গন্ধরাজের গন্ধে ভরা ঘর নেই

সহস্র বছরে তিলে তিলে গড়া

আকাঙ্খিত প্রিয়ার মুখাবয়বের মতো নগর

আঘাতে আঘাতে ভেঙে পড়ছে তীব্র দুপুরে,

চৌদিকের আয়নায় বিম্বিত হচ্ছে তার আলোকচ্ছটা,

অক্লান্ত ইতিহাসের কী করুণ মূর্তি,

বহু হাজার বছর হতে সিঙহেরা হরিণ শাবকটিকে

গ্রাস করে উড়ে যাচ্ছে ডানা মেলে আমাদের অপরিচিত বোধের পানে;

আজকের মতো এমন তীব্র কোনো এক অস্থির দুপুরে

সিঙহির চিৎকারে মাঠ ঘাট পৃথিবীর হয়েছে ক্ষয়,

আজো যেমন হয়;

নতুন দূরদর্শনে পুরোনো কালের কিছু স্মৃতিচিত্র ঘন ঘন হচ্ছে দেখানো;

কিছুদিন পর আবার সন্ধ্যা আসছে তার ঠেলাগাড়ি নিয়ে,

আকাশ থাকবে তখন সন্ধ্যাতারাহীন;

প্রিয়ার কংকালের মতো নিঃসাড় রাত্রি গ্রাম থেকে এসে তাঁবু গেড়েছে শহরতলিতে;

পার্থিব প্রয়োজনে কাক ও কোকিলেরা পরস্পর চুক্তিবদ্ধ;

এগিয়ে নিয়ে চলেছে কালো ডানায়

শত শত হাতঘড়ি, ছাই, মাটি ও নাক পরিষ্কারক রুমাল,

শ্রেষ্ঠ কিছু পাখির ডাক যাদুঘরে আটকা রেখে

বাকিগুলো বেচা হলো হাটে বাজারে আলু পটলের সাথে;

প্রশ্নকর্তা শিয়ালমামা জিগাইলেন “বাচাঁবো কিভাবে আর?”

 

রাত জেগে পাতার পর পাতা অর্থহীন প্রলাপ কার ভালো লাগে;

মনের শিকলটা ছিঁড়ে ফেলা হবে?

আর নয় অযাচিত বেঁচে থাকা,

এবার আমি মানুষ হবো সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ, নই একচেটিয়া শিল্পের পতি;

পরিপূর্ণরূপে হাজার ফুলকে ফোটাতে আমরা আবার

আমাদের ঘামে বুড়িগঙ্গার উপকন্ঠে রাজ্য বানাবো।

আমরা হাতের সব কটি গান ও কবিতাকে কবিতা ও গানই বলতে চাই, চা-চামচ নয়।

জড় পৃথিবীর খাদকেরা ক্রমান্বয়ে সাগরের জল ও পাহাড় শেষ করে

খেয়ে ফেলুক পুকুরের জল ও নলকুপের নল,

খাবে বলে গোঁ ধরুক প্রাণিজ আমিষ, নোনতা লাল ফল, কুকুরের লেজ;

আমরা বই খাতা নিয়ে কাব্যবিদ্যালয়ে যাবো।

 

২.

অপেক্ষায় থাকতে থাকতে একদিন

বাঘের পিঠে চড়ে এসে পড়বে আমাদের প্রত্যাশিত

টুকটুকে এক ঝাঁক জোনাকের আলো,

ঘরের দরজায় এনে লাগাবে ধর্মনিরপেক্ষ বটগাছ,

আজন্ম স্বপ্নপিপাসুরা গাইবে মহাকাব্যগান,

লাল আপেলের ত্বকে আঁকবে চলন্ত ইতিহাস।

 

৩.

কবিতার ছেঁড়া পাতা ছিঁড়ে ফেলে আমি আমাদের ভাই ও বোনদের সাথে

দৌড়াতে দৌড়াতে চলে যাবো অনন্তকালের কুঠুরিতে,

তালা খুলে এনে দেব প্রেমিকার শাড়ি, শিশুকালের ভালো লাগা ওষুধের শিশি,

নাটাইয়ের সুতো এবং টাটকা শালুক।

সবার হাতে পৌঁছে দেব অদেহি বাতাস আর

গন্ধরাজের গন্ধে ভরা অসামরিক ঘর;

ঘরের মধ্যে পড়ে থাকুক আধভাঙা খাঁচা,

মুক্ত পাঁজরের মধ্যে উত্তপ্ত বুক,

বুকের মধ্যে তপ্ত পাঁজর বাড়ুক কমুক,

পৃথিবীর সবখানে ছড়িয়ে পড়ুক তোমার আমার সব সহজ কন্ঠ;

আজকের রাতে হবে পৃথিবীর শেষ মারামারি,

এরপর শান্ত ঢেউয়ে ভরে যাবে সাগর সকল।

 

৪.

স্বার্থের কুটিল প্রশাখা ছড়িয়ে যাক গণপাঠাগারের তাকে,

বৃক্ষের পাতা আর স্মৃতির কল্পলতাহীন বাঁধানো সুতায়।

উদ্যানের নোনা ঘাস আশ্রয়ে রাখে সব মৃত পাখিদের হাড়গোড় ডানা, স্মৃতিছাপাখানা;

বৈচিত্রে ভরা উঠানের লাল পেড়ে শাড়িখানা

আজকের মতো কোনো এক রাত্রিতে

ডাকাতের ঘরে গিয়ে ঘ্রাণ ছড়াবে পরম স্বপ্নে পাওয়া খাটে।

 

৫.

কর্তিত বায়ুমন্ডলের বর্ণালি রাশি

পাচার করে নিয়ে গেছে বিকেলের ঘুড়ি,

তাই পেটমোটা রাস্তার ধারে উকুনঅলা কতিপয় বুড়োধাড়ি

অভিশাপ দিয়ে যায় দাঁতে দাঁত লাগিয়ে টক্কর,

“আজকের তুফানে উঁচু হোক উচ্চতম মিনার শৃঙ্গগুলো,

মায়েদের শেষ আশা সুসময়ে সন্তানধারণ শুভ হোক;”

আর যাঁতির নিচে কাটা পড়া আমার তাজা হাতপায়ের রক্তক্ষরণ থেমে গেলে

আমি দেখব স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে আমার হাত দুটো এক রাতেই পচে গেছে,

মাথার মগজ খুবলে বের হয়ে পড়ে আছে জনারন্যের মাঝখানে।

আমাকে কেউ বাঁচাতে আসবে না।

 

চিত্রের ইতিহাস: কবিতায় ব্যবহৃত অংকিত চিত্রটি জন এভারেট মিলিয়াসের (১৮২৯-১৮৯৬) শেক্সপিয়ারের হ্যামলেট নাটকের নাইয়িকা অবলম্বনে আঁকা চিত্র ওফেলিয়া (OPHELIA)। শিল্পী চিত্রটি আঁকেন ১৮৫২ সালে। এখানে চিত্রটিকে উপরের দিকে কিছুটা ছেঁটে ব্যবহার করা হয়েছে।

Leave a Comment

error: Content is protected !!