এবড়ো থেবড়ো ঘরে কুচিকুচি হয় ঘটনাসমূহ,
দুমড়ে মুচড়ে যায় এলুমিনিয়ামের হাঁড়ি,
ভেঙে যায় সাধের কলস, হারিয়ে যায় সাধের ছানা,
পারিপার্শ্বিক বিষন্নতায় দলছুট নয় যদিও সেসব ঘটনা—
এক জীবনের অংশ তারা,
তবু থেকে যায় ক্ষত চিহ্নিত শরীর,
সাঁঝরাতে মাঝরাতে শেষরাতে বিছানাতে
টেনে নিয়ে যায় বয়সের পাখি,
দুপুরে ঘোরা পথে প্রেমময় রিকসা দেখে তোমাকে
নীল শাড়িপরা সবুজ বারান্দায়—
সে কি তবে অভিনয়?
সৌন্দর্য খুঁজেছে যারা পারস্পরিক চাওয়া ও পাওয়ায়,
কিংবা স্বার্থকতা দুবাহু দুঠোঁটের মাঝখানে,
তারাই কী পৃথিবীর ত্রাণকর্তা নয়?
ভীতু যারা এপথ মাড়ায়নি কিংবা যারা
নিজেকে জড়িয়েছিলো দিন বদলের বা মাতৃমুক্তির ঝড়ো হাওয়ায়,
তারা কেঁদেছিল হঠাত একাকি অন্যমনস্কতায়,
মনে পড়েছিল সেই দুপুর,
বারান্দা, নীল শাড়িপরা সবুজ রোদ্দুর;
খটমটে অটল কেরানিটিও
নিত্য কাজের ফাঁকে উঠেছিল হেসে সবুজ রোদ্দুর দেখে,
চঞ্চল আঙুলগুলো কেঁপেছিল
অস্বাভাবিক, ভেবেছিল:
“আজ হাওয়া উড়িয়ে নিয়ে যাক বৃহৎ বটগাছটিকে পৃথিবীর ছাদে— গ্রামটা হয়ে যাক ওলটপালট, মাছগুলো সাঁতার কাটুক ডাঙায়, মানুষেরা বেঁচে থাকুক জল মধ্যে;— কার কী আসে যায়! খইয়ের মতো পুড়ুক মাঠ-ঘাট-চৌকাঠ-কবিতাসমগ্র, গানগুলো ধ্বংস হোক মারিয়ানা খাতে, ম্যাক্সিম গোর্কির দাদিবাড়িতে উঠুক ১১০ তলা অট্টালিকা, তুমি আমি ঠিক, বাকি সব চলুক বেঠিক; শিল্পের পেটে ঢুকে যাক তাজা আলপিন, খচখচে যন্ত্রণায় বেড়ে উঠুক পরিত্যক্ত মুর্মূষু অংকুর।”
চলে যাবো হাঁটাপথে
কী প্রয়োজন,
বাহু পাশে নেবো না কাউকে।
আলোকচিত্রের ইতিহাস: কবিতায় ব্যবহৃত আলোকচিত্রটি কোপেনহেগেন প্রাইড প্যারেড থেকে তুলেছেন Leif Jørgensen. এখানে চিত্রটিকে চারদিকে সামান্য ছেঁটে ব্যবহার করা হয়েছে।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।