একদিন মার্কেটে কিছুক্ষণ

মার্সিডিজ দ্রুত এসে থামে মার্কেটে ঢোকার পথে,

নেমে আসে নরোম নদীর নারী আমদের পৃথিবীতে,

ব্যাগ হাতে ঘোরে আর বাড়ায় পণ্য শোভা, ছড়ায় ঝিলিক;

পেটমোটা বস্তার মতো রুগ্ন শরীরে গড়িয়ে গড়িয়ে চলে দুই ভিখারি,

মাথাহীন একজন, অন্যজনের আছে শুধু মাথা,

কপিকলের জোরে নড়ে চড়ে, এদিক ওদিক ঘোরে,

শোনে মাইকের চিৎকার ও সমকালীন রাজ নীতিকথা।

 

সবুজের দ্যাশ আজ এদুজন আধামানুষের কাছে ছোটখাট ভাগাড়ের লাশ;

তদুপরি তারা দুজন মধুর অম্বেষণে গুনগুন গান ধরেছে,

‘একটা কালো জামা আর দুটো কাকতাড়ুয়া আমাদের দাও’।

 

তারপর মুশকিল হলো প্রতিদিন রাত হলে আপনি দেখতে পাবেন,

নিয়ন আলোয় গলার থকথকে কফে পৃথিবীকে উগরে দেয়

এক মধ্যবয়স্কা যক্ষ্মা রোগিনি,

ক্যান্সার রোগি বেচে রাস্তার ধারে

মগজের ঘোল,— দাম প্রতি কাপ এক টাকা,

আশপাশে দাঁড়িয়ে জনা দশেক খরিদ্দার গিলছে মদিরা যেন।

 

পথের ধারের পার্শ্ববর্তি শিশুটি পা ছোঁড়ে;

অভিমানে অকস্মাৎ মাথা নিচু করে ফোঁপায় দুবার,

মা তার পরম সোহাগে একটা বেলুন দেখিয়ে ডাকে ‘আয়, বাবু আয়’

আর মুখে তুলে দেয় কাঁচা যৌবনের শাঁস।

শিশুটিও চুষে নেয় বাঁচবার দুরাশায় 

রাজ্যের জীবিত সব কড়া অভিশাপ।

 

গ্রীষ্মের মধ্যাহ্নবেলায় ডাস্টবিনে জয়নুলের শিল্পের মহরত চলে,

নাকের শিকনি নিয়ে ব্যাহত বালক এক

কৌতুহলে টেরচা চোখে দেখে মদমত্ত ক্রীড়ারত রঙিন পোস্টার,

আর চুষছে দুইটি ঠোঁট পরম আদরে;

দুটি বালিকা বারবার ঢুঁড়ে বয়সি মাপের খোরাক,

এসেছে তাদের জীবনে আলোকোজ্জ্বল রাত।

 

রিকসার হুড চেপে চলে যায় প্রভু আর ছোট পাখি,

নিয়মিত সার্কাসে কসরত আর নতুন মহরত চলে অবিরত;

ঘটনার ফাঁকে কবি একা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ছেঁকে নেয়

কাগজে কবিতার রঙ এবং

হদয়ের মাঝখানে পুষে রাখে হদয়ের ধড়;

আর দূরে হৃদয়ের কাপে চুমু খায় দুজন দুরকম ।

 

২১.০৬.২০০১.    

আরো পড়ুন:  মেজাজ

চিত্রের ইতিহাস: কবিতায় ব্যবহৃত অংকিত চিত্রটি এদোয়ার্ড আর্ডিজোনের (১৯০০-১৯৭৯) আঁকা চিত্র শিশুদের বিস্কুট ভিক্ষা করা (Children Begging for Biscuits in Canosa di Apuglia, Italy)। শিল্পী চিত্রটি আঁকেন ১৯৪৩ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। এখানে চিত্রটিকে উপরে নিচে কিছুটা ছেঁটে বাদ দেয়া হয়েছে।

Leave a Comment

error: Content is protected !!