তুমি প্রতি মুহুর্তে মাপো তোমার অস্তিত্ব,
দেখো নিজের হাড্ডির দিকে—
এখনো টিকে আছো তো, দুর্বা গজিয়েছে কী না হাড়ে?
হে উপমানব, নিস্ফল হচ্ছে কী তোমার সমস্ত কোলাহল,
মহাবিশ্বের উপকুলে সাবমেরিন নিয়ে যাত্রা তুমি
কোনোদিনই করতে পারবে না,
জানো তো আমি ঈশ্বরের চেয়েও মহাপরাক্রমশালি।
সাহসি তুমি নিঃসন্দেহে, ষাঁড়ের মতো বরাবর
ঘোঁত ঘোঁত করো আর আবোল তাবোল বকো,
তুমি খোঁজো এক মুঠ মুথা ঘাস,
এক ছটাক চিটাগুড় তামাকের জন্যে, কিংবা মায়ের শাড়ি অথবা মৃত্যু;
ওপথে হেঁটো না তুমি,
অজ্ঞতার পুরস্কার নিতে এসো প্রচলিত উন্নয়নের পথে,
প্রতি বিমানবন্দরে তোমার জন্য প্রতীক্ষায় আছে লাল লাল গালিচা-গোলাপ
তামাম জগত তোমার পদতলে দুলবে অপার্থিব দোলনার মতো,
পারলে শব্দের সাথে ইজম যোগ করে কয়েকখানা বই লেখো,
তোমাকেই বানানো হবে ধরণিশ্রেষ্ঠ দার্শনিক, তোমার নিচে থাকবে সব মহাবিশ্ব,
তুমি সব উপরে,
ভাবো আরো কিছুদিন,
বদলাও পথ আর গ্রহণ করো বহুমূল্য স্বর্ণালংকার, সভ্যতার ক্ষমতা;
রঙিন আলোর ঘরে পাবে কামনাবহুল সার্থকতা।
আর বেশি বেশি বেঁকেছো তো সোজা
মাথা হতে ধড় করে দেব আলাদা,
সেদ্ধ করবো চুল্লির ফুটন্ত পানিতে,
মগজ বের করে মুড়িঘন্ট রান্না হবে,
ভুলে গেছো অহিঙসা পরম ধর্ম।
বেশ তো আরামে রেখেছি তোমাকে;
দিয়েছি মা পুত্র পরিবার বালিশ তোষক কাঁথা, মুড়িমাখা সরষের তেল,
দুপায়ে চামের স্যান্ডেল,
প্রতিদিন শোবার আগে এক ঢোক পিল;
যদি চাও দিতে পারি উপপত্নির সারি,
খেলবে তীব্র সাদা আলোয় টেবিল টেনিস।
তবু কেন ফাও ফাও চেঁচাঁমেঁচি ভাঙনের গান,
চুপ মেরে বসে আকোঁ শব্দকুন্ডলি— এ আমার চরম আদেশ?
দশদিকের সব গন্ডারের ডাক মন দিয়ে শোনো,
সব ইন্দ্রিয় সুচতুর রাখো,
ভুলে যেয়ো না সব মতবাদই খুব ভালো,
মধ্যযুগের ভুতও পায় আমার কাছে চকচকে রূপ,
তথ্যই সকল ত্রাতা, জ্ঞান এখন পান্তাজলে ডুবে মরবে।
দেখো গৃহের কুকুর কত প্রভুভক্ত;
গবেষণাগার খোলো প্রভুভক্তির ব্যাপারে, তুমিও হও কুকুরের মতো,
নিজের হাড্ডি বের হবে না, প্রতিদিন খেতে পাবে কাচ্চি বিরিয়ানি,
জিভ দিয়ে ঝরবে না শ্রান্তির লালা।
প্রশ্ন করো না কোনো, দুর্মতিকে চাপা দাও হৃদয়ের বাক্সে,
আমার হাতখানা রাখো তোমাদের হাতের পাশে
দেখো তুমি আমি শক্র মিত্র উড়ে যাচ্ছি একসাথে নীল নীলাকাশে।
প্রচলিত কিছুই সহজে ভাঙবে না;_ ভূঁড়ির চর্বি, চিতার আগুন,
ছায়ামুর্তির বাস্তবতা, অন্ধকারের শক্তি;
পৃথিবী একদিন অন্ধকারে ডুবে যাবে এ আমার স্বপ্ন সাধনা
চিত্রের ইতিহাস: কবিতায় ব্যবহৃত অংকিত চিত্রটি অজানা শিল্পীর আঁকা চিত্র। এখানে চিত্রটিকে নতুনভাবে বামে ডানে কিছুটা বৃদ্ধি করে ব্যবহার করা হয়েছে। চিত্রের উৎস উইকিমিডিয়া কমন্স।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।