ভৈরব নদ বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের একটি আন্তঃসীমান্ত নদ

ভৈরব নদ বা ভৈরব নদী (ইংরেজি: Bhairab River) বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের একটি আন্তঃসীমান্ত নদ। নদটি ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলা এবং বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা জেলার একটি নদী। নদটির দৈর্ঘ্য ৯৫ কিলোমিটার, গড় প্রশস্ততা ৪৫ মিটার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা “পাউবো” কর্তৃক ভৈরব-কপোতাক্ষ নদের প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদী নং ৭০।[১]

প্রবাহ: ভৈরব নদটি মুর্শিদাবাদ জেলার চরকুশবাড়িয়ার কেছে জলাঙ্গী নদী থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। অতঃপর নদটি মেহেরপুর জেলার মেহেরপুর সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়ন দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। পরবর্তী পর্যায়ে এ নদ যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলায় কপোতাক্ষ নদে নিপতিত হয়েছে।

নদীটি মৌসুমি প্রকৃতির। বর্ষাকালে নদটিতে স্বাভাবিকের চেয়ে পানির প্রবাহ অধিক মাত্রায় বৃদ্ধি পায়। এ সময় নদীর তীরবর্তী অঞ্চল বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়। নদীটি জোয়ার ভাটার প্রভাবে প্রভাবিত।

অন্যান্য তথ্য: ভৈরব নদটির প্রবাহের প্রকৃতি মৌসুমি এবং নদটি বন্যাপ্রবণ। নদটির অববাহিকার বাংলাদেশ অংশে কোনো প্রকল্প, কোনো ব্যারাজ বা রেগুলেটর এবং কোনো বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধও নেই। তবে ভারতীয় অংশে সেচ প্রকল্প রয়েছে। নদটির তীরে বাংলাদেশের মেহেরপুর পৌরসভা, দরিয়াপুর হাট, মহাজনপুর হাট, গরাবাড়িয়া হাট ও কাপাসডাঙ্গা হাট অবস্থিত।

ভৈরব নদে পশ্চিমবঙ্গে বাঁধ

ভারত নদীয়া জেলার করিমপুর থানার গঙ্গারাজপুরের ৮ কিলােমিটার ভাটিতে সীমান্তের প্রায় কাছাকাছি ভৈরব নদীর উৎসমুখে একটি ক্রস বাঁধ নির্মাণ করেছে। বাঁধের উজানে জলঙ্গী নদীর ওপর একটি রেগুলেটরও নির্মিত হয়েছে। 

এই বাঁধ ও রেগুলেটর দিয়ে ভারত জলঙ্গী নদীর পানি একতরফা ব্যবহার করছে। ফলে ভাটিতে বাংলাদেশে ভৈরব নদীর পানিপ্রবাহ মারাত্মকভাবে কমে গেছে। মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা জেলায় সেচের পানির সংকট দেখা দিয়েছে । ঝিনাইদহ ও যশাের জেলার নদীগুলাে ভরাট হয়ে মরে যাচ্ছে। এসব জেলার নদীর পানির উৎস হলাে ভৈরব নদ। 

এর পূর্বে ভারত চব্বিশ পরগনা জেলার সীমান্তবর্তী কোদলা নদীতেও একটি বাঁধ নির্মাণ করে। পরিণতিতে কোদলা নদীর বাংলাদেশ অংশে পানিপ্রবাহ কমে যায়। ভারত মধুমতি নদীর কাকলেমরিতেও একটি বাঁধ নির্মাণ করেছে ।

আরো পড়ুন:  আত্রাই নদী বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী

আলোকচিত্রের ইতিহাস: ভৈরব নদের এই ছবিটি মেহেরপুর থেকে গত ১৫ অক্টোবর ২০২০ তুলেছেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মাহবুবুল হক মন্টু।

তথ্যসূত্র:  

১. মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক, বাংলাদেশের নদনদী: বর্তমান গতিপ্রকৃতি, কথাপ্রকাশ, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, পৃষ্ঠা ৬২, ISBN 984-70120-0436-4.
২. আবদুস সাত্তার, “কতিপয় মিনি ফারাক্কা” বেনজীন খান সম্পাদিত, ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ: বাংলাদেশের বিপর্যয়, কথাপ্রকাশ ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২০০৯, পৃষ্ঠা ২১৭-২১৮।

Leave a Comment

error: Content is protected !!