে— কোন মিলিত হবার প্রেরণায়?

রাজকন্যা ও তার অতীত নির্জনতা এখন কার

ঘুম ভাঙিয়েছে— গাছেদের নাকি গাছের পাখিদের?

সখীরা চলে গেছে, চলে যাক পৃথিবীর প্রান্তের কোনো রাজমহলে,

আষাঢ়ের কদম গাছের নিচে থাকুক রূপকথার নায়ক নায়িকা,

বাতাসে পরাগরেণুর লাগুক মাখামাখি।

 

বহ্নিশিখা, তোমার জন্যে হাজার বছর আমি করেছি প্রতীক্ষা,

তুমি আছো পৃথিবীর বয়সি শুক্লপক্ষের সপ্তমির চাঁদের মায়ায়

এই বলে রাজকন্যা দেখালো কুলকুল বয়ে চলা জীবন ও নদী

আর পাশেই উপত্যকার মাঠে ময়ুর ও ময়ুরি

বুকের ওম শুষে নেয় হৃদয়ের হিম জলে,

কোনো লতাগুল্মের নিচে নড়ে ওঠে

দুটো লাল লতিকা হট্টিটি পাখির ছানা, মাতাদের অন্ধকার

শিথানে জ্বালিয়ে দেয় প্রশ্বাসের ধুম।

 

ওগো আমার ঘুমের দেশের রাণী,

তোমার জন্য এই নশ্বর জীবন ধন্য মানি ………

তারপর কত কথা শুনেছিল পৃথিবীর প্রাণ

কত সময় মিশে গেল সময়ের জলে,

রাত্রির ভেতরে সাঁতার কেটেছে  স্নানরত পানকৌড়ি,

নীল রঙ রূপকথা বাস্তবতায় ধরা দিয়ে

গড়ে তুলেছে দুজনের মাঝখানে জীবনের দেয়াল;

গোধুলিবেলা জিরাফের গলা জটলা পাকিয়েছে তাদের আশপাশে,

চাঁদনি রাতে চাঁদমুখ নিয়ে চিতাবাঘ দেখেছে

প্রেমিক যুগলের সেই দৃশ্য— সিমানাবিহীন ভালোবাসা

আর রূপালি জলে রূপার মাছেরা পরস্পর

কাঁধে হাত রেখে সঞ্চরণশীল 

শুনিয়েছে স্বপ্নের দোলনায় দোল খাওয়া রাধা আর কৃষ্ণের

ফিরবার কথা ভুলে যাওয়া অভিমান পর্বের গান।

আরো পড়ুন:  তোমার ছন্দে, জীবনানন্দে

 

চিত্রের ইতিহাস: কবিতায় ব্যবহৃত অংকিত চিত্রটি অজানা শিল্পীর আঁকা। পেইন্টিংটির নাম চূড়ান্ত সাজসজ্জা (Final Adornment)। এটি গীতগোবিন্দ গ্রন্থের একটি চিত্র। এখানে চিত্রটিকে নিচে সামান্য ছেঁটে ব্যবহার করা হয়েছে।

Leave a Comment

error: Content is protected !!