পরাজিত জীবনের চিহ্ন-বলিরেখা

একশত পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় দেহের ভেতরে ফোটে

লাল নীল পাথরের পানি,

কংকালের কিছু হয় না তা আমি ভালো করে জানি,

শুধু বুদবুদে রক্তে-বাষ্পে ছেয়ে যায় এদেশের মেঘ,

হারিয়ে যায় তোমাদের কাব্যে অতি পুরাতন ভাবাবেগ;

জড়পিণ্ড সবাই আমরা পরের ঘাড়ে চড়ে দেখতে থাকি

পথের ধারের গাছগুলোর হলদে পাতার কোমল নড়াচড়া;

গলে গলে সত্ত্বাবিহীন ক্ষয়ে যায় কড়া রোদে পোড়া

সব কবিতার পান্ডুলিপি;

শিশুরা এক রঙা রঙতুলিতে আঁকে মাকড়শার পরিত্যক্ত ঝুল,

নাম গোত্র পরিচয় ব্যক্তিত্বহীন তুমি এই ব্যক্তিস্বাধীনতার যুগে

পথের বেভুল এক চোরাকারবারি পথিক;

তোমার নেই কোমরের বেল্ট ঠিক,

শুধু বুকপকেটের ফোঁড়াটা অনবরত পিটপিটে যন্ত্রণা দিয়ে

পুঁজ হয়ে গলে পড়ে গাঁয়ের পুকুরে।

এদেশে শক্ত সামর্থ বীরও হয়ে যায় পুঁচকে পেঁচার

আজ্ঞাবহ ক্রীতদাস আর তুমি তো কোন ছার;

পাড়াগাঁর লোকদের হয় হাঁস ফাঁস শহরের জীবন ধারণে,

দু ঢোক লবণাক্ত জল ও প্রতি রাতের বড়ি আর এ্যাসপিরিনে

রণে ভঙ্গ দেয় বহুল জনতা;

বেহুদা চাঁদের চোরা কলংকের উপর

পা পিছলিয়ে রেখে যায় চিহ্ন-বলিরেখা,

স্মৃতির সৈকতে থাকে পরকালের মুদ্রণের ছাপ

আর ঘরের শিঁকেয় ঝুলিয়ে রাখে ক্রমগামি বংশধরেরা

পূর্বপুরুষের বিষন্নতার ব্যর্থ ছায়ামূর্তি।

 

চিত্রের ইতিহাস: কবিতায় ব্যবহৃত অংকিত চিত্রটি পল গঁগাঁর (১৮৪৮-১৯০৩) আঁকা চিত্র ‘প্যারিসের দৃশ্য(The Seine in Paris)। শিল্পী চিত্রটি আঁকেন ১৮৭৫ সালে। এখানে চিত্রটিকে উপরে কিছুটা ছেঁটে ব্যবহার করা হয়েছে।

Leave a Comment

error: Content is protected !!