মনে রাখো তোমাদের দশদিক এখন বড়ই কুটিল,
মনে রাখো তোমার নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস থামতে বসেছে,
ধীর ও জটিল তোমার রক্তমাখা সরীসৃপের মতো গতি,
তোমার বংশের সাথে গাছপালা পাঠ চুকায় ক্রান্তিকালের মোড়ে,
তবুও কোথায় কোনো এক সুতোর টান অনুভূত হতে পারে
প্রাণ আছে বলে আবিষ্কৃত জগদীশের আবিষ্কারে।
গাছ হতে শিশু জন্ম নেয়, তুমি শিশুর কান্না থামাও,
রুমঝুমির ঝুনঝুন শব্দে আর পল্লবের প্রশাখায় ফোটাও ফুল;
যদিও তুমি অর্ধমৃত।
মায়ের মুখ থেকে শিশুরাই মুখ সরায়,
সেখানে কিছু সময় জোঁকের মুখ ছিলো
জোঁকেরা চুষেছিলো মায়ের সম্পদ সম্বল
কেউ বোঝেনি তুমি ছাড়া কিন্তু তুমি করোনি কিছুই।
শুধু শরতের জলফড়িং বুঝেছিলো সেদিনের নতুন আয়োজন
পুরোনো লাঠালাঠির নতুন ইতিহাস,
চুলাচুলি করে উড়িয়ে দেয়া স্বজাতির মাথার খুলি,
পতাকায় চুমু খেয়ে স্বরাষ্ট্রের সুবিধার মোড়কে
পৃথিবীর জননীতির স্বপক্ষের সাফাই গাওয়া আগ্রাসি গান;
‘বাঁচো আর মারো—কুচ পরোয়া নেহি’
পরিত্রাতা নয়া মতের নয়া জোয়ার্দার।
মাঝখানে বিদ্রোহের কল্কি হাতে শুধু শুধু গণ্ডগোল পাকাবার
করছে চেষ্টা হাজারবার মরার পরেও কিছু তরুণ;
এবং আমি মানসচক্ষে দেখি
চে গ্যেভারা ও চারু মজুমদার দু’টুকরা রুটি খায়
পাকা আম দিয়ে,
কিছু তরুণ তাদের পাশে অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে,
কল্পনায় তাঁরা দেখে ছুরি-চাকু-কাঁটাতারের বেড়াহীন
মুক্তনগর, যৌথসংগীত, দোতরার সুর আর
রাত জেগে দেয়াল লিখনে লেখা তোমার ঠোঁটের
টলটলে ভালোবাসা।
তবু ভালোবাসা তার রঙ বদলায়,
হুঁশিয়ারি হাঁক হেকে গ্রামের মোড়ল চলে যায়
তার সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে লেফট-রাইট করতে করতে।
কী এমন হয় যদি বদলে যায়
আগ পিছু উঁচু নিচু পুরোনো সব,
দিনে উঠে চাঁদা, রাতে তোমার সূর্য দাদা,
দিকভ্রম না থাকে, সব পথ মিশে যায়
অভাবহীন আর্কেডিয়ার দিকে,
যদি আরো দ্রুত ক্ষয় হয় ক্ষয়িষ্ণু সভ্যতা,
যদি শামুক ও কচ্ছপ আর না ঢোকে খোলসে,
লজ্জাবতি সূর্যমুখি লজ্জা পেয়ে সূর্যপানে ফিরে না তাকায়,
মুরগি ছানা ঢুকে যায় ডিমে, শিশু পুনরায় মাতৃগর্ভে,
কী এমন হয় যদি নারীরা বন্ধ্যা হয়,
যদি বংশবাতি নাই জ্বলে
দাদা দাদি নানা নানীর সংগমে।
তুমি জানতে মায়ের সম্পদ সম্বল চুষেছে ভিনদেশি জোঁকেরা
তোমার সুবিধাভোগী আত্মীয়রা খিলখিল হেসেছে
কেননা তারা মজা পেয়েছে
তুমি তাদের বোঝাতে পারোনি কেননা তারা সাম্প্রতিক নির্বোধ!!
কী এমন হ্য় যদি না থাকে ছাইমাখা সমাজ ও সভ্যতা
শান্তিনিকেতনের নয়নতারার কণ্ঠের অক্ষম সংলাপ
চিত্রের ইতিহাস: কবিতায় ব্যবহৃত অংকিত চিত্রটি অজানা শিল্পীর আঁকা চিত্র ‘কমরিড স্ট্যালিন, ভোরোসিলোভ এবং শ্যাচাদেনকো তারতিসিনের কাছে পরিখায়।’ শিল্পী চিত্রটি আঁকেন ডিসেম্বর ১৯৩৩ থেকে ফেব্রুয়ারি ১৯৩৪ সালের মাঝের সময়ে। ছবিটি উপরে ও নিচে সামান্য ছেঁটে ব্যবহার করা হয়েছে।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।